Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই : ওয়াশিংটন পোস্টকে শেখ হাসিনা

বাসস | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:০৪ এএম | আপডেট : ১০:৩২ এএম, ১ অক্টোবর, ২০১৯

কারও সঙ্গে লড়াই করে নয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চান বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তিনি বলেন, আমি কারও সঙ্গে লড়াইয়ে জড়াতে চাই না। আমি এই পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ একটি সমাধান চাই। কারণ, তারা (মিয়ানমার) আমার নিকটতম প্রতিবেশী।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটন পোস্টের সাপ্তাহিক সাময়িকী টুডে’জ ওয়ার্ল্ডভিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

টুডে’জ ওয়ার্ল্ডভিউয়ের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক সাংবাদিক ঈশান থারু প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ‘রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের বোঝা হয়ে থাকতে পারে না: বলেন প্রধানমন্ত্রী’- শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে, তাহলে তো খুবই চমৎকার। তবে, আমি এই পরামর্শ দিতে পারি না। শেখ হাসিনা জানান, তিনি এই ইস্যুটি নিয়ে মিয়ানমারের কার্যত বেসামরিক নেতা অং সান সু চি’র সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

তিনি (সু চি) এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেন। তিনি আমাকে বলেছেন, সেনাবাহিনী তার কথা খুব একটা শোনে না।

ঈশান থারু লিখেছেন, ২০১৬ সালে ভারতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক এক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সু চি’র মধ্যে ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে সু চি দেশটির সামরিক বাহিনীর সিদ্ধান্তকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এমনকি তিনি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটিকে বুঝাতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিও উচ্চারণ করেন না। এ প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমি দেখতে পাচ্ছি যে তিনি (সু চি) তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।

সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধের বরাত দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, জাতিসংঘ কমিশনের একটি প্রতিবেদন সতর্ক করে দিয়েছে, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে যে ধরনের সহিংতার কারণে রোহিঙ্গারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়, এখনো সেখানে একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সরকারের একটি অংশের ওই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার জোরালো প্রমাণ মিলেছে। সেখানে ফের গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। মিয়ানমার সরকার গণহত্যা ঠেকাতে, গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করতে ও গণহত্যার অপরাধীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি এ মাসের গোড়ার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, সহিংসতা দমনে মিয়ানমার কিছুই করেনি। রাখাইনে এখনো যেসব রোহিঙ্গা আছেন, তারা ২০১৭ সালের আগস্টে সহিংসতার সময়কার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।
নিবন্ধটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের ছোট একটি দলের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দেশটির সঙ্গে চুক্তি হলেও শরণার্থীদের অধিকাংশ রাখাইনে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

রোহিঙ্গাদের পক্ষে মানবাধিকার আইনজীবীদের বরাত দিয়ে নিবন্ধে বলা হয়, শরণার্থীরা মিয়ানমারে তাদের জন্য বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত রাজ্যটিতে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। সেখানে তারা সামরিক বাহিনী ও সরকারপন্থিদের দ্বারা সহিংস হামলার আশঙ্কা করছেন, যারা তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং তাদের প্রিয়জনকে হত্যা ও ধর্ষণ করেছিল।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, নাগরিকত্ব আইনটি ১৯৮২ সালে কার্যকর হয়। এই আইনটির আওতায় রোহিঙ্গাদের অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমান অধিকার ও নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমার কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে এবং তারা ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরোচিত অভিযানকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান বলে আখ্যায়িত করে।

নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল।

তিনি গত শুক্রবার ম্যানহাটনে একটি হোটেলে টুডে’জ ওয়ার্ল্ডভিউকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত সহিংসতার বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় বোঝা, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাদের ওপর যা ঘটেছে, তা এক ধরনের গণহত্যা। তিনি পত্রিকাটিকে বলেন, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ অনেক কিছু ঘটেছে। নিরাপত্তার জন্য তারা তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে পত্রিকার নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। আজকের দেশের এই বোঝা আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে পারে। ক্রমবর্ধমান হতাশাগ্রস্ত ও কর্মহীন শরণার্থীরা মৌলবাদ ও উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন অবস্থান করলে খুব সহজেই তারা ধর্মান্তরিত হতে পারে অথবা ‘জঙ্গি গ্রুপগুলোতে’ যোগ দিতে পারে। তার সরকার গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং সেখানে টহলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের এখন থাকার জন্য স্বাগত জানানো হয়েছে। তারা আমাদের মাটিতে আছে। আর কী-ই বা আমরা করতে পারি?

এরই মধ্যে মিয়ানমারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারকে চাপে ফেলতে আর কী করা যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, তার প্রত্যাশা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সমস্যা হচ্ছে তারা অন্য কারও কথা শোনে না।

নিবন্ধে বলা হয়, গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ ‘মিয়ানমারের নিজেদের সৃষ্ট সংকট’ মোকাবিলা করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সামাজিক অবস্থার অসামর্থ্যতা বুঝতে হবে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, প্রায় দুই বছর আগে নিজ দেশের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বাধীন জাতিগত নিধন অভিযানের শিকার হয়ে সীমান্তের ওপার থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী এবং তারা সেখানকার নাগরিক নয়- মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একেবারেই গ্রহণ করেনি।
নিবন্ধে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, অন্যরা প্রভাবিত হয়নি এবং মিয়ানমার বুঝতে চাচ্ছে যে তারা সেখানে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করছে। মাহাথির বলেন, এ কারণে আমরা হতাশ। কারণ আমরা জানি, সেখানে আসলে গণহত্যা চলছে।

 



 

Show all comments
  • সালাউদ্দিন ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫১ পিএম says : 0
    মিয়ানমারকে বন্ধ করে ভারত থেকে বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব. পণ্য সমাধান দ্বারা হতে পারে, তাতে অন্য দেশের চাপ আসবে না বলে আমরা জনগণ মনে করি.
    Total Reply(0) Reply
  • স্বাধীনতা ১ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:১৬ পিএম says : 0
    ১৯৭২ সালের প্রোডাক্ট কোটেশন ভেঙ্গে মুক্ত বাজারে অর্থনীতি চালু করুন, সকল দেশের জন্য বাজার ওপেন করুন, সব পণ্যের দাম ৫০% কমে যাবে.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ