পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নানা আচার ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা। শুক্রবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে ৫দিনব্যাপী দুর্গাপূজার শুরু হয়। আর মাত্র দু’টি দিবানিশির প্রহর পেরুলেই উমার কৈলাশ গমন। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, গতকাল রোববার সকাল ৯টা ২৮ মিনিটে ছিলো শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। সকালে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। পূজান্তে অঞ্জলি দেওয়া দেশ ও বিশ্বশান্তিকল্পে এবং মঙ্গলার্থে সমবেত প্রার্থনা হয়।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠে মহাঅষ্টমী পূজা শুরু হয় সকাল ৬টা ৩ মিনিটে। কুমারী পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায়। সন্ধিপূজা আরম্ভ হয় সকাল ১০ টা ৩১ মিনিটে এবং শেষ হয় সকাল ১১টা ১৯ মিনিটে। একইদিন সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটের পর থেকে শুরু হয় বলি সময়।
শারদীয় দুর্গোপূজার মহাষ্টমীতে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে অনুষ্ঠিত হয় কুমারীপূজা। কুমারীপূজা দেখতে এদিন সকাল থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী সকল শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। কিন্তু এতে বাধ সাধে কয়েক দফার হালকা ও ভারি ভর্ষণ। তারপরও খলনায়ক বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন ভক্তরা।
গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির ও মঠের মন্ডপে কুমারী মা-এর আসন গ্রহণের পর মুখর হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো লোকের ভিড়ে জয়ধ্বনি দিয়ে ভক্তরা ভক্তিভরে বরণ করে নেন কুমারী মা ‘প্রশংসা প্রিয়তা বন্দোপাধ্যায়’কে। শাস্ত্র মতে, এদিন তার নামকরণ করা হয় সুভগা।
শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিনে রামকৃষ্ণ মিশনে এভাবেই অনুষ্ঠিত হয় পূজার সবচেয়ে আর্কষণীয় পর্ব কুমারীপূজা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করার উদ্দেশেই এ কুমারীপূজা। এদিন রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়াও মিশন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মঠেও কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভক্তদের অপেক্ষা শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মন্ডপে আসেন কুমারী মা প্রিয়তা। লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পরে আসা কুমারী মা’র চোখে-মুখে ছিল কিছুটা ভীতি আর অনেকখানি আনন্দ।
কুমারী মা আসনে আসার পরপরই শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতেই গঙ্গা জল ছিটিয়ে কুমারী মাকে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর কুমারী মা’র চরণযুগল ধুয়ে তাকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যরে শঙ্খপাত্র সজ্জিত ছিল গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। কুমারীপূজার ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বায়ু- এ পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় কুমারী মায়ের পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। পূজা শেষে প্রধান পুজারী দেবীর আরতি দেন এবং তাকে প্রণাম করেন। সবশেষে পূজার মন্ত্রপাঠ করে ভক্তদের মধ্যে চরণামৃত বিতরণের মধ্য দিয়ে সকাল ১০টার কিছু পরে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত এক বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। কুমারীপূজা অংশ নেওয়ার জন্য সকাল থেকে ভক্তদের ভিড় জমতে থাকে রামকৃষ্ণ মিশনসহ এর আশপাশের এলাকায়। রামকৃষ্ণ মিশনের বড় চত্বর পেরিয়ে রাস্তাতেও ছিল ভক্তদের ভিড়। বেরসিক বৃষ্টিও তাদের সমাবেশে বাঁধা হতে পারেনি। পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে তাদের পদচারণায়।
পূজা শেষে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সনাতন ধর্মে সর্বোচ্চ আসন দেওয়া হয় নারীকে। নারী রূপে মা’কে। দুর্গা পূজার মাধ্যমে আমরা জগতের মা’কে পূজো করি। জগৎ জননী মা দুর্গার মানবিক প্রতীক এবং প্রতিমা কুমারীর মধ্যে তার সর্বাধিক প্রকাশ বলে দুর্গা পূজার সময় কুমারী পূজা করি। তিনি বলেন, কুমারীকে পূজা করার জন্য কোনো জাতি ধর্ম-বর্ণ বিচার করা দরকার নেই। সব জাতির সব বর্ণের কুমারীকে পুজো করার বিধান আছে। তবে আমাদের শাস্ত্র অনুসারে ব্রাহ্মণ কন্যাকেই পুজো করা হয়ে থাকে।
গুলশান-বনানী পূজা মন্ডপ সেজেছে নতুন সাজে :
এদিকে ঢাকার অভিজাত একলাকা গুলশান বনানী পূজা মন্ডপে আনন্দের হাজার পসরা ডানা মেলেছে ভক্তদের মাঝে। প্রাচীন দেবীর মুর্তি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সাজানো হয়েছে মন্ডপ। দেবী দুর্গার অলঙ্কার তৈরি করা হয়েছে মাটি দিয়ে। সে বার্তায় মাটির কাছাকাছি থেকে বিনয়ী মা দূর করবে সকল অশুভ। মন্দিরের ডিজাইন করা হয়ছে প্রাচীন ও আধুনকি মন্দিরের স্থাপনা শৈলীতে। সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন দেবতার প্রতিলিপি। ধূসর রঙে নানা রঙ সন্ধ্যা হলে নিয়ে আসে অন্য রকম আবহ। এবছর সর্ম্পূণ নতুন থিমে দেশের সর্ববৃহৎ পূজা মন্ডপ বনানী পূজা মন্ডপকে সাজানো হয়েছে। ১২ বছর পুর্তি উপলক্ষে এবাররে শারদোৎসবে ১২টি প্রতীকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তারা। গুলশান-বনানী পূজা উদযাপন ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক সুকুমার চৌধুরী জানান, কারিগরদের প্রায় তিন মাসের নিরলস পরিশ্রমের ফসল এবাররে পূজা মন্ডপ। যা ইতোমধ্যে দেশের সবচেয়ে নান্দনকি পূজা মন্ডপে রূপ নিয়েছে। সংশ্লষ্টিরা আশা করেন, আয়োজনের মধ্য দিয়ে অসা¤প্রদায়কি বাংলাদেশের যে স্বপ্ন বাংলাদশেরে মানুষ দেখে তার প্রতফিলন ঘটবে।
বাঙালী হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ করতে সকাল থেকেই মন্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় জমে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।