Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্রাটের পতন

যুবলীগ কার্যালয় থেকে অস্ত্র, ইয়াবা, টর্চার মেশিন, মদ ও ক্যাঙ্গারুর চামড়া উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সব জল্পনা-কল্পনা ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে অবশেষে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের আলোচিত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে। গতকাল রোববার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে তার সহযোগী যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানসহ তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় আরমান মাদকাসক্ত অবস্থায় থাকায় র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট ৬ মাসের কারাদন্ড দিলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সম্রাটকে নিয়ে ঢাকায় কাকরাইলের যুবলীগ দক্ষিণের অফিস ও আরো তিন জায়গায় অভিযান চালায় র‌্যাব।

এ সময় বেশ কিছু মাদক, বন্যপ্রাণীর চামড়া ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সম্রাটের অফিসে বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার অভিযোগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট ৬ মাসের কারাদন্ড দিলে রাতেই তাকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান শুরুর ১৯ দিনের মাথায় রোববার সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরপরই তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে র‌্যাবের ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি পুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের আশপাশে অবস্থান নেয়। র‌্যাব বিভিন্ন সড়কের মধ্যে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের চার দিনের মাথায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীতে ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপরই ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম। এ দু’জনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গতকাল রাতে বলেন, ক্যাসিনো সম্রাট খ্যাত যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার অভিযোগে ৬ মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে আটকের ফুটেজ গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে অবৈধ মাদক, অস্ত্র ও বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হবে।

তিনি বলেন, ক্যাসিনো সম্রাটের গডফাদার কারা সেটিও তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। সম্রাটের কাকরাইল কার্যালয়ে অভিযান শেষে সন্ধ্যার দিকে র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আমরা সম্রাটকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাইব। সম্রাট যে ক্যাসিনোর সম্রাট হয়ে উঠেছেন, তার পেছনের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষক কারা, তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। আরমান ও সম্রাটকে যখন কুমিল্লা থেকে আটক করা হয় তখনও মাদক উদ্ধার করা হয়। আরমান মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিল। এ জন্য র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ছয় মাসের জেল দেন। ঢাকায় আনার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হচ্ছে। মাদক, অস্ত্র ও বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার অভিযোগে রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হবে। সম্রাটের কার্যালয় থেকে ইলেকট্রিক শকিং মেশিন উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে কাউকে নির্যাতন করা হতো কি না, এটা আমরা পরে তদন্ত করে দেখব।

যেভাবে গ্রেফতার করা হয় সম্রাটকে
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের পুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামে মুনির চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে যুবলীগ নেতা সম্রাট লুকিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে রোববার ভোরে সম্রাট ও আরমানকে আটক করে র‌্যাব।
র‌্যাব-১১ কুমিল্লা কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার প্রণব কুমার বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে র‌্যাবের ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি পুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের আশপাশে অবস্থান নেয়। র‌্যাব বিভিন্ন সড়কের মধ্যে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল বলেন, মুনির চৌধুরী স্থানীয় জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ফেনীর মেয়র মো. আলাউদ্দিনের ভগ্নিপতি। আলাউদ্দিন জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু সম্রাট বাহিনীর সদস্য। তার মাধ্যমেই সম্রাট মুনির চৌধুরীর বাড়িতে অবস্থান নেন। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে তার ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে আটক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতা সম্রাট কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে একাধিকবার ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকায় তার চেষ্টা সফল হয়নি। অবশেষে প্রায় তিন সপ্তাহ আত্মগোপনে থাকার পর রোববার সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশ ছেড়ে পালানোর উদ্দেশ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা ছাড়েন সম্রাট। এর পর ওই বাসায় ওঠেন তিনি। সেখানে তিনি একাধিকবার সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়া এবং সেখান থেকে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা এসব তথ্য ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। তবে ক্যাসিনো কান্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য এতদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে সম্রাটের ওপর নজরদারি ছিল।

আত্মগোপনে সম্রাট যেমন ছিলেন
র‌্যাব সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে মতিঝিলের ক্লাবগুলোতে র‌্যাবের ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান শুরু হলে সম্রাট চিন্তায় পড়ে যান। যোগাযোগ শুরু করেন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে। অভিযানের প্রথম দু’দিন সম্রাট ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাকরাইলে নিজের কার্যালয়ে অবস্থান করেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে কাকরাইল থেকে বেরিয়ে প্রথমে ধানমন্ডি যুবলীগ চেয়ারম্যানের বাসায় আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেন। কাকরাইল থেকে সম্রাট বের হয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যানের বাসায় গেছে এমন তথ্য নিশ্চিত হয়ে রাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে নজরদারির প্রস্তুতি নেয়। প্রশাসনিক সোর্স সম্রাটকে সেই তথ্য জানালে সেখান থেকে বের হয়ে যান তিনি। এরপর বনানীতে গিয়ে প্রথমে একজন বড় নেতার বাসায় আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কিন্তু সেখানে আশ্রয় না পেয়ে ওঠেন আরেক নেতার বাসায়। এরপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারেননি সম্রাট। গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই তিনি বনানীর সেই বাসাতেই থাকেন।

সূত্র জানায়, সেখানে থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি সম্রাট। তার নিয়মিত ওষুধ কিনতে সঙ্গে থাকা কেউ যাবার অনুমতিও পায়নি। শেষ তিন দিন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে দই-চিঁড়া খেতে চান তিনি। তারপরও বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি গোয়েন্দারা। বনানীর ওই বাসা থেকে বের হয়ে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমান কিভাবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকড়া ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামে গেলেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সম্রাট কিভাবে কুমিল্লা গেলেন জানতে চাইলে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আটক এড়াতে সম্রাট যে পন্থাগুলো অবলম্বন করেছে তা বলতে চাই না। কুমিল্লা কেন এবং কিভাবে গেল সেটাও বলতে চাই না। সবকিছু গণমাধ্যমে আসলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা হয়। আমরা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কাউকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে অপরাধীরা তখন কৌশলগুলো অবলম্বন করবে। এজন্য কৌশল না বলাই ভালো। ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযান শুরুর পরপরই সম্রাট আত্মগোপনে চলে যান। এমনকি শেষ পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে যাওয়ারও সব বন্দোবস্ত করে ফেলে। তবে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকায় সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।

সম্রাট ও আরমানের ৬ মাসের জেল
নিজ কার্যালয়ে পশুর চামড়া রাখার দায়ে সম্রাটকে ছয় মাসের জেল দিয়েছেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। অন্যদিকে, কুমিল্লা থেকে আটকের সময় ‘মদ্যপ’ থাকায় আরমানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার বেলা ১টা ৪০ মিনিটে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল কাকরাইলে ভূইয়া ট্র্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে সম্রাটের কার্যালয়ে ঢুকে অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত অভিযান চলে।

শান্তিনগর ও মহাখালীর বাসায় অভিযান
মহাখালীতে সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রীর একটি বাসা এবং শান্তিনগরে সম্রাটের দু’টি বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। রোববার বেলা আড়াইটায় সম্রাটের শান্তিনগরের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব-৩ এর একটি দল। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, দুপুরে সম্রাটের নিয়ন্ত্রণাধীন শান্তিনগরের বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সম্রাটকে গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে কাকরাইলে অভিযান চলছে। পাশাপাশি র‌্যাব-২ এর আরেকটি দল মহাখালীতে তার স্ত্রীর বাসায় অভিযান চালায়।

র‌্যাব জানায়, রাজধানীর মহাখালী এলাকার ডিওএইচএসে সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে মহাখালী ডিওএইচএসের ২৯ নম্বর সড়কে ও ৩৯২ নম্বর বাড়িতে এ অভিযান চালানো হয়। এছাড়া বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর ১৩৮ এবং ১৩৮/১, ১৩৯ শান্তিনগরের রহমান ভিলায় সম্রাটের ফ্ল্যাট ৫ সি-তে প্রবেশ করেন র‌্যাব-৩ এর একটি দল। ভবনটির সিকিউরিটি গার্ডের ভাষ্যমতে, এখানের একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন সম্রাট। তবে প্রায় বছরখানেক ধরে তিনি নিয়মিত এখানে থাকতেন না। এরপর সম্রাটের এক ভাই সেখানে থাকতেন।

এনামুল হক আরমানের বাসায় অভিযান
রাজধানীর মিরপুরে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের বাসায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। রোববার বেলা ২টার দিকে মিরপুর-২ এর মসজিদ মার্কেটের ১৬ নম্বর বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। টানা ৫ ঘণ্টা তল্লাশি শেষে বাসা থেকে সম্পত্তির কিছু দলিল ও কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই উদ্ধার করা হয়েছে। বেলা ১টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। অভিযানের পর র‌্যাবের ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, সম্রাটের বন্ধু যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের বাড়ি তল্লাশির কাজ শেষ হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দলিল ও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০টি দলিল আরমানের দ্বিতীয় স্ত্রী বীথি বেগমের নামে এবং দু’টি দলিল আরমানের নামে।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মিরপুরের সি-ব্লকের এই বাড়িতে আরমানের দ্বিতীয় স্ত্রী ও চার সন্তান মিলে থাকতেন। এ বাড়িতে তারা ভাড়া থাকতেন। আরমান মাঝে মাঝে এখানে যাতায়াত করতেন। তার প্রথম স্ত্রীও এই বাড়িতে মাঝে মাঝে আসতেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি আগে থেকেই তারা জানতে পারে। ভোরে আরমানের স্ত্রী ও তার সন্তানরা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। হয়তো সে সময় নগদ টাকা ও অন্য কিছু সঙ্গে নিয়ে গেছে। যার ফলে এখান থেকে তেমন কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তল্লাশি শেষে দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটের তিনটি রুম সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরমানের স্ত্রীকেও খোঁজা হচ্ছে। তাকে পেলে সকল বিষয়ে জানা যাবে। অভিযানের শুরু থেকে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুল হক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সকাল ১১টার দিকে আরমানের স্ত্রী বাসায় তালা লাগিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছেন। এক প্রতিবেশী বলেন, প্রায় চার বছর ধরে যুবলীগের এই নেতা বাড়িটির দোতলায় বসবাস করছেন।

কাকরাইল যুবলীগের কার্যালয়ে অভিযান
গতকাল দুপুরে সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয় ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযান শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযান চলে। অভিযান শেষে কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা, বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ক্যাঙ্গারুর চামড়া উদ্ধার করেছে র‌্যাব। একই সময় সম্রাটের ভাইয়ের শান্তিনগরের বাসা ও সম্রাটের মহাখালীর আরেকটি বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এর বাইরে আরমানের মিরপুরের বাসায়ও অভিযান চালানো হয়। সম্রাটের কার্যালয় থেকে ১ হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, একটি বিদেশি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলি, বৈদ্যুতিক টর্চার মেশিন ও দু’টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া জব্দ করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, আরমান ও সম্রাটকে যখন কুমিল্লা থেকে আটক করা হয় তখনও মাদক উদ্ধার করা হয়। আরমান মাদকাসক্ত অবস্থায় ছিল।

সম্রাটের কার্যালয়ে উৎসুক জনতার ভিড়
সম্রাটকে নিয়ে তালা ভেঙে তার কার্যালয়ে অভিযান শুরুর খবর পেয়েই কার্যালয়ের আশপাশের এলাকাজুড়ে ভিড় করতে শুরু করেন হাজারো উৎসুক জনতা। জনতার ভিড় বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে থেকে কাকরাইল মোড় ও শান্তিনগর থেকে কাকরাইলে প্রবেশের সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া অভিযান শুরুর পর কয়েক ঘণ্টার জন্য এসব সড়কে সর্বসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

দেখা যায়, বেলা দেড়টার দিকে একটি হেলমেট পরিহিত সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে তালা ভেঙে কাকরাইলের ভূইয়া টাওয়ারে ঢোকেন র‌্যাব সদস্যরা। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা ওই ভবনের সামনে অবস্থান নেন, ভবনের প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেট আটকে দেয়া হয়। সম্রাটের অফিসে এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও কাকরাইলের রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেলের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। ভূঁইয়া ম্যানশনের নিচতলার সব দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। চারপাশে ভিড় করে উৎসুক জনতা। ওই ভবনের সামনে দুই পিলারের একটিতে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, অন্যটিতে সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের ছবি রয়েছে। হারুনের ছবির নিচেই রয়েছে ইসমাইল হোসেন সম্রাটের হাস্যোজ্জ্বল ছবি।

স্থানীয়রা জানান, এই ভবনেই সম্রাট দিনের বড় একটি সময় কাটাতেন। ক্যাসিনো-বিরোধী অভিয়ান শুরুর পরও দিন কয়েক তিনি ভূঁইয়া ম্যানশনের অফিসে ছিলেন। শতাধিক যুবক তখন ওই ভবন পাহারা দিয়ে রেখেছিল। এদিকে, অভিযান শুরুর আগে দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, যুবলীগ কার্যালয়ের প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে ভেতরে দু’জন সিকিউরিটি গার্ড ও দু’জন পুরুষ বসে আছেন। অফিস খোলা না বন্ধ জানতে চাইলে তারা খোলা বলে জানান। এ সময় ভেতরে যেতে চাইলে তারা বলেন- ভেতরে কোনো লোকজন নেই। এর কিছুক্ষণ পরই র‌্যাব সদস্যরা কার্যালয়টি ঘিরে অবস্থান নেয়।



 

Show all comments
  • Nahid Mohammad ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    যাইহোক উনি আওয়ামীলীগের নিবেদিত কর্মী ছিলেন এটা যেমন সত্যি তেমনি তিনি আইনের উর্ধ্বে নয় এটাও সত্যি। কিন্তু একটা খটকা লাগতেছে তিনি গ্রেফতার হবেন জানা সত্যেও তিনি অফিস থেকে এসব সরাননি কেনো!এতদিনেতো অবশ্যই পারতেন, হয়তো ওনি একটু বোকা বা সহজ সরল ছিলেন!
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Irfan Hossain ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    সেফ এক্সিট দিতে ভ্রাম্যমান আদালত আনা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sharif Farmar ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    সম্রাটের পতন হয় নাই, পতন হয়েছে বাংলা দেশের জনগনের, কারন ফেনি নদির পানি, তরল গ্যাস, সাগর পাড়ে রাডার বসানো,এবার বুঝেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Elias Elo ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    এক সম্রাটের পতন হলে কি হবে, হাজারো সম্রাট সরকারের উপর মহলের ভিতর আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kader ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    এক সম্রাট' লোকান্তরে হাজারো সম্রাট এখনো ও মাঠে ময়দানে রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
    Total Reply(0) Reply
  • Sk Farid Fatik ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    ঠিক আছে কিনতু অতিতে।বিচার না হওয়ার নজির আছে এটাও তাই হবে
    Total Reply(0) Reply
  • RS Nadim ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    পতনটা কি আসলেই সম্রাটের নাকি অন্য কারো,,,?
    Total Reply(0) Reply
  • ash ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:০৫ এএম says : 0
    JUST A ........ ER DRAMA !! THATS ALLLL
    Total Reply(0) Reply
  • taijul Islam ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:১২ এএম says : 0
    সম্রাটের পতন হয় নাই, পতন হয়েছে বাংলা দেশের জনগনের, কারন ফেনি নদির পানি, তরল গ্যাস, সাগর পাড়ে রাডার বসানো,এবার বুঝেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Amirul Islam ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৩০ পিএম says : 0
    Eye wash and making people fool and Indian prescription
    Total Reply(0) Reply
  • নূরুল্লাহ ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৫৩ পিএম says : 0
    গণতান্ত্রিক রাজাদের অধীনে এমন সম্রাট কতজন যুগ যুগ ধরে বর্ধিত স্পর্ধিত হয়ে চলেছেন? সেই নূর হোসেন থেকে আজকের সম্রাট? দুএকজনের আস্তানা ভাঙ্গা হলে আমরা বুঝতে পারি কী পরাক্রম দিয়ে লালনপালন করা হয়েছে এই বরপুত্রদের। তারাইতো এতদিন আমাদের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধের এতদিন সংরক্ষণ করে এসেছেন। এসব কথা কি আমরা সাধারণরা বলতে পারতাম? আমাদের মুখ ছিল না সাধ্য? এক সরকারের অধীনে এমন পরাক্রমশালী সম্রাটের সংখ্যা আর কত আছে জানতে মনে চায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এখন তাদের ধরতে পারে, উৎখাত করতে পারে এতদিন পারলো না কেনো জবাব চাই। তখন মজলুম মানুষের আহাজারি কেউ শুনতে পাননি কেনো??? সোনার বাংলাদেশ মাটির বাংলাদেশ চোর গুণ্ডাদের দৌরাত্ম্য আর কত দেখবে? স্বাধীনতার আক্ষরিক সত্য আমরা কখন দেখবো এবং জানতে পারবো? বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব যারা দাবি করেন, স্বজাতি থেকে প্রাণরস গ্রহণ করেন কিনা, তাদের চিন্তাধারার যথার্থ প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে কিনা তাও কখনও ভেবে দেখেছেন??
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ