পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার সামনে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে শরীরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কলেজছাত্রী লিজা রহমান (১৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় লিজা। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে সে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, লিজার শরীরের ৬৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। মৃত্যুর ক্ষণিক আগেও একমুঠো ভাত খাওয়ার জন্য বারবার আর্তনাদ করে গেছে লিজা। বড় বোনকে বলেন- ‘আমি মারা যাচ্ছি, এরপরেও তোমরা আমাকে ভাত খেতে দিলে না’। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দুপুরে রাজশাহী মহিলা কলেজের ছাত্রী লিজা শাহ মখদুম থানায় গিয়েছিল স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে। পুলিশ তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। থানা ও ভিকটিম সেন্টার একই কম্পাউন্ডের মধ্যে। সেখানে গিয়ে লিজা শুধু নিজের নাম লিখে বের হয়ে আসে। এরপর থানার সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওইদিনই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
লিজার বড় বোন মোছা. রানী জানান, মৃত্যুর আগে সারাক্ষণ কথা বলতে চাইতো লিজা। ডাক্তারের নিষেধ সত্তে¡ও ভাত খেতে চাইতো। কিন্তু আমরা দিতাম না। কথা বললেই ও বলতো, আমি জানি আমি আর বাঁচবোনারে আপু। কিন্তু সাখাওয়াতসহ যাদের কারণে আমি মারা যাচ্ছি তাদের যেন আল্লাহ ভালো না রাখেন। বুধবার সকালেও লিজা বলছিলো, আমি মারা যাচ্ছি, এরপরেও তোমরা ভাত খেতে দিলে না। এর কিছুক্ষণ পরেই মারা যায় লিজা, বলতে বলতে বিলাপ করতে থাকেন তিনি। রানী ঢামেকে বিলাপ করতে করতে বলেন, বিয়ে করে শশুর বাড়িতে জায়গা পায়নি। থানায় গিয়েও মামলা করতে পারেনি। কোথাও কোনো আশা না দেখে ও মারা গেছে। থানায় মামলা নিলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত সবার বিচার চাই আমরা।
লিজার বাবা মো. আলম মিয়া জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। গ্রামেই বাঁশের ব্যবসা করেন তিনি। দুই মেয়ের মধ্যে লিজা ছিল ছোট। বড় বোন রানীর বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, লিজার যখন ৩ মাস বয়স তখন তার মা মফেলা বেগম মারা যায়। তখন তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েন। কোনো উপায় দেখে এক পর্যায়ে ওই গ্রামের আব্দুল লতিফের কাছে দত্তক দেন লিজাকে। সেখানেই বড় হতে থাকে লিজা।
ঢামেক হাসপাতলে লিজা আক্তারের পালক মা শিরিন আক্তার বলেন, ৩ মাস বয়সে লিজাকে দত্তক নেই। সে আমার কলিজার টুকরা। অনেক আদরে ওরে বড় করেছি। গোবিন্দগঞ্জের গার্লস স্কুল থেকে পাশ করার পরে ওকে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি করি। পড়ালেখায়ও মোটামুটি ভালই ছিলো। জানতাম না সে পড়া অবস্থাতেই একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে। কিছুদিন আগেই আমরা জানতে পারি।
লিজার খালু ইকরামুল ইসলাম বলেন, কলেজে পড়া অবস্থাতেই চলতি বছরের শুরুতে রাজশাহী কলেজের ছাত্র সাখাওয়াতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে লিজার। এরপর চলতি বছরের শুরুতে তারা নিজেরা বিয়েও করে। তবে এই বিয়ের কথা কেউই জানতো না। একসময় লিজা সাখাওয়াতকে বাড়িতে বিয়ের কথা জানাতে বললে সাখাওয়াত অনিহা দেখায়। এরপর লিজা বিয়ের ৩ মাস পর একদিন নাম্বার যোগার করে শ্বশুর শাশুড়িকে ফোন দিয়ে সব কথা বলে। বড়লোক পরিবার হওয়ায় তারা লিজাকে মেনে না নিয়ে রাগারাগি করতে থাকে। এরপর তারা সাখাওয়াতকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খান্দুরা গ্রামের বাড়িতে ডেকে নিয়ে অনেকদিন আটকে রাখে। পরে একদিন লিজা তাদের ওই বাড়িতে যায়। সেখানে তার শাশুড়ি ননদ মিলে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর লিজা রাজশাহী এসে সাখাওয়াতকে ফোন দেয়। তখন সাখাওয়াত লিজাকে বলে, তুমি আমাকে তালাক দিয়ে দাও, তুমি কতো টাকা চাও বলো, আমি পাঠিয়ে দেবো।
সর্বশেষ গায়ে আগুন দেওয়ার ১ সপ্তাহ আগেও লিজা তার শ্বশুর বাড়িতে যায়। সেখানে তাকে আবার মারধর করা হয়। পরে লিজা শাহ মখদুম থানায় যায় মামলা করতে। পুলিশ ছেলের নাম ঠিকানা জানার পরে আর মামলা নেয়নি। যদি পুলিশ তার মামলা নিতো তাহলে তো আর লিজা এই কাজ করতো না। মারাও যাইতো না মেয়েটা।
এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফয়জুল কবীরের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। গত মঙ্গলবার তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছেন। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।