Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডলারের মূল্য চড়া

ক্যাসিনোর প্রভাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

প্রতিদিনই তীব্র হচ্ছে ডলারের সংকট। ফলে বেড়ে যাচ্ছে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম। কমে যাচ্ছে টাকার মান। দীর্ঘদিন থেকেই খোলাবাজারে ডলারের দাম যে চড়েছে তা এখনো পড়েনি। বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের সাথে কথা বলেও ডলারের চড়া দামের সত্যতা মিলেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে এখন নগদ মার্কিন ডলারের মূল্য ৮৭ টাকা উঠেছে। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর উঠেছে ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ, যারা ভ্রমণ করতে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে ৮৭ টাকার কিছুৃটা বেশি দামে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার লেনদেনের বিষয়ে বিভিন্ন সীমা বেঁধে দিলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নীতিমালা উপেক্ষা করে মূল্যের বাইরে গিয়ে ডলার বেচা-কেনা করছে ব্যাংকগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মানি এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা জানান, দেশে চলছে ক্যাসিনোর সাথে জড়িত এবং অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান। এ অভিযানের কারনে যাদের কাছে অধিক পরিমানে নগদ টাকা আছে তারা নগদ টাকার কমাতে ডলার এবং ইউরো ক্রয় করে রাখছেন। হঠাৎ করে অধিক পরিমানে ডলার ক্রয়ের কারনে ডলার সংকট তীব্র হয়েছে। আর তাই ডলারের দাম বেড়েছে।

সূত্র মতে, গত কয়েক মাস থেকেই কিছুটা বাড়তির দিকে ডলারের দাম। কোন কোন মানি এক্সচেঞ্জে ৮৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছে। গত আগস্টেও খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৮৬ টাকায়। ১ মাসের ব্যবধানে ১ টাকা ৫০ পয়সা টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ডলারের দাম।

ডলারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীসহ অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলায় অনেকেই নগদ টাকার বিপরীতে ডলার কিনে রাখছেন। যাতে করে অল্প নোটে অধিক টাকা রাখা যায়। আবার কেউ কেউ চিকিৎসার জন্যও বিদেশে যাচ্ছেন। আর এ শ্রেণির মানুষ এখন নগদ ডলারের চাহিদা মেটাতে খোলাবাজারে বেশি ভিড় করছেন। এতে খোলাবাজারে ডলারের দাম একটু বেশি চড়েছে।

সূত্র মতে, আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। পণ্য আমদানি এবং সরকারি পর্যায়ে এলএনজি ও জ্বালানিসহ কয়েকটি পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে কয়েক দিন ধরে ডলার সংকটে আছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। বাধ্য হয়েই তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনছে। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য প্রবাহে চাপ পড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি-রফতানির ভারসাম্য না থাকা, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা কারণে ডলারের বাজারে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রফতানি বাণিজ্য ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে কিছুটা উৎসাহিত হলেও বেড়ে যাচ্ছে পণ্য আমদানির ব্যয়। কারণ, আমদানির জন্য বেশি মূল্যে ডলার কিনতে হচ্ছে। ফলে খাদ্যশস্য, ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামালসহ সব আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২ অক্টোবর আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা নিয়েছে। তবে সীমান্ত ব্যাংক আমদানি দায় মেটাতে ডলারের মূল্য নিয়েছে ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, ২ অক্টোবর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮৭ টাকা। একইদিন ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে বিদেশি ব্যাংক আল ফালাহ। ৮৬ টাকা ৬০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে জনতা, বিডিবিএল, অগ্রণী ও এনসিসি ব্যাংক।
ডলারের দাম বৃদ্ধির কারন সম্পর্কে ওয়েলকাম মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের পরিচালক আনোয়ার হোসেন আনু ইনকিলাবকে বলেন, আমদানি-রপ্তানির উপর ডলারের দাম নির্ভর করে। তবে এখন ডলারের দাম কেন বাড়ছে সঠিকভাবে বলতো পারছি না। তবে কেউ কেউ বলছে দেশে ধরপাকোর চলছে। তাই দেশে অনেকে নিরাপদ মনে করছেন না। তাই অনেকেই বিদেশমুখী। একই সঙ্গে টাকার নগদ নোট একসঙ্গে রাখতে গিয়ে অনেকে বিপদ মনে করছেন। তাই নগদ টাকার পরিবর্তে ডলার ক্রয় করে রাখছেন। আর এসব কারনে ডলারের দাম বাড়ছে। তিনি জানান, গতকাল ৮৭ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত ছিল ডলারের দাম।

দোহার মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্তাধিকারী মুরাদ হোসেন জানান, হঠাৎ করে ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী ধরপাকোর শুরু হওয়ায় ডলারের সঙ্কেট দেখা দিয়েছে। অনেকেই অভিযান থেকে বাঁচতে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। আর এ জন্য অধিক ডলার ক্রয় করছেন। অপর একটি মানি এক্সচেঞ্জের ডলার বিক্রয়কারী আবুল বাশার জানান, গতকাল ৮৭ টাকায় ডলার বিক্রি করেছেন।
ডলারের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য দিয়েছে ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। এখন ব্যাংকগুলো যদি ৮৭ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করে তাহলে এটা অনেক বেশি। যেসব ব্যাংক ডলারের দাম বেশি নিচ্ছে এটা কেন নিচ্ছে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখা উচিত। কারণ, এর প্রভাবে যেন ডলারের বাজার অস্থির না হয় এজন্য আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডলারের দাম বাড়লে দ্বিমুখী প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ডলারের দাম বাড়লে রফতানিকারকরা লাভবান হয়। তবে সমস্যায় পড়ে আমদানিকারকরা। কারণ, আমদানি ব্যয় বাড়লে স্থানীয় বাজারের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। চাপ পড়ে মূল্যষ্ফীতির উপর। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে সবচেয়ে কষ্ট হয় গরীরের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে জুলাই শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে) দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ২৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঘাটতির এ অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল ১১৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ে তুলনায় এবার ঘাটতি কিছুটা কমেছে।

হঠাৎ করে ডলারের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণত রপ্তানি কম হলে বা আমদানি বেশি হলে মাঝে মাঝে ডলারের দাম বাড়ে-কমে। তবে ক্যাসিনো বা দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের কারনে নগদ টাকার পরিবর্তে ডলার কিনে রাখছে বা বিদেশমুখী হচ্ছে এটা যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, এক শ্রেণির মানুষ এখন নগদ ডলারের চাহিদা মেটাতে খোলাবাজারে ভিড় করছেন। এতে খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়তে পারে। তাই খোলাবাজরের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে উল্লেখ করেন সিরাজুল ইসলাম।



 

Show all comments
  • মুক্তিকামী জনতা ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    "এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্যাসিনো শিল্প আসলে কত বড়?"। তুলনামুলক গরীব দেশের জন্য গুটি কতেক ক্যাসিনোও অনেক বড়। এটি বন্ধ করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • M. R. K. ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    "বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলে যুক্তরাজ্যের মানুষ"!
    Total Reply(0) Reply
  • samimkhan ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশে এর বাজার হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা
    Total Reply(0) Reply
  • Nazibullah Tamjid ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    দেশের অর্থনীতি এখন ভেঙে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • Akm Masud ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    এই দেশের মায়া কেউকরেনাই সবায় দেশটাকে লুটের হাতে তুলে দিতে চাইছেন যখন ধন্যবাদ মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনিই বাংলার কান্ডারী
    Total Reply(0) Reply
  • Hd Md Rajib ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 1
    আগে ভাবতাম জঙ্গি দের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে তা কঠোর ভাবে কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করলেও তা বাস্তবায়ন হবেনা। কিন্তু না এখন প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:১৮ এএম says : 0
    BAL KI CHOR TA DUI CHAR CHAMCHA DER DHOR-PAKORE E BUJA GALO ! DESH WNNOOOTI HOCHE NAKI DESH TAKE FOGLA KORE DHICHE ?? EVEN $ BESHI KORE KENATE $ ER DAM BARCHE ! KI OBOSTHA DESHER ????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ