Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভিসিকে প্রত্যাহারে ইউজিসির সুপারিশ

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন গতকাল পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। এদিকে বৈরি আবহাওয়া ও নানা প্রতিক‚লতা উপেক্ষা করে গতকাল বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১১ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
ওদিকে অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে অপসারণের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠিত কমিটি। ভিসির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তদন্ত কমিটি তাকে অপসারণের সুপারিশ করে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে তোলা বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে ভিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার সুপারিশসহ তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম, সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাত হোসেন, পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মো. কামাল হোসেন এবং আইন শাখার উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ।
পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে যান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে দুদিন অবস্থান করেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা ফিরে এসে ওই দিনই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ইউজিসির কাছে জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো, ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে তার প্রমাণ হয়েছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যোগ্য নয়, তাই তাকে ভিসি পদ থেকে সরিয়ে দেয়া এবং তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে গতকাল রোববার সকাল ১১ টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তারা গত ২১ সেপ্টেম্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় তদন্ত কমিটি হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে তারা এ ঘটনার কোন প্রমাণ বা আলামত পাননি। এমনকি আহত শিক্ষার্থীরা কোন হালাকারীকে সনাক্ত করতে পানেনি এবং কোন স্বাক্ষী নেই বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। প্রতিবেদনে কমিটির সদস্যরা একটি মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছে। এ কারণে এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তারা প্রত্যাক্ষাণ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ভিসির পতন না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা চত্বরে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করেন।প্ল্যাকার্ডে ভিসির বিভিন্ন অপকর্মসহ দুর্নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী কল্যান মিত্র বলেন, ২১ সেপ্টেম্বরে ভিসির লালিত পেটোয়া বাহিনী আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকলে আমাদের দেখতে আসলেও ভিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কোন খোঁজ নেয়নি। এমনকি হামলার পরে তারা কোন মামলা পর্যন্ত করেনি। ভিসির এই আচরণ আমাদের কাম্য নয়। অপরদিকে হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রায় সকলেই ভিসির বিশ^স্ত লোক এবং তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা সন্তোষজনক নয়। সবকিছু বিবেচনা করে হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা প্রত্যখ্যান করছি।
হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, আমরা তদন্তে তেমন কোন সাক্ষী-প্রমাণ বা হামলাকারিদের শনাক্ত করতে পারিনি। ফলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি হামলার বিষয়ে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করার জন্য।
মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশক্রমে মামলা করতে গেলে সদর থানা পুলিশ জানায় এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়েছে। তাই এ ঘটনায় আর মামলার দরকার নেই।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রিয়তা দে বাদী হয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভিসিপন্থী অজ্ঞাত ১০০ জন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাত ৫০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ