Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বদলাবে অর্থনীতির চিত্র

উত্তরাঞ্চলের খনিজ সম্পদ

মাহফুজুল হক আনার/ আবু শহীদ দিনাজপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে পার্মিয়ান যুগের গন্ডোয়ানা কয়লা, তেল, লৌহ চুনাপাথরসহ বিভিন্ন ধরনের ম‚ল্যবান খনিজ সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান কার্যক্রম ছিল অবহেলিত। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ ত‚-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় একাধিক স্থানে খনিজ সম্পদের মজুদ ও অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। আলোর মুখ দেখতে পেয়েছে বড় পুকুরিয়া কয়লা ও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প। পঞ্চগড়ের শালবাহান তেলখনিসহ আরো অনেক খনি আঁতুড় ঘরেই মৃত্যুবরণ অর্থাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের এসব মহাম‚ল্যবান খনিজ পদার্থ সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়সহ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার স্বাদ না পাওয়া বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও ওয়াকিফহাল। জীবন বাজী রেখে শীর্ষ পর্যায়ের মুখচেনা অনেক বর্ষিয়ান নেতা রাজনীতি করে যাচ্ছেন। জনগণের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর সভা- সমাবেশ ও জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে চলেছেন। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ নিয়ে দেশি ও বিদেশি জার্নাল ঘেঁটে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে এসব বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

১৮৫৭ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভ‚তত্ত¡বিদ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভ‚-ভাগের নিচে বিরাট আকারের কয়লাখনির অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন। লক্ষ কোটি শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশের রাজনীতিতেই হয়েছে উত্থান-পতন। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোড মডেল। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আকাক্সক্ষার কথা সাধারণ মানুষকে নুতন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই খেলাপী ঋণসহ একের পর পর যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং বিদেশ থেকে ঋণ নয় বরং বিদেশিদের ঋণ দেয়ার প্রত্যয় স্বপ্নকে আরো উজ্জল করেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৯৫৯ সালে স্টানভাক কোম্পানি বাংলাদেশে তেল অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক‚প খনন করার সময় এদেশে উন্নতমানের খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির বিষয়টি যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়। এসময় বগুড়া জেলার কুচমাতে কুচমা এক্স-১ নামক ক‚প খনন করতে গিয়ে ভ‚-পৃষ্ঠ থেকে ২৩৮১ মিটার গভীরতায় গন্ডোয়ানা কয়লার সন্ধান লাভ করে। স্টানভাক কোম্পানি প্রথমদিকে ক‚পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও পরবর্তী সময়ে খননকাজ চালাতে গিয়ে এ কয়লাখনি আবিষ্কার করে। ক‚পে কয়লাস্তর ছাড়াও পুরু ইয়োসিন চুনাপাথর স্তর আবিষ্কৃত হয়। এ কয়লাখনির আবিষ্কার বাংলাদেশে আহরণযোগ্য গভীরতায় খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।

ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ১৯৬১ সালে পাকিস্তান ভ‚তাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসপি) ইউএন পাক মিনারেল সার্ভে প্রজেক্টের আওতায় বগুড়া ও রাজশাহী জেলায় ব্যাপক আকারে ভ‚-তাত্তি¡ক, ভ‚-পদার্থীয় জরিপ ও খননকাজ পরিচালনা করে। এ জরিপ ও খননকার্যের ফলে ১০৫০ মিলিয়ন টন মজুত সমৃদ্ধ জামালগঞ্জ-পাহাড়পুর কয়লা খনি এবং প্রচুর পরিমাণে ইয়োসিন চুনাপাথরের মজুত আবিষ্কৃত হয়। তবে জামালগঞ্জ-পাহাড়পুর কয়লাক্ষেত্রে বিদ্যমান কয়লাস্তরের গভীরতা অত্যধিক হওয়ায় কয়লা উত্তোলন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে কিনা সে বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে খনি থেকে কয়লার পরিবর্তে কয়লাস্তরে থাকা মিথেন গ্যাস আহরণ ও উৎপাদনের বিষয়টি বিবেচিত হয়।

জরিপ অনুযায়ী, ৬৭০ মিটার থেকে ১১৬০ মিটার পর্যন্ত মাটির গভীরে ছিল খনিটি। অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়ার পর সরকারিভাবে প্রায় ২ দশমিক ৮৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং কয়লা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পর জায়গাটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৭৯ সালে জরুরিভাবে অতিথিশালা, কোয়ার্টার বিল্ডিং এবং গুদামঘর নির্মাণ করা হয়। সে সময় কর্মকর্তাগণ এসব জায়গায় বসবাস করতেন। এরপরে হঠাৎ করে ১৯৮১ সালে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এই স্থান ত্যাগ করে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত এই খনির ফিজিবিলিটি যাচাইয়ের কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি।

এছাড়াও জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার জগদীশপুর গ্রামে ১৯৬২ সালে কয়লা খনির সন্ধান পাওয়া যায়। খনি এলাকায় ১ হাজার ১৬৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ আছে। এই কয়লা খনি চালু হলে কয়লা উত্তোলন করে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ ও তৎকালীন খনিজ সম্পদ বিভাগ যৌথভাবে অনুসন্ধান চালায় এবং অনুসন্ধানে ৭টি স্তরবিশিষ্ট কয়লা আবিষ্কৃত হয়। এখানকার কয়লা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে উৎকৃষ্টমানের বলে জানা গেছে। এ কয়লা থেকে স্বল্প খরচে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব।

লাল-সবুজের পতাকার স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতেই ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ ভ‚-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তর বা জি এস বি ১৯৮৫ সালে বড় পুুকুরিয়া, ১৯৮৯ সালে রংপুরের খালাসপির, ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে দীঘিপাড়াসহ ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্রের কয়লা মজুতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাম্প্রতিককালে হাকিমপুর উপজেলায় লৌহ খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যে কাজ তারা এখন করছেন তাতে আশাবাদী হবার মতোই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। লোহা ছাড়াও খনিটিতে ম‚ল্যবান কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়াম রয়েছে বলেও জানান তারা । ভ‚তাত্তিক জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদ রানা যিনি এই কাজের সমন্বয়কের ভ‚মিকায় রয়েছেন তিনি জানান, ড্রিল করতে গিয়ে তারা ১৩৩৪ থেকে ১৭৮৬ ফুট গভীরতায় লোহার বিশুদ্ধ আকরিকের সন্ধান পেয়েছেন। খনির আয়তন প্রায় দশ বর্গকিলোমিটার হতে পারে। থাকতে পারে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন টন লোহা ও আরও কিছু ম‚ল্যবান পদার্থ। “ড্রিল করার সময় যে আকরিক উঠে এসেছে তাতে লোহার গড় পরিমাণ ৬০ শতাংশেরও বেশি। উত্তোলনের জন্য বিশ্বব্যাপী যে মানদন্ড ধরা হয় তাতে এই মাত্রা পর্যাপ্ত। কিছু স্তরে লোহার পরিমাণ অনেক বেশি। চুম্বকের সঙ্গে খুব শক্তভাবে আটকে যাচ্ছে এই আকরিক। লৌহ খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যে কাজ তারা এখন করছেন তাতে আশাবাদী হবার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। লোহা ছাড়াও খনিটিতে মূল্যবান কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়াম রয়েছে বলেও জানান তারা।

এই কাজের সমন্বয়কের ভ‚মিকায় থাকা ভ‚তাত্তিক জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদ রানা জানান, ড্রিল করতে গিয়ে তারা ১৩৩৪ থেকে ১৭৮৬ ফুট গভীরতায় লোহার বিশুদ্ধ আকরিকের সন্ধান পেয়েছেন। খনির আয়তন প্রায় দশ বর্গকিলোমিটার হতে পারে। থাকতে পারে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন টন লোহা ও আরো কিছু মূল্যবান পদার্থ। ড্রিল করার সময় যে আকরিক উঠে এসেছে তাতে লোহার গড় পরিমাণ ৬০ শতাংশেরও বেশি। উত্তোলনের জন্য বিশ্বব্যাপী যে মানদন্ড ধরা হয় তাতে এই মাত্রা পর্যাপ্ত। কিছু স্তরে লোহার পরিমাণ অনেক বেশি। চুম্বকের সঙ্গে খুব শক্তভাবে আটকে যাচ্ছে এই আকরিক।

অপরদিকে রংপুরের পীরগঞ্জে আবিষ্কৃত লৌহ খনিটি সুদীর্ঘ ৪৭ বছরেও আলোর মুখ দেখতে পায়নি। নেয়া হয়নি কার্যকর কোন পদক্ষেপ। উপজেলার শানেরহাট ও মিঠিপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি ভেলামারি পাথার নামক স্থানে আবিষ্কৃৃত এই মূল্যবান লৌহ খনিটি দীর্ঘদিন থেকে রয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। সরকার আসে যায় তবে কোনো সরকারের সুদৃষ্টি পড়ছে না এই খনিটির ওপর। অথচ খনিটির উত্তোলন শুরু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতো।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পরপরই তৎকালীন পাকিস্তান খনিজ সম্পদ বিভাগের একদল বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যচিত্র অনুযায়ী বিমান ও গাড়ির বহর নিয়ে প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই এলাকায় আসেন। খনির অবস্থান নিশ্চিত করতে তারা বিমানের নিচে ঢেঁকির ন্যায় একটি বিশাল শক্তিশালী চুম্বকদন্ড ঝুলিয়ে বিমানটি অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যেতে থাকে। এর এক পর্যায়ে বিমানের জুলন্ত চুম্বকদন্ড ছোট পাহাড়পুর গ্রামে জমির ওপর এসে আকর্ষিত হয়। বিমানটিকে বারবার মাটির দিকে টেনে নিচে নামাতে চেষ্টা করে। এছাড়া অন্যান্য পরীক্ষার পর পাকিস্তানের খনিজ বিজ্ঞানীরা সেটি লোহার খনির উৎস হিসেবে নিশ্চিত হন এবং উক্ত জমির ওপর কংক্রিটের ঢালাই করা চিহ্ন দিয়ে এলাকায় প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন।

প্রথম জরিপ সম্পন্নের পরের বছর পাকিস্তান খনিজ সম্পদ বিভাগের লোকজন এসে চিহ্নিত স্থানে খনন কাজ শুরু করেন। ওই বছরই তারা কয়েক মাস ধরে তেলমারী পাথারের ৩ কিলোমিটার দূরে কেশবপুর ও ছোট পাহাড়পুর, প্রথম ভাজা গ্রাম, পবনপাড়া সদরা কুতুবপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় অসংখ্য স্থানে পাইপ বসিয়ে লোহার খনির সন্ধান নিশ্চিত করেন। দ্বিতীয় বছরও পাইপের মাধ্যমে আরেক দফা জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হয়। পরিবর্তীতে ১৯৬৭ সালের শেষের দিকে পাকিস্তান খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা একদল বিদেশি বিশেষজ্ঞসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বিশাল বহর ও পরিবার-পরিজনসহ স্থানীয় পানবাজার হাইস্কুল মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরপর তারা তেলমারী পাথারের বিভিন্ন স্থানে পাইপের মাধ্যমে সন্ধানপ্রাপ্ত লোহার উপাদান উত্তোলন করেন।
খনি কর্মকর্তারা সে সময় এলাকাবাসীকে জানিয়েছিল, মাটির ৯০০ ফুট নিচ থেকে ২২ হাজার ফুট পর্যন্ত পাইপ খনন করে তারা লোহার উন্নতমানের স্তরের সন্ধান পেয়েছেন। এর বিস্তৃতি প্রায় ১০ কিলোমিটার। এর কিছু দিন পরে পাকিস্তান সরকার এ অঞ্চলের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে খনি থেকে লোহা উত্তোলনে নিরুৎসাহিত করতে গুজব ছড়ায়। তারা প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক খনি অনুসন্ধান কাজ শেষ করে ভেলামারীতে স্থাপনকৃত চারটি মূল পাইপের উৎসমুখে কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে খনি কর্মকর্তারা তাদের ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যান। এরপর দেখতে দেখতে অনেক সময় গড়িয়ে যায়।

দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার পুনরায় অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন। কিন্তু পূর্বে আবিষ্কৃৃত লৌহ খনির উৎসমুখ ভেলামারী হতে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পাহাড়পুর গ্রামের পূর্ব প্রান্তে পরীক্ষামূলক খনন করে রহস্যজনকভাবে হঠাৎ করে সবকিছু গুটিয়ে চলে যান সংশ্লিষ্ট খনন কর্মীরা। ফলে পুনরায় খনিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এরপরও পেরিয়ে গেছে ১২ বছর। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

অপরদিকে ৪ দশক পেরিয়ে গেলেও উত্তরের নওগাঁ জেলার একমাত্র খনিজ শিল্প চিনামাটি প্রকল্পটি দীর্ঘ ৪২ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। জানা যায়, ১৯৬৮ সালে উত্তরাঞ্চলে তৎকালীন সরকার খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নওগাঁর বর্তমান পত্মীতলা উপজেলা থেকে ৫ কি. মি. দূরে পত্মীতলা-ধামইরহাট সড়কের পাশে আমবাটি গ্রামের একটি পুকুরের পাশে চিনামাটির এই খনিটির সন্ধান পায়। ভ‚পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট গভীরে উন্নত এবং উৎকৃষ্টমানের চিনামাটির খনিটি আবিষ্কৃত হলে সে সময় পুরো উত্তরাঞ্চলে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।

উল্লেখ্য যে, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার শালবাহানে দেশের একমাত্র তেল খনিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। আবিষ্কারের ফলে উত্তরাঞ্চল তথা দেশবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছিল ব্যাপক আনন্দ, উৎসাহ আর উদ্দীপনা। আবিষ্কারের পরপরই উত্তোলনের কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিশাল যান্ত্রিক গাড়ীর বহর প্রবেশ করে শালবাহানে। ১৯৮৯ সালে শালবাহানের তেল খনি থেকে তেল আহরণের সম্ভব্যতা যাচাইয়ের জন্য ফ্রান্সের ফস্টাল কোম্পানি ভ‚মি থেকে মাত্র ৬ হাজার ফুট নিচে তেলের স্তরের সন্ধান পায়। পরবর্তীতে ৮ হাজার ফুট গভীরে ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি তেল ক‚প খনন করে। তেল প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদ নিজে এসেই শালবাহান তেল খনি উদ্বোধন করেন এবং অবিলম্বে এ তেল খনি থেকে তেল উত্তোলনের ঘোষণা দেন। সে সময় এরশাদের এ ঘোষণাটি কাল হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য। শুরু হয় বিদেশি ষড়যন্ত্র। ভারতীয় গোপন সংস্থা ওই ফস্টাল কোম্পানিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে শালবাহন তেল খনি থেকে সুকৌশলে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। গভীর ষড়যন্ত্রের শিকারে ফস্টাল কোম্পানি রহস্যজনকভাবে হঠাৎ করে ওই এলাকায় তেল নেই বলে খননকৃত ক‚পটিকে সিমেন্ট দিয়ে চিরস্থায়ী সিল করে চলে যায়। ফলে বাংলাদেশের তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনার আতুর ঘরেই মৃত্যু ঘটে।

জানা যায়, পরবর্তীতে উক্ত ফস্টাল কোম্পানি বাংলাদেশের শালবাহান থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানার জমিদারপাড়া গ্রামে তেলক‚প খনন করেছে। ওই তেলক‚প দিয়েই ভারত সরকার মাটির নিচ দিয়ে বাংলাদেশের তেল শোষণ করছে।
তবে আশাবাদি এদেশের মানুষ, ভ‚-তত্ত¡ জরিপ বিভাগ, পেট্রো বাংলার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিশেষজ্ঞজনেরা। তথ্য সংগ্রহে গিয়ে যাদের সাথেই কথা বলেছি সকলেই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাসী। তারপরও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল উত্তরাঞ্চলের খনি উত্তোলন করে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন। উত্তরাঞ্চলবাসী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার পূরণের অপেক্ষায়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ