Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বগুড়ায় কুচি করা টাকা নিয়ে তুলকালাম

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন কান্ড!

মহসিন রাজু,বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বগুড়ায় ময়লার ভাগাড়ে পাওয়া এক ট্রাক কুচি কুচি ছেঁড়া টাকা নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। গতকাল রাতের কোনো একসময় বগুড়া পৌরসভার ট্রাকে করে টাকার বর্জ্যগুলো শাজাহানপুর উপজেলার ইউপির চান্দাই গ্রামে একটি ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বস্তায় বস্তায় টাকা পড়ে থাকার তথ্য ছড়িয়ে পড়লে হৈ চৈ পড়ে যায় চারিদিকে।

চলমান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে ভীত হয়ে টাকাগুলো রাতের আঁধারে ফেলে দেয়া হয়েছে এমন গুজবে সেখানে উৎসুক মানুষের ঢল নামে। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে শেষ পর্যন্ত এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্জ্য বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। টাকার কুচিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষিত তবে এগুলো না পুড়িয়ে কেন খোলা স্থানে ফেলে দেয়া হলো সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তি জানান, আগে এই টাকাগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হতো। বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ আইন অনুযায়ি এখন আর নোটগুলো আগুনে পোড়ানো হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিদ্যমান আইন মান্য করতে যেয়ে অচল ও পরিত্যক্ত ঘোষিত টাকার কুচিগুলো কোথাও সিটি কর্পোরেশন কোথাও পৌরসভার মাধ্যমে সেগুলো ডেস্ট্রয় বা গার্বেজ ডাম্পিং পয়েন্টে ফেলে আসা হয় ।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া শাখার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পৌরসভার স্যানিটারি বিভাগের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায়। স্যানিটারি বিভাগের ড্রাইভার মাছুমের বাড়ি চান্দাই গ্রামে হওয়ায় সে ট্রাক বোঝাই করে টাকার কুচিগুলো গ্রামের ভাগাড়ে সেগুলো ফেলে দেয়। তবে নিয়মাফিক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে দিনের বেলায় সর্বসমক্ষে করার কথা থাকলেও তা না করায় এ নিয়ে রহস্য তৈরী হয়।

কৌতুহলী লোকজন তাদের গ্রামে ভাগাড়ে ৫০০, ১০০০ টাকার নোট কুচি কুচি করে কাটা অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার যুগ্ম ব্যবস্থাপক মো. শাজাহান জানান, ফেলে দেয়া টাকার টুকরোগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়ার শাখার বাতিলকৃত, অপ্রচলনযোগ্য নোটের টুকরো। এগুলো মেশিন দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে, যা কখনই জোড়া লাগানো যাবে না। বগুড়া পৌরসভাকে এই ছেঁড়া টাকাগুলো ধ্বংস করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল।

বগুড়া পৌরসভার বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা রাফিউল আবেদীন জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার যুগ্ম ব্যবস্থাপক স্বাক্ষরপত্রে তাদের বাতিলকৃত, অপ্রচলনযোগ্য নোটের টুকরো পৌরসভার বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়ার চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠি অনুযায়ী পৌরসভার ট্রাকে করে এক ট্রাক নোটের টুকরো ফেলে দেয়া হয়। তারা আগে কখনো এ ধরনের বর্জ্য অপসারণ করেননি। যে কারণে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে না পুঁতে ফেলতে হবে সে ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই। ফলে ময়লার ভাগাড়ে টাকার বর্জ্যগুলো ফেলা হয়।

এদিকে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে বস্তা বস্তা ভর্তি বা ট্রাকভর্তি টাকা পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে এমন খবর প্রচার হওয়ায় সবাই মনে করে জুয়া ও টেন্ডার সিন্ডিকেটের লোকজনদের কেউ হয়তো অভিযানের ভয়ে নিজের বা নিজেদের কাছে রাখা বেহিসেবি টাকা ওইভাবে রাতের আঁধারে ফেলে রেখে গেছে । এ নিয়ে শুরু হয় গুজব ও নানা বিভ্রান্তি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ব্যাংকিং) সরকার আল ইমরান জানান, আগে এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে নির্দিষ্ট একটি স্থানে পুড়িয়ে ফেলা হতো। কিন্তু পরিবেশ দূষণ হওয়ায় টুকরোগুলো আর পোড়ানো হচ্ছে না। এখন ময়লা হিসেবে পৌরসভার মাধ্যমে বস্তায় ভরে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এভাবে ছেঁড়া টাকার বর্জ্য ফেলার ঘটনা এটিই প্রথম।

বিপুল পরিমাণের টাকা গুলো এই ভাবে ডাম্পিং করার ঘটনাকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বগুড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ চরম অবিবেচনাপ্রসূত কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। অনেকে এটাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কান্ড জ্ঞানহীন কাজের দৃষ্টান্ত বলেও উল্লেখ করেন ।



 

Show all comments
  • Kabir Ahmed ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কান্ড জ্ঞানহীন কাজের দৃষ্টান্ত
    Total Reply(0) Reply
  • Rana Masud ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৬ এএম says : 0
    kisu bolar nai
    Total Reply(0) Reply
  • Billal Hossain ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৭ এএম says : 0
    এই কাজ আরও সচেতনতার সাথে করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Mehedi ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৯ এএম says : 0
    ধন্যবাদ ভাই, সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Parvez Khan ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:২০ এএম says : 0
    দায়িত্বপ্রাপ্ত দুইজনেরই শাস্তি হওয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • হারুন ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৮ পিএম says : 0
    এসব উপরের নির্দেশেই হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ