Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্তীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কটকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকি উল্লেখ করে এর স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ)-এর ৭৪তম অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণের প্রথম প্রস্তাবে এ কথা বলেন।

স্থানীয় সময় শনিবার রাতে জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য বারের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন। এই বছরের সাধারণ বিতর্কের বিষয়বস্তু হলো- দারিদ্র্য বিমোচন, মানসম্মত শিক্ষা, জলবায়ু কর্মসূচি এবং অন্তর্ভুক্তিকরণে বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টার উজ্জীবন। নাইজেরিয়ার টিজানি মুহাম্মাদ-বান্দে জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে, তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার শেষ প্রস্তাবে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনেও প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তার অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাস্তবিক পক্ষেই দুঃখজনক যে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় এ বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের আশ্রয়ে রয়েছে। যারা হত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে, কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। এই সমস্যার অনিশ্চয়তার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুধাবনের অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বাংলাদেশের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু, ক্রমবর্ধমান স্থান সঙ্কট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুকে মিয়ানমার এবং তাদের নিজস্ব জনগণের সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়ানমারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় বিশেষ করে নিরাপদ অভিবাসন, উদ্বাস্তু সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, এসডিজি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের গতিশীল নেতৃত্বের জন্য তার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি বলেন, আমরা শান্তির সংস্কৃতি ধারণাকে নিয়মিতভাবে উত্থাপন করে আসছি। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে এটি জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্যে পরিণত হয়েছে। এ মাসের শুরুতে এই সভাকক্ষেই কালচার অব পিস ঘোষণার ২০ বছর পূর্তি উদযাপনের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। ফলে মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হিসেবে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন সর্বদা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এর সংগঠন এবং সনদে বর্ণিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সদা প্রস্তুত থাকব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মোতায়েনে জাতিসংঘের আহ্বানে নিয়মিতভাবে সাড়া প্রদান করে আসছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী করে তুলতে জাতিসংঘ মহাসচিবের গৃহীত উদ্যোগের প্রতি আমরা সমর্থন ব্যক্ত করছি। তার ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা অন্যতম চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসেবে ঐ উদ্যোগে শামিল হয়েছি। এছাড়া, টেকসই শান্তির ধারণাগত কাঠামো প্রণয়নে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, বহুপাক্ষিকতাবাদ বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান এবং সর্বজনীন মঙ্গলের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘই আমাদের সকল আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক।

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সদ্যসমাপ্ত ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট’-এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক যে কার্যক্রম গ্রহণের ঘোষণা এসেছে তা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অংশ হিসেবে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নকে আরও বেগবান করবে। তিনি বলেন, ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স এন্ড অ্যাডাপটেশন সংক্রান্ত জোটের অংশীদার হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা বাধাবিপত্তি ও দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা রূপান্তরযোগ্য এবং জলবায়ু-সহনশীল প্রযুক্তি ও শস্য উদ্ভাবন করেছি এবং এ বিষয়ে আমরা গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিযোজন ও সহনশীলতার জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ জন্য এটি একটি অর্থ-প্রযুক্তিগত, সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এতে খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ পানি, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই পরিবেশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন সভার ঘোষণা অনুযায়ী আমরা ঢাকায় একটি ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডাপটেশন’ স্থাপনের জন্য কাজ করছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অভিবাসন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন সফলভাবে গৃহীত হওয়ার পর, বাংলাদেশ এটি বাস্তবায়নের কার্যবিধি প্রণয়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ অভিবাসনের বিভিন্ন ইস্যুকে জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছে। অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মূলে রয়েছে জটিল ও সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। জাতীয় পর্যায়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানবপাচার সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি মানবপাচার বিষয়ক ‘পালেরমো প্রোটোকল’-এ যোগদান করেছে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তার সরকারের বিগত ১০ বছরের কিছু বেশি সময়ের দেশ শাসনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিকও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজকাল প্রায়ই ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বিশ্বে নানা অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত আর্থিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ১০ বছর ধরে সমৃদ্ধি বজায় রেখেছে। স্পেকটেটর ইনডেক্স ২০১৯ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মোট ২৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ, বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময়ে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের ব্যাপ্তি ঘটেছে ১৮৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে আমাদের জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বেড়ে চলতি বছরে দাঁড়িয়েছে ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, বলেন তিনি।

দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে তার সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকা-ের খতিয়ান তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি আয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় সাড়ে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯০৯ মার্কিন ডলার হয়েছে। একইসঙ্গে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ২০০৫-০৬ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে আমাদের বিনিয়োগ জিডিপির ২৬ শতাংশ থেকে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সেই সাথে বেসরকারি বিনিয়োগ ৫ গুণ বেড়ে হয়েছে ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৯ গুণ বেড়ে হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে তার সরকার এবং তার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভীষ্ট লক্ষ্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যে অঙ্গীকার ও যৌথ আকাক্সক্ষা তার প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। যা আমাদের জনগণের আস্থা অর্জনে সাহায্য করেছে।’

‘যে কারণে আমরা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছি এবং আমাদের ২১ দফার রাজনৈতিক অঙ্গীকার মূলত জনগণের কল্যাণের নিমিত্তে গৃহীত অঙ্গীকার’, যোগ করেন তিনি।
‘দারিদ্র্য’ ও ‘অসমতাকে’ উন্নয়নের দু’টি প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে আমাদের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ যা ২০১৮ সালে হ্রাস পেয়ে ২১ শতাংশ হয়েছে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ২৪ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

তার সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক জনবান্ধব প্রকল্পসমূহ যেমন- ‘আমার গ্রাম আমার শহর’, ‘আশ্রয়ণ’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ শীর্ষক প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশকে পেছনে ফেলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সমাজের অনগ্রসর ও অরক্ষিত অংশের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। অর্থ, খাদ্য, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় ও সমবায়-এর মাধ্যমে এই সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

‘আমাদের জিডিপির ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে ব্যয় করা হচ্ছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সমতা এবং বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তির মাইলফলক অর্জনের পর এখন মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে মনোনিবেশ করেছে। এ লক্ষ্যে ই-শিক্ষা এবং যোগ্য শিক্ষক তৈরির ওপর গুরুত্ব প্রদান করায় বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার ৫০ শতাংশ থেকে হতে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

বছরের প্রথম দিনে সারাদেশের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়ার সরকারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগসহ শিক্ষার সম্প্রসারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রকার বৃত্তি দেয়ার তথ্য উপস্থাপন করেন তিনি। যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ মায়ের কাছে উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

সকল নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে সারাদেশে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা এবং সেখান থেক বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিতরণসহ প্রতিবন্ধী, অটিজম এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ এবং হতদরিদ্রদের বিভিন্ন ভাতা এবং সহযোগিতা প্রদান এবং সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রায় সম্পৃক্ত করার বিশেষ পদক্ষেপসমূহও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সারাদেশে ৫ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৬০০ সরকারি ই-সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি এবং টেলি-ঘনত্ব ৯৩ শতাংশ অতিক্রম করেছে। চলতি বছর আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, যা প্রত্যন্ত এলাকায় সম্প্রচার সেবা সম্প্রসারণ সহজতর করেছে এবং উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমুদ্র সীমার সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বাংলাদেশের জন্য সুনীল অর্থনীতি তথা ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনার আরেকটি নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে নতুন চারটি প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম।

আজ কিছু প্রস্তাব আবার পেশ করছি :
১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও আত্তীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে। ২. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে। ৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মনে করি বহুপাক্ষিকতাবাদ বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান এবং সার্বজনীন মঙ্গলের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘই আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই আশাই ব্যক্ত করেছিলেন। একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হিসেবে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন সর্বদা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।



 

Show all comments
  • Sabbir Ahmed ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    জাতিসংঘের অধিবেশন আর বাংলা ছবির মহরত অনুষ্ঠান প্রায় একই। অনেক অনেক ভালো কথা শোনা যায়, শেষ পর্যন্ত কী হয় সবারই জানা...
    Total Reply(0) Reply
  • Tawmin Hasan ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    এত কারটেসী বাদ দিয়ে ১০/২০ হাজার রোহিংগা কে আর্মি ট্রেনিং দিয়ে সাথে সুচাইডাল বোম্ব দিয়ে পাঠিয়ে দেন দেখবেন সমস্যা সমাধান
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Asiful Hoque ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    আর যে পরিমান অন্যায় অত্যাচার হয়েছে, তারও বিচার করতে হবে। এসব অন্যায়ের রেকর্ড রাখা অত্যাবশ্যক।
    Total Reply(0) Reply
  • Na Yem ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    তিনি বলেছেন এই সমস্যা মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে, মিয়ানমার কিভাবে সমাধান করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Sikandar Badshah ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    আদেও কি সমস্যার সমাধান হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোছাঃ মুক্তা মনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে দোয়া করি রোহিঙ্গা সংকট সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে আমাদের উপরে খাস রহমত নাজিল করুণ
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim Hossain ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    শুভ জন্মদিন, দেশ ও দেশের মানুষের ভালবাসায় দীর্ঘায়ূ হন, আর এই দুর্নীতি বাজদের শায়েস্তা করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি উন্নত ও সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিবেন।প্রতিটি বাংলাদেশির মনে গহিনে অমর হয়ে থাকবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Abdul Kadir ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের একার পক্ষে এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খোজে বের করা সম্ভব হতে পারে না ।
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Abdullah ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    Myanmar is worlds one of the largest refugee-producing country, Bangladesh and other surrounding countries of Myanmar is the victim of Myanmar.
    Total Reply(0) Reply
  • Balel Ali Balel ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    রোহিজ্ঞাদের আগে না পাঠিয়ে এইকানে যে এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংন্থা কাজ করে তাদের ওখানে পাঠিয়ে এইখানে যে রকম সাহায্য করছে ঐ কাজ করার পরিকল্পনা করা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ