Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চার ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বর্তমানে ভার্চুয়াল জগতে বাংলাদেশের প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১১ ধাপে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এর মধ্যে চারটিই নতুন। এগুলো হলো- ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি, কপিরাইট আইন লঙ্ঘন, পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং অনলাইনে কাজ করিয়ে নেয়ার কথা বলে প্রতারণা। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ভুক্তভোগীদের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে ভুক্তভোগীদের ৮০ দশমিক ৬ শতাংশই আইনের আশ্রয় নেন না। গতকাল (রোববার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)। সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে গবেষণা প্রতিবেদনে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তায় অংশীজনদের প্রতি ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, নবগঠিত থিংক ট্যাংক ফর সিকিউর ডিজিটাল বাংলাদেশের আহ্বায়ক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের ডিরেক্টর (মার্কেটিং) মাহবুব উল আলম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকী ও সাহিত্য সাংবাদিক শাহরোজা নাহরিন। সঞ্চালক ছিলেন সিসিএ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুন আশরাফী।
মিজানুর রহমান খান বলেন, আমাদের মায়েরা তার সন্তানকে স্কুলে-ভার্সিটিতে নিয়ে যায়। সমাজে মেয়েদের চোখে চোখে রাখা হয়। অথচ সেটি অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে সন্তানের হাতে যখন ডিভাইস তুলে দিচ্ছে, স্মার্টফোন দিয়ে দিচ্ছে। হয়তো একটি রুমে তাকে আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে, কিন্তু তখন সে ইন্টারনেটের সুবিধা নিয়ে পুরো সাইবার জগতে বিচরণ করছে।
অপরাধের ধরন : গবেষণায় অপরাধের যেসব ধরন উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালে দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে জেঁকে বসেছে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেয়ার ঘটনা। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরও এই মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছেন অপরাধীরা। একই সঙ্গে নতুন এই সারিতে যুক্ত হয়েছে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন, পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং অনলাইনে কাজ করিয়ে নেয়ার কথা বলে প্রতারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, সাইবার অপরাধে আক্রান্তদের মধ্যে ফোনে বার্তা পঠিয়ে হুমকির শিকার হচ্ছেন ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। কপিরাইট লঙ্ঘনের মাত্রা শুরুতেই ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ দখল করেছে। অনলাইনে কাজ করিয়ে নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। জরিপের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এগুলো দেশে নতুন ধরনের অপরাধ। আর এতদিন পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এবার সামনে এসেছে এর ব্যতিক্রমী ঘটনা। অনলাইনে বিক্রিত পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।
সিসিএ ফাউন্ডেশনের ২০১৮ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘটিত অপরাধের চেয়ে এবারের জরিপে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে পর্ণোগ্রাফি। এই অপরাধ ২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশে। একইভাবে থেমে নেই অনলাইনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকির ঘটনা। এই অপরাধটি ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা কিছুটা কমলেও এখনো তা আশঙ্কাজনক। ভুক্তভোগীদের ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশই এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছেন। আগের প্রতিবেদনে এই হার ছিল ২৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। ছবি বিকৃত করে অনলাইনে অপপ্রচারের ঘটনা রয়েছে আগের মতোই। এবার এই হার ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণাও। ভুক্তভোগীদের ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এই অপরাধের শিকার, যা আগের প্রতিবেদনে ছিল ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। অবশ্য আশার কথা সময়ের সঙ্গে কমেছে অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। এবারের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এই অপরাধে ভুক্তভোগীদের হার শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত প্রতিবেদনে এই হার ছিল ৩ দশমিক ০১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়সভিত্তিক সাইবার অপরাধে আক্রান্তের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে এদের মধ্যে বেশিরভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম। পরিসংখ্যানে ভুক্তভোগীদের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিশু। ১৮ বছরের কম বয়সী এই ভুক্তভোগীদের হার ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ভুক্তভোগী ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ৪৫ বছরের বেশি ভুক্তভোগীদের হার শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তায় অংশীজনদের প্রতি ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্তকরণ, অফিস-আদালতে দায়িত্বশীল পদে সৎ ও নৈতিক জনবল নিয়োগ নিশ্চিতকরণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রশিক্ষিত জনবল বাড়ানো, সাইবার নিরাপত্তার কাজে দেশি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেয়া, সাইবার নিরাপত্তা কাজে অংশীজনদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব সেবায় দেশীয় প্রযুক্তিকে জনপ্রিয়করণ, প্রবাসী জনশক্তিকে কাজে লাগানো ও বেসরকারি উদ্যোগে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ