Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পারাপার বন্ধ

রাজবাড়ী জেলা সংবাদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পদ্মার তীব্র স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলতে পারছে না নৌযান। ফলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে শনিবার বেলা ২টা থেকে যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগের দিন শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে লঞ্চ চলাচল ঝ‚ঁকিপ‚র্ণ হয়ে ওঠায় এ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় শনিবারও চোখের পলকে অন্তত অর্ধশত বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শত শত বসত বাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। একদিকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের আহাজারি অন্যদিকে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষে দুর্ভোগে ঘাট এলাকায় যেন নেমে এসেছে মহাদুর্যোগ।

বিআইডবিউটিসি সূত্র জানায়, স্রোতে সাথে পাল্লা দিয়ে ফেরিগুলো চলাচল ও ঘাটে ভিড়তে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের যানবাহন পারাপার। শুধুমাত্র যাত্রী পারাপারে জন্য ৩টি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি চলাচল করছে ব্যাস্ততম এই নৌরুটে। এতে করে দৌলতদিয়া প্রান্তে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন।
সরেজমিন শনিবার দেখা যায়, দৌলতদিয়া ১ নং ফেরি ঘাট নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ২ নং ফেরি ঘাটও যে কোন সময় নদীতে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এছাড়া ঘাট এলাকার শত শত বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। চোখের পানি আর গায়ের ঘাম যেন এক হয়ে গেছে। কারো কোন কথা বলার সময় নেই। সবারই একটাই চাওয়া, সর্বস্ব নদীতে বিলীন হওয়ার আগে যতটুকু সরানো যায়।

এ সময় কথা হয় রিপন, আতিয়ার, মোবারকসহ কয়েক যুবকের সাথে, তারা জানায় তারা তাদের বন্ধু রশিদের বাড়ি সরানো কাজে সহযোগিতা করতে এখানে এসেছেন। বন্ধুর এই দুঃসময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। এরকম ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের আত্মীয় স্বজন যে যেখানে ছিল, সবাই ছুটে এসেছেন, আসবাবপত্র সরানো কাজ করছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের পদ্মার তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নদী পার হতে সময় লাগছে আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। যে কারণে দৌলতদিয়ায় যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হচ্ছে। এছাড়া স্রোতের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে ফেরি ঘাট এলাকায়। ফলে ১ নং ফেরি ঘাট পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। অপর ৫টি ঘাটেও তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি ভিড়তে পারছে না। শুধুমাত্র ৬ নং ফেরি ঘাটের একটি পকেটে ছোট ফেরি ভিড়ছে। ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে যানাবাহন পারাপার বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন জেলা থেকে নদী পারাপার হতে আসা যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে বসে থেকেও ফেরি নাগাল পায়নি। এরপর যখন যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে তখন ফেরির দেখা পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বেশিীর ভাগ যানবাহনের যাত্রীরা বাস ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ-বোঝা নিয়ে কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ফেরি ঘাটে গিয়ে ফেরিতে নদী পারাপার হচ্ছেন। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি তাদের খরচ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
এদিকে তীব্র স্রোতে গত কয়েক দিনে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটসহ আশপাশ এলাকার প্রায় ৪ শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙন কবলতিরা বসত ভিটা হারিয়ে ঘর-বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে যাবার চেষ্টা করছেন। তবে একাধিকবার বাড়ি-ঘর নদীতে বিলিন হওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে ক্ষডুগ্রস্তরা। তাদের দাবি স্থায়ীভাবে দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ীর গোদার বাজার পর্যন্ত নদী শাসনের জন্য।

রাজবাড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুরের দাবি ভাঙনের কবল থেকে দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। বিআইডবিøউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবু আব্দুল্লাহ রণি জানান, তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল কয়েকদিন ধরেই ব্যাহত হচ্ছে। স্রোতে ফেরিগুলো ঘাটে ভিড়তে সমস্যা হচ্ছে। তবে ব্যস্ততম এরুটে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমানোর জন্য যাত্রী পারাপারে ছোট ৩টি ইউটিলিটি ফেরি চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ