Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার

বিলীন হচ্ছে ঠিকানা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ফারাক্কা ব্যারেজে দিয়ে ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে গত কয়েকদিন ধরে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে দেখা দিয়েছিলো বন্যা। তবে বর্তমানে পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীর পানি কমতে শুর” করলে বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক ভাঙন ও ধ্বস দেখা দিয়েছে এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তীরবর্তী মানুষেরা। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কারো স্বপ্নের ঠিকানা, আর অনেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন আতঙ্কে। আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন ভাঙনের ভয়াবহতার তথ্য :
পাবনা : গত ২৪ ঘন্টায় পানি বিপদ সীমার সামান্য নিচে নেমে এসে ৩ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে. এম. জহর”ল হক বলেন, বর্তমানে পানি বিপদ সীমার উপরে রয়েছে। যদি উজানে বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে পানি বিপদ সীমার নিচে নেমে আসবে। অপরদিকে পানি নামার সাথে সাথে নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে জেলার ১০টি ইউনিয়ন।

পাবনা সুজানগর এলাকাসহ জেলা নদীকূলের ১০টি ইউনিয়ন এখন তীব্র ভাঙনের সম্মুখীন । আর এই নদী ভাঙন প্রতিরোধে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ বালির বস্তা ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাবনা সদরের ভাড়ারা, হেমায়েপুর, দোগাছি ইউনিয়ন ও পাবনা সুজানগর উপজেলার ভায়না, সাতবাড়িয়া, নাজিরগঞ্জ, মানিকহাট, সাগরকান্দি ইউনিয়ন পদ্মার ভাঙন মুখে পতিত হয়েছে। এই ভাঙ্গনের জন্য নদীর পানি বৃদ্ধি এবং অপিরকল্পিত ভাবে বালি উত্তলনের জন্য নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ।

কৃষকের ক্ষতির বিষয় নিয়ে কথা হয় পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলীর সাথে তিনি বলেন, এই পানি বৃদ্ধির কারণে পাবনা অঞ্চলের কৃষির ব্যপক ক্ষতি হয়েছে যার আর্থিক পরিমান আনুমানিক প্রায় ৭ কোটি ।
লালপুর (নাটোর): লালপুরে পদ্মা নদীর বামতীরের তিনটি স্থানে ধ্বস দেখা দিয়েছে এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তীরবর্তী মানুষেরা। গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আকছেদ মোড়ে ৮০ মিটার এবং নুরল্লাপুরে নতুন বাঁধ এলাকায় ১৫০ মিটার এলাকা জুড়ে তীর রক্ষা বøক ধ্বসে গেছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে নুরল্লাপুরে। এই স্থানে ৭৩মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুর হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে তীরবর্তী মানুষের।
স্থানীয়রা বলছে, পদ্মা নদীর আকসেদ এর মোড়ে গত তিন বছর আগে বøক ধ্বসে গেলেও আজ পর্যন্ত মেরামত করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এবারের বন্যায় নতুন করে আবারো বেশ কিছু অংশ নদীতে ধ্বসে গেছে। এতে বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা।

আকছেদ মোড় এলাকার বাসিন্দারা জানান, আকসেদ মোড়ে সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গছে বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। তীর সংরক্ষণের বøক ধ্বসে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দীর্ঘ দিন ধরে ৭৩মিটার মাটির বাঁধ ভাঙ্গা শুর” হলেও এবার ভাঙ্গনের বেশি ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে। বাঁধের ছোট বড় গাছ বিলিন হয়েগেছে নদী গর্ভে। এছাড়া দুইদিনে আকছেদ মোড়ে বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার ধ্বসে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত পাঁচ বছর ধরে পদ্মা নদীর ঢেউ থেকে বাঁচানোর জন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বারবার স্থানীয় এমপি, উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে কোন কাজ হয়নি। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি যে কোন সময় বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যেতে পারে।’

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী আল আসাদ জানান, ‘সম্প্রতি পদ্মা নদীর তিনটি ভাঙন এলাকায় পরিদর্শন করেছি, আকসেদের মোড়ে বøক ধ্বসে যাওয়া ঠেকাতে ২৫০বস্তা জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
মাগুরা : মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত চার দিনে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে মহম্মদপুর উপজেলা থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, আড়মাঝি, রায়পুর, র”ইজানি ও ভোলানাথপুর গ্রাম। জিও ব্যাগ ফেলে ও রক্ষা করা যাচ্ছেনা নদী ভাঙন। গত মঙ্গলবার থেকে নদীতে পানি বৃদ্ধিও ফলে বিলীন হয়ে গেছে ৩৫ পরিবারের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে অসংখ্য দোকানপাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
এ পর্যন্ত উপজেলার ৬টি গ্রামের-৮ কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করায় নদী তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। উপজেলার মহেষপুর, কাশিপুর, ভোলানাথপুর, আড়মাঝি, হরেকৃষ্ণপুর ও রইজানি গ্রামের মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি এ বছর বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন সুজন জানান, নদীভাঙন রোধে তারা কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ করেছেন।
শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) : আবারও ভয়ালরূপ ধারণ করেছে গড়াই নদীর ভাঙন। পানি বাড়ার সাথে সাথে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর ছাড়াও প্রতিদিন নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বিঘা বিঘা ফসলী জমি। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্রতিহিংসা আর রাজনৈতিক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বদলে যাচ্ছে ৩টি ইউনিয়নের মানচিত্র।

গত এক মাসে সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়ুরিয়া থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি. বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল ধরে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এছাড়াও হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা ও খুলুমবাড়িয়া, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া, নতুনভুক্ত মালিথিয়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজার এখন নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। ঝুঁকিতে ঝুলছে এসব গ্রামের বহু ফসলের মাঠ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সার”টিয়া ইউনিয়নের বড়–রিয়া কৃষ্ণনগর এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে বহুমানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে এসেছে, কেউ কেউ ঠাই নিয়েছে বেড়িবাধে অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে। যাদের ঘরবাড়ি এখনো ভাঙনতটে অবস্থান করছে এদের কারো চোখেই ঘুম নেই যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হবে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।

৯০ দশক পর থেকেই বছরের পর বছর গড়াই নদী ভাঙনের করাল গ্রাসে বদলে গেছে বড়ুরিয়া, বাখরবা, কৃষ্ণনগর, কৃর্ত্তিনগর, গোসাইডাঙ্গা, সারুটিয়া, শাহবাড়িয়া, গাংকুলা অংশে এবং হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা ও খুলুমবাড়িয়া, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া, মালিথিয়া, চরপাড়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজারসহ ৩ ইউনিয়নের বৃহৎ এলাকা।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন জানান, স্থায়ী ভিত্তিতে স্পার্কিং ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক টি চ্যানেল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণবাঁধ পুন:নির্মাণসহ ভাঙনরোধ করে বাড়িঘর কৃষিজমি রক্ষায় শৈলকুপার ৩টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে জরুরি প্রকল্প দিয়ে বরাদ্দের চেষ্টা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ