Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনের মধ্যস্থতায় ‘ইতিবাচক’ মোড়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে আনুষ্ঠানিক সংলাপে চীনকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ‘ত্রিপক্ষীয় যৌথ কার্যনির্বাহী’ ফোরাম গঠনে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার।
জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য চীন প্রক্রিয়াটিতে যুক্ত হওয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা ইতিবাচক মোড় নেবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকের পর গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সংকট সমাধানে কাজ করতে যৌথ কার্যনির্বাহী ফোরাম গঠন করতে তিন দেশ সম্মত হয়েছে। প্রস্তাবটি বৈঠকে তুলেছিল চীন। মিয়ানমার শুরুতে রক্ষণশীল মনোভাব দেখালেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। তিন দেশ যৌথভাবে সরেজমিনে নেমে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে বলে তিনি জানান।
এটাকে সংকট সমাধানের দুই বছরের আলোচনায় ‘ইতিবাচক’ অগ্রগতি ও ‘গুণগত’ পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, এটা এই অর্থে ইতিবাচক যে আমরা বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে পারছি। এর ফলে মিয়ানারের উপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন শক্তিশালী দেশ। দেশটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সম্পৃক্ত হওয়ার অর্থ হলো- কী ঘটছে ও কেন প্রত্যাবাসন পেছাচ্ছে সেবিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল এখন তাদেরকেও প্রশ্নের মুখে ফেলবে। এতদিন শুধু বাংলাদেশকেই এসব প্রশ্ন শুনতে হয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টির পর থেকে মিয়ানমার বলে আসছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তত। কিন্তু তাদের কথায় রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় গত মাসে প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় দফা চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। রোহিঙ্গাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যদিকে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য বাংলাদেশকে দুষছে।

এ সংকটের সুরাহার লক্ষ্যে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মেেধ্য এ বৈঠক হয়। চীনের সক্রিয় সম্পৃক্ততায় বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ। যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক মহল চীনের উদ্যোগকে প্রশংসা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বরং এটা সহায়ক।

এই বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলকে কেন্দ্র্র করে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার জন্য তারা এ সংকট সমাধানে আগ্রহী ছিল। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয় সমাধান না করে যে নিজের স্বার্থ হাসিল করা যাবে না, তা চীন ভাল করেই বোঝে।

চীনের সংবাদমাধ্যম শিনহুয়া জানিয়েছে, গত সোমবার জাতিসংঘের সদর দপ্তরে চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে বৈঠকে তিন দফা সমঝোতা হয়। এর অন্যতম হলো- রাখাইন রাজ্য ও মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য মৌলিক পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়তার লক্ষ্যে চীন-মিয়ানমার পাশাপাশি চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাসহ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করা।

এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিগগির উদ্যোগ নেওয়া এবং তিন দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক নির্দেশনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ এগিয়ে নিতে ‘চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষে স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের মন্ত্রী ইউ কিয়ো টিন্ট সোয়ে ছাড়াও মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রানার বার্জেনারও অংশ নেন।



 

Show all comments
  • Shamim Ahmed ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। আপনি এগিয়ে যান শুভকামনা আপনার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohd. Abid ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    দেখাই যাচ্ছে আপনারা কতটা পাশে আছেন আমাদের!
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Hussain ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    আমেরিকার সাথে আসন্ন বানিজ্য যুদ্ধ মোকাবেলায় এখন বাংলাদেশের সাথে একটু ভাব জমাতে চাইছে চিনারা।
    Total Reply(0) Reply
  • Nurun Nabi ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
    China can only be a game changer on Rohyanga resettlement.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ