Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মহালয়া পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পাঁচদিনের এই উৎসবের প্রাক্কালে গতকাল শনিবার মহালয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় চ-ীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মন্দির ও পূজাম-পগুলোতে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। চ-ীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন, চ-ীপূজা এবং ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা। ভক্তিমূলক সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনা সভা ছিল দিনের আনুষ্ঠানিকতার অংশ। অনেক ভক্তই তাদের মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতির জন্য প্রার্থনা করে তর্পণ করেন।
আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল পূজা। ৮ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও এলাকাভিত্তিক পূজা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ১০০ ম-পে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীতে ২৩৭টি ম-পে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা, যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি ম-পে ও ২০১৭ সালে সারাদেশে ২৯ হাজার ৭৪টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও রাজধানীতে ২০১৮ সালে ২৩৪টি ও ২০১৭ সালে ২২৫টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, এবার পূজাম-পের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩২ হাজারের কাছাকাছি হতে পারে। সব জায়গার তথ্যই আমরা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এ বছরের সার্বিক পূজা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ৩০ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ সম্মেলন করব।

সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়নী মুনির কন্যা রূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গা আসছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে, যাবেনও ঘোড়ায় চেপে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী ঘোড়ায় চড়ে এলে তার ফল হয় ‘ছত্রভঙ্গসরঙ্গম’, অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার প্রকাশ পাবে। রাজনৈতিক উত্থান, পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর প্রভাব বাড়বে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভোরে পঞ্চপ্রদীপ জ্বালিয়ে মহালয়া উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ। এরপরেই সেখানে দেবী আরাধনা করা হয়; যেখানে উপস্থিত ছিলেন দেবীভক্তরা। ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামন্ডপে চ-ীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। ত্রিভঙ্গচরণ ব্রহ্মচারীর চন্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে ইয়াচন্ডী অর্চনা ছিল শুরুতে। এ সময় দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা আবাহন ও ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সকালে মহালয়ার মূল আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে ঘট স্থাপন করে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজা করা হয়। ঢাকেশ^রী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী পূজা পরিচালনা করেন। পরে মন্দিরের নিজস্ব পুকুরে গত বছরের দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। রামকৃষষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরেও ছিল অনুরুপ আনুষ্ঠানিকতা। সেখানে চন্ডীপাঠ ও চন্ডীপূজা ছাড়াও আবাহন সঙ্গীত পরিবেশিত হয়েছে।

রাজধানীর বনানী পূজা ম-পে সকালে মহালয়ার আয়োজন করা হয়। গুলশান-বনানী সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবার এই ম-পে পূজা আয়োজনের একযুগ পূর্তি হলো। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য আমরা প্রস্তুত। গতকাল শনিবার মহালয়ার মাধ্যমেই মূলত শুরু হয়ে গেলো এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। এসময় মন্দিরে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। আমাদের প্রতিমা তৈরির কাজও শেষের পথে। এখন ৪ তারিখের অপেক্ষা। সবকিছু সুন্দরভাবে হবে বলেই আমরা আশা করছি। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয় বলেও জানান তিনি।

গুলশান-বনানী সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুবল চন্দ্র দাস বলেন, মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। এক যুগ পথ পরিক্রমার এই ক্ষণে আমরা আশা করছি এবারও দর্শনার্থীরা মায়ের দর্শন করতে আসবেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে বসুন্ধরা এলাকায় আয়োজিত পূজাম-পে বিশেষ আরাধনার মাধ্যমে মহালয়া পালন করা হয়েছে। ভোরে আরাধনার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহন করার পাশাপাশি এখানেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শ্রীবাস রয় অপু বলেন, আমাদের পূজাম-পে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পবিত্র সরকার বলেন সার্বিক পূজা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। নিরাপত্তা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট।

এছাড়া রাজধানীর স্ব্বামীবাগের লোকনাথ মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ^রী পূজামন্ডপ এবং খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের (সসকস) পূজাম-পসহ রাজধানীর অন্য মন্দির ও ম-পেও ভোরে চন্ডীপাঠ, আবাহনী সঙ্গীত, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। দিনটি উপলক্ষে বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন স্যাটেলাইটগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোতে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ