Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজ মহা অষ্টমী ও কুমারী পূজা

মহা সপ্তমী পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে দুর্গতিনাশিনী মা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে মহাসপ্তমী পূজা শুরু হয়। এদিন সকালে ত্রি নয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। মা দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার শুরু হয় বাঙালি হিন্দু স¤প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় শারদীয় দুর্গোপূজা। দেশের পূজা মন্ডপগুলোতে ঢাকের বোলে ধ্বনিত হচ্ছে হিন্দু বাঙালির হৃদয়তন্ত্রীর বাঁধভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার।

মহাষ্টমীতে আজ রোববার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা শুরু হবে। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে বেলা ১২টা ৩১ মিনিট থেকে ১টা ১৯ মিনিটের মধ্যে সল্পিব্দ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৬ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা সমাপন। মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনসহ কয়েকটি স্থানে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

উৎসবে মাতোয়ারা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। হিন্দু সম্প্রদায়ের জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবার গন্তব্য পূজামন্ডপ। নেই কোন ভেদাভেদ। সবাই আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন শারদীয় দুর্গো পূজার। শিশু-কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা বাহারি পোশাক আর নিজেদের সাজিয়ে রাঙিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে।

মহাসপ্তমী সপরিবারের মা দুর্গার পিতৃগৃহে প্রবেশের দিন। দেবীর নবপত্রিকাস্নান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা দিয়ে দিনের মুখ্য আচার শুরু হয়েছে। এতদিন পরে বাপের বাড়ি ফিরেছে মেয়ে। সুতরাং শুচি শুদ্ধ না করে মেয়েকে কি ঘরে তোলা যায়। তা না হলে অমঙ্গল হবে যে। তাই ভোর হতেই শুরু হয় যায় নবপত্রিকা স্নান। একে একে হয়েছে মহাস্নান, অষ্ট কলস স্নান, আবাহন, চক্ষুদান, প্রাণ প্রতিষ্ঠা। তারপর পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ। ঢাকের আওয়াজ।

সে অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সপ্তমী পূজার রীতি মেনে নবপত্রিকা (কলাবউ) স্নানের পর শুরু হয় দুর্গার আরাধনা। এরপর ঘট বসিয়ে সঙ্কল্প। ফলনের দেবী হিসেবে মহাসপ্তমীতে দুর্গাপূজা হয়। অন্যান্য আরও ৮টি গাছের সঙ্গে বেল গাছের শাখা কেটে রাখা হয়। বলা হয়, ষষ্ঠীর রাতে এই বেল গাছের শাখাতেই দেবী নেমে এসেছিলেন ও সারা রাত বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এই নয়টি গাছের শাখাকে স্নান করিয়ে পূজার জায়গায় নিয়ে আসা হয় এবং এর পরেই মাটির প্রতিমায় হয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা।

মূলতঃ দুর্গোৎবের মূল পর্ব শুরু হয় সপ্তমীতে। গতকাল শনিবার চলে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাৎ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা চলে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা। গতকাল সপ্তমী পূজার দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামন্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে সপ্তমী পূজা।

আজকের দিনে মহাষ্টমীর প্রধান আকর্ষণই থাকবে কুমারী পূজা। সকাল ১০টায় রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপে এ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অল্পবয়সী একটি মেয়েকে কুমারী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হবে। আজ দেবীর প্রতীক হিসেবে যে কুমারী মেয়েটিকে পূজা করা হবে, প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে তার নাম ও পরিচয় পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছেন রামকৃষষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ। কুমারী পূজা ছাড়াও আজ রামকৃষষ্ণ মিশনে প্রায় ৩৫ হাজার পূজারী ও দর্শনার্থীর মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। রাজধানী ছাড়াও রামকৃষষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজামন্ডপেও আজ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, ধানমন্ডি সর্বজনীন পূজা কমিটি, গুলশান বনানী সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ, কলাবাগান সর্বজনীন পূজামন্ডপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার পুজামন্ডপে ভক্তরা মেতেছে উৎসবের আমেজে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ও ব্যক্তিগতভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মন্ডপগুলোতে হিন্দু পুজারিরা ভিড় করছেন দেবীর আরাধানায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ