পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওনা টাকা ফেরত চেয়েছেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের আমানতকারীরা। এ জন্য তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে দেখা করবেন। এতে কাজ না হলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে দেখা করবেন। তাতেও কাজ না হলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে ‘পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড আমানতকারী সমিতি’ আয়োজিত এ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগি আমানতকারীরা এসব কথা বলেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি আকারে সমিতিটি আত্মপ্রকাশ করে। এদের মধ্যে আহবায়ক হিসেবে আছেন মো. আনোয়ারুল হক। যুগ্ম আহবায়ক কামাল আহমেদ ও রানা ঘোষ। সম্পাদক প্রশান্ত কুমার দাস, কোষাধ্যক্ষ সারতাজ ভূঁইয়া। এছাড়াও সদস্য হিসেবে আছেন জহিরুল আলম, আব্দুল্লাহ আল আমিন, ক্যাপ্টেন এম ইদ্রিস আলী, রাফী ইকবাল, সামিয়া বিনতে মাহবুব, আব্দুল গাফফার আহমেদ এবং জহিরুল ইসলাম। এই সমিতির দ্বিতীয় বৈঠক ছিল গতকাল। বৈঠকে প্রায় অর্ধশত ভুক্তভোগি আমানতকারী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে আমানতকারীরা। অন্যথায় আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সামিয়া বিনতে মাহবুব নামের একজন আমানতকারী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বলেই আমরা এ প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখেছি। এমনকি আমানতের বিপরীতে উপযুক্ত ট্যাক্স দিয়েও আসছি। তাহলে আমাদের আমানতের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব কার এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, টাকার জন্য আমরা পিপলস লিজিংয়ে গেলে তারা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যান। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলে তারা হাইকোর্টে যেতে বলছেন। এ যেন আমাদের সঙ্গে ফুটবলের মতো আচরণ। আমরা তো আর ফুটবল নয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে এমন অনেক আমানতকারী আছেন যারা এই টাকার লভ্যাংশ দিয়ে সংসার চালান। অনেকের চিকিৎসা নির্ভর করছে এই টাকার ওপর। আমি নিজেও ক্যান্সারে আক্রান্ত। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসায়ন সিদ্ধান্তে সবকিছুই থমকে গেছে। এখন কোথায় গেলে আমাদের টাকা ফেরত পাবো?
একজন ভুক্তভোগি আমানতকারী অঞ্জন আহমেদ বলেন, পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান এমডি সামি হুদা ও পরিচালকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ আমাদের টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমরা তাদের পাঁসপোর্ট জব্দ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চাই। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এনামুল করিম নির্ঝর, নাজমুস সাকিব, রবিউল ইসলাম, মেহেদী হাসান, মোহসেনা হাসান, হোসাইন ফেরদৌস, নুসরাত জাহান, সাদিয়া নাসরিন প্রমুখ।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ের বিরুদ্ধে মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ সাধারণ আমানতকারীদের পক্ষ থেকে মোট ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি পিপলস লিজিংয়ের অপকর্মের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন অনেকে।
গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করলে ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরবর্তীতে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেয়া হয়।
পিপলস লিজিংয়ের অর্থিক অবস্থা: পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান আমানত ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণীর আমানত। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে ২০১৪ সাল থেকে পিপলস লিজিং লভ্যাংশ দিতে পারছে না। তবে আমানতের বিপরীতে কাগজে কলমে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হলেও বাস্তবে তিন ভাগের এক ভাগও নেই বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।