Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে ভর্তুকি দরে ইলিশ রফতানি, দক্ষিণাঞ্চলে চড়া

৫শ’ টনের অনেক বেশি রফতানির অভিযোগ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

মূল প্রজনন ক্ষণ ঘনিয়ে আসার আগে ভর্তুকি দরে পাশ্ববর্তী দেশে রফতানি হলেও দেশের প্রধান উৎপাদন এলাকা দক্ষিণাঞ্চলে এখনো ভালো মানের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা দরে। অথচ গত সপ্তাহ থেকে বরিশাল ও ভোলার পাইকারি মোকাম থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রতি কেজি ৫ ডলার মূল্যে ইলিশ রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশি টাকার মানে যার দাম প্রতি কেজি ৫শ’ টাকারও কম। শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ৫শ’ টন ইলিশ ভর্তুকি দরে ভারতে রফতানির কথা জানিয়েছিল সরকার। যার সিংহভাগই বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রেরণ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সারা দেশ থেকে মোট ৫শ’ টন ইলিশ প্রেরণের কথা থাকলেও শুধু দক্ষিণাঞ্চল থেকেই তার অনেক বেশি ইলিশ পাঠানো হয়েছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে ইলিশের দামও বেড়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে মৎস্য অধিদফতর বা সংশ্লিষ্ট কোন দফতরই সঠিক কিছু বলতে পারেন নি। মৎস্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অন্য দফতরও শনিবার পর্যন্ত ঠিক কত টন ইলিশ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ভারতে গেছে তা বলতে পারেনি। তাদের মতে, বিষয়টি দেখভাল করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভারতে রফতানির জন্য এক কেজি সাইজের ভালো মানের ইলিশ বাছাই করেই পাঠানো হয়েছে। যেহেতু সারা দেশের ৬৫-৭০ ভাগ ইলিশ দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন ও আহরণ করা হয়, সেহেতু এ অঞ্চল থেকেই বেশি যাবার কথা।
এদিকে ভারতে ভর্তুকি দরে ইলিশ রফতানি হলেও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে এক কেজি সাইজের প্রতি মণ ইলিশের পাইকারি দর ৪০ হাজার টাকার ওপরে। ফলে খুচরা বাজারে ওই সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এলাকা ভেদে ১২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে। আর ৫শ’ গ্রাম থেকে সাড়ে ৭শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকা কেজি দরে। ৮শ’ গ্রাম থেকে সাড়ে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১১শ’ টাকা থেকে ১২শ’ টাকা।

এবারো সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলে বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারনে মূল প্রজনন ক্ষণের আগেই সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উপক‚লের নদ-নদী মোহনাসহ অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে চলে আসায় গত প্রায় মাস খানেক যাবত দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে। অথচ মাস খানেকের মধ্যেই এসব মা ইলিশ উপক‚লে ডিম ছাড়ার কথা। গত মাস খানেক ধরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে এর দামও কমে এসেছিল। আর ইলিশের প্রভাবে অন্য মাছের দামও কিছুটা হ্রাস পায়। তবে ভারতে ৫শ’ টনের ‘সীমিত রফতানি’ কার্যক্রম শুরু হবার পরে বাজারে এ মাছের দাম চড়া। ফলে অন্য মাছের দামও বেড়েছে। বরিশাল ও ভোলার পাইকারি মোকাম থেকে ভারতে রফতানির জন্য এখনো ভালো মান ও সাইজের ইলিশ সংগ্রহ চলছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ রফতানি অব্যাহত থাকতে পারে। মাত্র ৫শ’ টন ইলিশ রফতানির ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে তার কোন বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা নয়, এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ৫শ’ টনের আড়ালে কয়শ’ টন যাচ্ছে তার খবর কেউ রাখে।

এদিকে আশ্বিণের বড় পূর্ণিমার সময়কে ইলিশের মূল প্রজনন কাল ধরে আগে পরে ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে ৯ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে। এ সময়কালে উপক‚লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার মূল প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় জলাশয়সহ সাগর এলাকায় ইলিশ আহরণ, পরিবহনসহ দেশের বাজারে তা বিপণনও বন্ধ থাকবে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্যজীবীরা নিষেধাজ্ঞার এ ২২ দিনে ভারতীয় জেলেরা যাতে কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশের নৌসীমায় প্রবেশ করে কোন মাছ ধরতে না পারে তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ