Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশসহ অর্ধশত আহত

বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে জেনেভা ক্যাম্পে সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে বিদ্যুতের বকেয়া বিলকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। ক্যাম্পবাসীর অভিযোগ, পুলিশ ও কাউন্সিলরের লোকদের আক্রমনে ক্যাম্পের অর্ধশত বাসীন্দা আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে, সংঘর্ষে তাদের ১৫ সদস্য আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেয়।
এদিকে, সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটের আঘাতে মোহাম্মদ রকি (২২) নামে এক যুবকের একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংঘর্ষের পর ক্যাম্পের ভেতর থেকে সাত বিহারী যুবককে আটক করেছে পুলিশ।

ক্যাম্পবাসীদের অভিযোগ, প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টার মতো ক্যাম্পে বিদ্যুৎ থাকে না। এই ক্ষোভে গত শুক্রবার থেকে তারা আন্দোলন শুরু করেছেন। ওইদিন বেশ কিছু সময় ধরে আন্দোলন চলে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে আবারও আন্দোলন শুরু হয়। ক্যাম্পের বাসীন্দারা জেনেভা ক্যাম্প থেকে মোস্তাকিম কাবাব রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ঘটনাস্থলে আসলে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১২টা থেকে আন্দোলন শুরু হয়ে দুপুর ১টার দিকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। দুপুর দেড়টা থেকে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। তাদের সাথে জলকামান ও সাঁজোয়া যান ছিল। পুলিশের পেছনে র‌্যাবের সদস্যদেরও দেখা গেছে। একপর্যায়ে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের পেছনের সড়কেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে উল্টে দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাস্তায় বেশ কয়েক জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে রেখে বিক্ষোভ করে তারা। পুলিশের শটগান ও রবার বুলেটের আঘাতে প্রায় অর্ধশত বাসীন্দা আহত হয়। এর মধ্যে রবার বুলেটের আঘাতে রকি নামে এক যুবকের চোখ মারাত্মক জখম হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আঘাতের কারণে তার একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলেন, এখানে দুই মাস ধরে বিদ্যুতের সমস্যা চলছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বলা হলেও তিনি কোনো সুরাহা করেননি। আরও কয়েকজন ক্যাম্পবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে যত স্ট্রান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) ক্যাম্প রয়েছে, এর মধ্যে এখানেই বিদ্যুৎ নিয়ে ঝামেলা চলছে। তারা বলেন, এখানে প্রায় ৪০ হাজার বিহারী বসবাস করেন। এখানকার বিদ্যুৎ বিল দেয় জাতিসংঘ। ক্যাম্পের বাসীন্দাদের অভিযোগ, তারা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করলে প্রথমে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এরপর পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।

ক্যাম্প সূত্রে জানা যায়, চোখে আঘাত পাওয়া রকি ক্যাম্পের ভেতরে একটি গ্যারেজে মেকানিকের কাজ করেন। আহত রকির বোন জুলি আক্তার বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ওই পথে যাচ্ছিলেন রকি। হঠাৎ দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যান তিনি। এসময় পুলিশের ছোঁড়া বেশ কয়েকটি রাবার বুলেট তার গায়ে লাগে। একটি বুলেট সরাসরি তার চোখে আঘাত করে।
ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, রকির ডান হাত, বুকে ও চোখে বেশ কয়েকটি রবার বুলেট লেগেছে। এতে তার একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে ঢামেকের চক্ষু বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে ৬ দফা পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে তাদের প্রায় ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। কারও পায়ে, কারও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লেগেছে। তাঁদের পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিকেলের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের দায়ে সাত বিহারী যুবককে আটক করা হয়েছে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান জানান, প্রতি মাসে এক কোটি ২০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনেভা ক্যাম্পে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ বিল না দেয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া হয়েছে, ফলে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। আটকে পড়া পাকিস্তানিদের এই ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, ডিপিডিসি বলছে, বিদ্যুৎ বিল না পেলে লোডশেডিং চলবে।

জানা গেছে, জাতিসংঘের জেনেভা কনভেনশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জেনেভা ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছিল। কিন্তু গতবছর মাঝামাঝি থেকে সেই বিল পরিশোধ করা হয়নি। চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে যায়। যার কারণে বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ বিপণন সংস্থা ডিপিডিসি জেনেভা ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বিষয়টির সমাধানে গত এক মাসেরও বেশি সময় সরকারের বিভিন্ন মহলের কাছে ধরণা ধরেও কোনো সুরাহা পায়নি বলে তাদের অভিযোগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ