পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দ্রগ্ গোরদ স্তোইমাস ব্লাগাদার নস্ত। অর্থাৎ বন্ধু আপেলের দাম কত? ধন্যবাদ। দ্রগ্ (বন্ধু) শব্দটি বেশ প্রচলিত। একে অপরকে দেখলে এটি বলে উঠে। বড় বড় হরফে রাশিয়ান ভাষায় আবার বাংলা-রাশিয়ান উভয় ভাষায় খাবার হোটেল, মুদি দোকান, সেলুন ও ফাস্টফুড দোকানগুলোর সাইনবোর্ড।
সর্বত্র এমনকি চায়ের দোকানেও আধো আধো বাংলার সাথে রাশিয়ান ভাষা উচ্চারিত হতে দেখে অবাক না হয়ে কি থাকা যায়। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে চুটিয়ে আড্ডা। একে অপরকে বন্ধু সম্বোধন করে করমর্দন। কারো আন্তরিকতার অভাব নেই। দেশি-বিদেশির এমন বন্ধন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। চারিদিকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে এটা কি বাংলা না রাশিয়ার কোনো জনপদ?
দেশি-বিদেশির এমন মিলেমিশে থাকা দেখতে হলে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপুপর গ্রামে যেতে হবে। সেখানে চলছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। গড়ে উঠছে দেশের প্রথম পরামণাবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাশিয়ার আর্থিক ঋণ সহায়তায় চলছে নির্মাণ কাজ। স্বাভাবিক কারণেই এখানে যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি। সেখান থেকে এসেছে হাজারও কর্মী ও বিশেষজ্ঞ। পর্যবেক্ষণে আসছেন বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রকল্প অফিস এলাকার মাঝে ৩১ একর জমির উপর গড়ে উঠছে তাদের জন্য আবাসস্থল। কুড়িতলা আটটি আর ষোলতলা এগারটি ভবন। প্রায় অজপাড়া গাঁয়ের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন উঁচু উঁচু ভবন যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারে না। সম্প্রতি বালিশ কান্ড গণমাধ্যমের প্রচারে ভবনগুলোর পরিচিতি বেড়েছে দেশব্যাপী। এটি পরিচিতি লাভ করেছে গ্রিনভ্যালি নামে। আশেপাশের ঘরবাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছেন অনেক কর্মী। প্রয়োজনের নিরিখে প্রকল্প অফিস ও আবাসিক এলাকার বাইরে গড়ে উঠেছে রকমারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
গ্রিনভ্যালি নতুনহাট নামে পরিচিতি পেয়েছে এলাকাটি। আগে এখানে কিছু ছোট-খাটো দোকানপাট আর আধা পাকা বাড়ি থাকলেও; এখন তা বদলাতে শুরূ করেছে। এ বদলটা চলছে ক’বছর ধরেই। মার্কেট আদলে গড়ে উঠছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এলাকাটিতে গরম-শীত উভয়টি খুব তীব্র হয়। এমন আবহাওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের দিকে লক্ষ্য রেখে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লেগেছে এসি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কর্মীদের জন্য আধাপাকা বাড়ির স্থলে গড়ে উঠছে পাকা বাড়ি।
চাইনিজ রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড, বিউটি পার্লার, সেলুন, কনফেকশনরি, কসমেটিক্স, চাল, ডাল আর রকমারি দোকান কি নেই এখানে। পাশপাশি রয়েছে চা সিঙ্গাড়া পুরির ছোট দোকানও। সব শ্রেণির মানুষের মোটামুটি চাহিদা মেটাচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানকার তরূণ সদ্য এমবিএ এ পাশ করেছেন আনোয়ার হোসেন। তাকে সাথে নিয়ে এলাকায় ঘোরাঘুরি আর বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে মুখোমুখি হই। আলাপচারিতায় জানা যায় অনেকখানি বদলে গেছে গ্রিনভ্যালি নতুনহাট এলাকাটি। বিভিন্নভাবে আয়ও বেড়েছে।
কথার ছলে বেশ ক’জন দোকানির সাথে আলাপকালে প্রশ্ন করি বিদেশিদের কাছে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে হেরফের হয় কি না। এমন কথার উত্তরে বলেন, শুরূর দিকে কেউ কেউ কিছু উল্টাপাল্টা করেছে। ওরা ঠকে শিখেছে। সতর্ক হয়েছে। আর আমরাও সতর্ক হয়েছি। দেশের সম্মানের আর নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে সবাই সজাগ রয়েছি। আমাদের ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক বেশ ভালো। এখন সবাইকে সবাই বিশ্বাস করে। অনেক পণ্যের বিশেষ করে শ্যাম্পু সাবান কসমেটিক্স কোম্পানির লোকজন রাশিয়ান দাম লিখে দিচ্ছে। এতে ভালো হয়েছে। আমরা বুঝতে শিখেছি ব্যবসা একদিনের না। দিন দিন এর প্রসার বাড়ছে। জমির দামও বাড়ছে।
১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজ করছে হাজার দেড়েক রাশিয়ান, কিছু ভারতীয় আর স্থানীয় ও অন্যরা মিলে আট দশ হাজার মানুষ। সবাই তাদের জীবন জীবিকার জন্য আয়ের একটা অংশ ব্যয় করে। এই ব্যয়ের অর্থ সচল রাখছে এলাকার অর্থনীতিকে। গ্রিনভ্যালি নতুনহাটের আশেপাশে গ্রামীণ জনপদ। রয়েছে ফসলের ক্ষেত। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে নিরবচ্ছিন্ন ষাট বছর বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের তাগিদে বদলে যাবে এসব গ্রামীণ জনপদের দৃশ্যপট।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল কাজ করছে রাশিয়ান কোম্পানি রোসাটম। তার সাথে রয়েছে আরো বেশ কিছু কোম্পানি। এসব কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে সাপ্লায়ার হিসেবে কাজ করছে বহু বাংলাদেশি। এদের অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। মেগা প্রকল্প হলে এমনটাই হওয়াই স্বাভাবিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।