পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
তেল সমৃদ্ধ দেশ ব্রুনাই শ্রমবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার মাঠে নেমেছে। মানবপাচারকারী প্রতারক চক্র নির্মূলের লক্ষ্যে দেশটিতে দীর্ঘ দিন যাবত অবস্থানকারী দালালদের পাসপোর্ট বাতিল করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। মানবপাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ দালালের পাসপোর্ট বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদের বিরুদ্ধে ব্রুনাইতে অবৈধ ভিসা ব্যবসা, মানবপাচার, প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
ব্রুনাইয়ের দারুসসালামে নামে বেনামে কোম্পানী খুলে সাব-কন্ট্রাক্টের নামে চড়া দামে ভূয়া ভিসায় কর্মী নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব দালাল চক্র। চড়া অভিবাসন ব্যয়ে ভিসা ট্রেডিংয়ের সুযোগে এয়ারপোর্ট কন্টাক্টের মাধ্যমে দফায় দফায় কর্মী নিয়ে ব্রুনাইয়ের রাস্তায় ছেঁড়ে দিচ্ছে দালাল চক্র। কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার শত শত প্রবাসী কর্মী দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীর ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিচ্ছে। অসহায় কর্মীদের অভিযোগের স্তূপ নিয়ে হাই কমিশন কর্তৃপক্ষকে গলদঘর্ম পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন দালাল চক্রকে ডেকে হাই কমিশনে নিয়ে প্রতারণার শিকার কর্মীদের কাজ দেয়ার জন্য জোর তাগিদ দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঋণ ও ভিটে-মাটি গবাদি পশু বিক্রি করে নিরীহ কর্মীরা ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পাড়ি জমাচ্ছে ব্রুনাইয়ে। কিন্ত প্রলোভনে পা দিয়ে ব্রুনাই গিয়ে টাকা তুলতে না পেরে অনেকেই পথে বসছে। এতে দেশের আতœীয়-স্বজনরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
দেশটিতে স্বদেশীদের হাতে কর্মী নির্যাতনের অব্যাহত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ব্রুনাই দারুসসালমস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। দেশটিতে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।
সূত্র মতে, ব্রুনাইতে বাংলাদেশি শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হাই কমিশন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে। অতি সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্রুনাইতে দালাল চক্রের হাতে নিরীহ অসহায় প্রবাসী কর্মীদের কর্মসংস্থান না থাকা, উচ্চ অভিবাসন ব্য, কর্মীদের পাসপোর্ট কেঁড়ে নেয়া, চাকুরি ও বেতনের নামে প্রতারণা এবং কর্মীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক মাসিক চাঁদা আদায়ের খবর প্রকাশিত হয়।
হাই কমিশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশি শ্রম অভিবাসনের অনৈতিক চর্চা বন্ধ করতে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে আগারগাঁওস্থ বর্হিগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রুনাইতে অবস্থানরত কুখ্যাত ৫ দালালের পাসপোর্ট বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে ব্রুনাইস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনকে লিখিত সার্কুলার জারি করে। পাসপোর্ট বাতিলকৃত দালালরা হচ্ছে, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে জসিম সরকার (বিআর-০৭৭৩৪৬০), দেলোয়ার মো.আ. লতিফ (বিবি- ০৩২৮১৫০), সিলেটের দালাল মোহাম্মদ সুহেল আহমেদ (বিপি ০১৯৬৫২২), রবিউল হাবিবুর রহমান (বিসি-০৪১১৭৪৬) ও বি-বাড়িয়ার দালাল জাকির হোসেন (বিএম-০৪২১৮২১)। গত ২ অক্টোবর ব্রুনাইস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে পাসপোর্ট বাতিলকৃত দালালদের ভিসা বাতিল করে অনতিবিলম্বে তাদেরকে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানিয়েছে। হাই কমিশন সূত্র জানায়, দেশটিতে গা-ঢাকা দেয়া আরো বেশ কিছু দালাল-এর বিরুদ্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
ব্রুনাইয়ের ভান্ডার থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরের প্রতারণার শিকার খাদেমুল, রাজু ঘোষ, নূরুল ইসলাম, ইব্রাহিম, সুরুজ মিয়া, গিয়াস কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, টাঙ্গাইলের দালাল সাইফুলের মাধ্যমে রহিমের কোম্পানীর ভিসায় গত ১৩ জানুয়ারী ব্রুনাই এসে মাত্র ১ মাস ১৯ দিন কাজ পেয়েছি। কাজ দেয়ার কথা বললে দালাল সাইফুল মা-বাবার নাম ধরে অকথ্যভাষায় গালি-গালাজ করে। কোনো উপায় না দেখে তারা সম্প্রতি দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে লিখিত অভিযোগ পেশ করে। হাই কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অতিসম্প্রতি দালাল সাইফুলকে ডেকে অফিসে আনলে কাজ দিতে না পারায় প্রতারণার শিকার এসব কর্মীরা হাই কমিশনের ভেতরেই দালালকে গণধোলাই দেয়। হাই কমিশন এসব দালালদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দেয়ার জন্য সহায়তা দিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।