Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিআইবির ১৮ সুপারিশ বন্যা মোকাবেলায়

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ বন্যাকবলিত। প্রতিবছর দেশে দফায় দফায় বন্যা হয়। আর সেই দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ত্রাণ বিতরণসহ দুর্গতদের সহায়তায় ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি বলেছে, দুর্গত মানুষের সেবায় পদে পদে দুর্নীতি হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি ১৮টি সুপারিশ তুলে ধরেছে। গতকাল রোববার টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বন্যা ২০১৯ মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং ত্রাণ কার্যক্রমে শুদ্ধাচার পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয় মন্ত্রীরা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ত্রাণের টাকা খরচ করে। আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৪ টাকা করে ত্রাণ পেয়েছেন। এই গবেষণা বন্যাকবলিত ২৮টি জেলার মধ্যে ৫টি জেলায় করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবির পক্ষ থেকে যে ১৮টি সুপারিশ তুলে ধরা হয় তার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, গবাদিপ্রাণি ও সম্পদ রক্ষায় কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা কেন্দ্র তৈরি ও সম্পদ সুরক্ষার কৌশল হাতে কলমে শেখানো, বন্যায় ২৪ ঘণ্টা সতর্কবার্তা প্রচার, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধিদের প্রাধান্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণ, বর্ষা মৌসুমের আগেই বাঁধ বা বেড়িবাঁধ ও যোগাযোগ অবকাঠামো সংস্কার প্রভৃতি। টিআইবি গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছর বন্যা মোকাবেলা ও প্রস্তুতিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। সক্ষমতা থাকলেও প্রশাসনের অবহেলায় পর্যাপ্ত অর্থ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। স্বজনপ্রীতির কারণে দুস্থরা ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনটি ত্রাণের অর্থে মন্ত্রীসহ তার লোকজন বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন বলেও অভিযোগ করেছে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের বন্যায় স্থান ভেদে ৪০ লাখ মানুষ ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত পানিবন্দী ছিল। সরকারি হিসেবে এ বন্যায় সারাদেশ মোট ১০৮ জন মারা গেছেন। যদিও বেসরকারি হিসেবে এ হিসাব ১১৯ জন দেখানো হয়েছে। অথচ বন্যায় ঝুঁকি যথাযথভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। চর ও হাওর অঞ্চলে বন্যার নিয়মিত প্রকোপকে প্রশাসন স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছে।

বন্যা নিয়ে প্রশাসনের অবহেলা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত মহড়ার আয়োজন, সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক বার্তা প্রচার করা হয়নি। স্থানীয় জনগণের সম্পদ রক্ষায় ইউনিয়ন পর্যায়ে পদক্ষেপে ঘাটতি পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। বাঁধ ও বেড়িবাঁধ সংস্কার এবং নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত আশ্রয়কন্দ্রের অভাব, ত্রাণের চাহিদা নিরূপণ না করা, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ, আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিতে প্রস্তুতি না থাকা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন নিশ্চিতে ঘাটতি, বন্যাকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রস্তুতি গ্রহণে ঘাটতি, ত্রাণের অর্থে মন্ত্রীর পরির্দশন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার, শিক্ষা সামগ্রী সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণের পদেক্ষেপে ঘাটতি, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ রক্ষা, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দের ঘাটতি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব কারণে বন্যায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধির মৃত্যু হয়েছে। পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম না হওয়ায় বিপুল পরিমাণে গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা ধরনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তার গভীরে গেলে নানা ধরণের অনিয়ম-দুর্নীতি উঠে আসছে। তিনি বলেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সমন্বয় না থাকা ও তাদের অবহেলায় বন্যা প্রস্তুতি ও তা মোকাবেলায় ত্রæটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। রাজনৈতিভাবে ত্রাণ বিতরণ ও তালিকা তৈরি করা হয়েছে। স্বজনপ্রীতি করে কাউকে একাধিকবার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আবার কেউ একবারও ত্রাণ পায়নি। ত্রাণের অর্থে মন্ত্রীসহ তার লোকজন বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। অথচ অনেককে ত্রাণ না পেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে।

বন্যা মোকাবেলায় বাজেট ঘাটতির চিত্র তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চলতি বছর বন্যা মোকাবেলায় সরকারের লোকবল ও বাজেট ঘাটতি ছিল। বন্যা পরবর্তীকালে সরকারিভাবে প্রস্তুতি ও সচেতনতার ঘাটতি দেখা গেছে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এসব কারণে টিআইবির পক্ষ থেকে ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, গবেষক জাকির হোসেন খান, এ এম জুয়েল প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ