Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে : শেখ হাসিনা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন : রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়া দুঃখজনক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৫৩ এএম

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমারের দমন অভিযানে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অনিশ্চয়তা যে আঞ্চলিক সংকটের মাত্রা পেতে যাচ্ছে, তা বিশ্বকে উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতোদিনেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়া দুঃখজনক।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালে নিউইর্য়কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি অনুরোধ করবো, এই সমস্যার অনিশ্চয়তার বিষয়টি যেন সবাই অনুধাবন করেন। এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বাংলাদেশের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এটি বাস্তবিকপক্ষেই দুঃখজনক যে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, যদিও রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে, কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। ক্রমবর্ধমান স্থান সঙ্কট ও পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এ এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়নামারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমার ও তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই এ সংকট সমাধান সম্ভব উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজগৃহে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। রোহিঙ্গাদেও প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে নতুন চারটি প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ-দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম।
আজ কিছু প্রস্তাব আবার পেশ করছি:
১. রোহিঙ্গাদেও টেকসই প্রত্যাবাসন ও আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূণ প্রতিফলন দেখাতে হবে।
২. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে।
৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মনে করি বহুপাক্ষিকতাবাদ বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান এবং সার্বজনীন মঙ্গলের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘই আমাদের সব আশা-আকাঙক্ষার প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই আশাই ব্যক্ত করেছিলেন।
একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হিসেবে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন সর্বদা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ