পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিবাজ ধরতে আর ওয়ান-ইলেভেন দরকার হবে না। যা করার আমিই করছি, আমরাই করব। বাংলাদেশ সময় রোববার রাত ৩টার কিছু পর নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না। চলমান অভিযানে অনেকেই অখুশি, কিন্তু সরকারের কিছু করার নেই। অভিযান চলবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন-পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে। প্রধানমন্ত্রী দেশে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এক শ্রেণির লোক দুর্নীতির মাধ্যমে ধনী হচ্ছে। এতে করে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। সৎ মানুষের পরিবারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব পরিবারের সন্তানরা তাদের বাবাকে প্রশ্ন করে, অমুক এত কিছু করতে পারে, তুমি পারো না কেন? হঠাৎ করে সম্পদশালী হওয়া মানুষের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এরা গাড়ি কেনার পর কেউ সে গাড়ি স্পর্শ করলে মারতে আসে। ব্যবসা করলে মানুষ সম্পদশালী হবে, স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা শো-অফ করে সমাজকে প্রশ্নের সম্মুখীন কেন করবে? যদি সৎভাবে আয় করতো, তাহলে এমন হতো না।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের জন্য কোনো কমিটি করা হবে কি না, জানতে চাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছি। কখন কোথায় অভিযান চলবে, এখানে বসেও আমি নির্দেশনা দিয়েছি। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, স্পোর্টসকে প্রমোট করার জন্য আমরা নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। কিন্তু এসব সুবিধা ব্যবহার করে এরা যে ক্যাসিনো নিয়ে আসবে, ভাবতেও পারিনি। এসব অবৈধ কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য নয়। তাই পদক্ষেপ নিয়েছি। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে এসেছে। আরো কী বের হয়, দেখুন। একবার যখন ধরেছি, অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিভিন্ন লোকের বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান-ইলেভেন যাতে আর না হয়, সেজন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওয়ান-ইলেভেন আর লাগবে না। অন্যায় হলে আমরাই ব্যবস্থা নেবো। অন্যায়-দুর্নীতির বিচার করতে চাই, তাই ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। নিজের দলের লোকদের আগে ধরছি, মিডিয়া এটা একটু বড় করে দেখাবে, এটাই স্বাভাবিক। ঘুষ-দুর্নীতি করবেন আবার হালাল মাংস খুঁজবেন, এটা কেমন করে হয়?
তিনি বলেন, হঠাৎ করে কেউ যদি অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তাহলে ‘মুই কী হনুরে’ ভাব চলে আসে। অসৎ উপায়ে উপার্জন করে সম্পদের শো-অফ করা, এটা হতে পারে না। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য, জনগণের সঙ্গে আমাদের মিশে চলতে হবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কুপ্রভাব যাতে দল বা সমাজে না পড়ে, সেটা আমাকে দেখতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, অনেকে অখুশি। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। সবার জীবনমান উন্নত হোক, এটা আমি চাই, কিন্তু অবৈধ পথে কাউকে সম্পদশালী হতে দেয়া যাবে না। সামাজিক গণমাধ্যমের অপব্যবহার সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অভিভাবক ও শিক্ষকদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সন্তানরা কী করছে, খবর রাখতে হবে। যারা বিভিন্ন অ্যাপস তৈরি করেন, এক্ষেত্রে তাদেরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার যতই বিতর্ক করুক, রোহিঙ্গা সমস্যা তাদের সৃষ্টি। সমাধানের পদক্ষেপও তাদেরই নিতে হবে। তাদের নাগরিক অন্য দেশে রিফিউজি হয়ে আছে, এটা তো তাদের লজ্জা, তাদের অসম্মান। জাতিগত সংঘাত তারাই তৈরি করেছে, সমাধান তাদেরই করতে হবে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ফেরত যেতে পারে, সে অবস্থা মিয়ানমারকেই তৈরি করতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে নানা হয়রানির শিকার হয়, এ প্রসঙ্গে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনার দিকে সরকারও নজর রাখে। তিনটি ঘটনার ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এরাই আবার আমাদের দেশের মানবাধিকার নিয়ে বেশি কথা বলে। প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়নে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ তোলেন এক সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিকভাবে ঠিক ঠিক তথ্য দিলে ভেরিফিকেশনে দেরি হওয়ার কথা নয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে কনসার্ট করা যায় কি না, প্রস্তাব উত্থাপন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা এমন উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করব। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি নিজে এই কমিটি গঠন করেছি। সবাইকেই কম-বেশি আমি চিনি। কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে। কানাডা শাখার কমিটি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা নিয়মিত সাংগঠনিক তৎপরতার অংশ হিসেবে তৃণমূল থেকে দল পুনর্গঠন করছি। এছাড়া দলের একটি ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। টিম গঠন করে দিয়েছি। ছাত্রলীগের কিছু পরিশ্রমী কর্মী এই কাজে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া সিআরআই’র (আওয়ামী লীগের সহযোগী গবেষণা প্রতিষ্ঠান) কিছু সদস্য তাদের সঙ্গে কাজ করছে। সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। দলও যাতে ডিজিটালাইজ হয়, আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পকে দেয়া চিঠি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। ট্রাম্প বলেছেন, খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবেন না। তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা কী করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে, ট্রাম্পকে চিঠিতে সেটাই বলেছি। তিনি বলেন, এক খুনি কানাডায় আছে। খুনিদের যারা রাখছে, তা তাদের জন্যও তো মঙ্গলজনক নয়। তাই খুনিদের ফেরত দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব দেশকেই আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।
দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ)’র ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আট দিনের সরকারি সফর শেষে আবুধাবি হয়ে দেশে ফিরছেন আজ। ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট (ইওয়াই-১০০) স্থানীয় সময় রাত ১১টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা, সোমবার) আবুধাবির উদ্দেশে জনএফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। ফ্লাইটটি আজ ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।