Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মামলা সেই ৪৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে

‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে মোদিকে চিঠি লিখে বিপাকে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতে ক্রমাগত গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা, আক্রমণের স্লোগান হিসেবে ‘জয় শ্রীরাম’-এর ব্যবহারসহ একাধিক ‘দুঃখজনক ঘটনা’ নিয়ে উদ্বিগ্ন ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি খোলা চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন রামচন্দ্র গুহ, আদুর গোপালকৃষ্ণণ, শ্যাম বেনেগল, আশিস চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, অমিত চৌধুরী, গৌতম ঘোষ, অনুরাগ কাশ্যপ, ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, মনি রত্মম, শুভা মুদগলসহ দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা। সেই ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এবার এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
ভারতে স¤প্রতি মুসলিম বা দলিত স¤প্রদায়ের লোকজনকে সংঘবদ্ধ মারধর বা গণপিটুনির যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার অনেকগুলোতেই আক্রান্তদের জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়েছিল। হিন্দু দেবতা শ্রীরামচন্দ্রের জয়ধ্বনি কীভাবে ‘মার্ডার ক্রাই’ বা ‘হত্যাকান্ডের হুঙ্কার’ হয়ে উঠলো তা নিয়ে ভারতেও বহু সমাজতাত্তি¡ক ও গবেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও।
এই চিঠি পাঠানোর বিষয়ে দুই মাস আগে বিহারের মুজাফফরপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সূর্যকান্ত তিওয়ারির কাছে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন সুধীর কুমার ওঝা নামের এক আইনজীবী। সেই পিটিশনকে ঘিরে একটি অর্ডার পাস করেন ম্যাজিস্ট্রেট। সেই অর্ডারের ভিত্তিতেই সদর পুলিশ স্টেশনে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন সুধীর কুমার।
অভিযোগে সুধীর কুমার লিখেছেন, এই চিঠি লিখে তারা দেশের মান ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিশ্রমকে খাটো করতে চেয়েছেন। তারা দেশদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করেছেন। এটা মেনে নেয়া যায় না। তাই আমি এফআইআর করেছি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আইপিসির একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করা, অস্থিরতা তৈরি করা, ধর্মীয় ভাবাবাগে আঘাত, শান্তি বিঘ্ন করার চেষ্টা প্রভৃতি।
২৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো ওই চিঠিতে নিজেদের ‘শান্তিপ্রিয় ও গর্বিত ভারতবাসী’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে তারা লিখেছিলেন, ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, মুসলিম, দলিত ও অন্যান্য সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানুষদের গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনাবলী এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এনসিআরবি (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো)’র রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি, ২০১৬ সালে ৮৪০ জন দলিতের ওপর আক্রমণ হয়েছে। একই সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে শাস্তির অনুপাত। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ধর্মকে কেন্দ্র করে ঘৃণাবশত আক্রমণের ২৫৪টি ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ৫৭৯।’
‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিটি একটি প্ররোচনামূলক ‘রণহুঙ্কার’-এ পরিণত হওয়াই যে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার অন্যতম কারণ সেই বিষয়টির উল্লেখ করে উদ্বিগ্ন স্বাক্ষরকারীরা জানিয়েছিলেন, ধর্মের নামে এমন অনৈতিক আচরণ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়। তারা লেখেন, ‘দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের কাছে রাম একটি পবিত্র নাম। দেশের সর্বোচ্চ আধিকারিক হিসেবে আপনার উচিত রাম নামের এই বিকৃতি বন্ধ করা’। সূত্র : দ্য ওয়াল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ