পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্ণ, ধর্ম, রাজনৈতিক বিশ্বাস, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিবেচনা ছাড়াই সুস্বাস্থ্য উপভোগ করা সকল মানুষের মৌলিক অধিকার। গতকাল নিউইর্য়কের স্থানীয় সময় সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইকোসোক চেম্বারে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : সমতা, সার্বজনীন উন্নয়ন এবং সবার জন্য সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় কো-চেয়ারের বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যাপক সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। এই পুরস্কার গ্রহণের পর গণমাধ্যমে জানানো প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দেশবাসীর প্রতি উৎসর্গ করেছেন।
নিউইয়র্কে গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ইমিউনাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (জিএভিআই) বোর্ড সভাপতি ড. এনগোজি অকোনজো ইবিলা এবং সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেথ ফ্রাংকিলন বার্ক্লে।
ড. এনগোজি অকোনজো তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশংসা করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ওই সম্মাননা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই পুরস্কার আমার না। এটা বাংলাদেশের জনগণকে আমি উৎসর্গ করলাম। ১৯৯৬ সালে আমি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসি, তখন পরিস্থিতি এ রকম ছিল না। প্রথমে আমাদের দেশের মানুষের একটু আপত্তি ছিল। কিন্তু আমি নিজে মানুষের কাছে যাই। নিজে ভ্যাকসিন খাওয়াতে শুরু করি। এভাবে করার ফলে সারাদেশে মানুষের মধ্যে এমন একটা চেতনা জাগ্রত হয়েছে যে তারা নিজেরাই এখন টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এই চেতনা ধরে রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, টিকাদান কর্মসূচি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের সাফল্যের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সার্বজনীন উন্নয়নের অনুপস্থিতি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এবং সামাজিক ঐক্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতা দরকার। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচি (ইউএইচসি) অর্জনের অভিন্ন লক্ষ্যের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ভিত্তি। ২০৩০ সালের মধ্যে ইউএইচসি ও এসডিজিস অর্জনে প্রতিটি দেশের জন্য স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন কৌশল প্রণয়নে কার্যকর বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও প্রবেশাধিকার ছাড়া শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জন যথেষ্ট নয়। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত সার্বজনীন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ২০৩০ এজেন্ডা গ্রহণের সময় আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সব মানুষ এবং সম্প্রদায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে এবং কেউ এ সুবিধা থেকে বাদ পড়বে না। যদিও কিছু বড় অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এখনো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। কেবল স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের কারণে প্রতি বছর ১০০ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গরিব লোকজন’ সাধারণত বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেবা নিতে পারে না। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে। সমাজের দরিদ্র মানুষদের সাশ্রয়ী ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মাধ্যমে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবার সমতা আনা যেতে পারে। স্বাস্থ্যে সঙ্কটময় পরিস্থিতির কারণে মানুষকে যেন দরিদ্রতর হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায় আমাদেও সে চেষ্টা করতে হবে।
গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি মাসে ১০ মিলিয়নের বেশি মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেয়। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণ হতে পারে স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক পর্যায়ে। শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় প্রথম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হতে পারে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা হতে পারে কার্যকর ও সার্বজনীন উপায়।
সাড়ে ১৬ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি অনেক বেশি গতি পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে এসেছে সাফল্য। ১৯৯০ সালে যেখানে দেশের ৬০ শতাংশ শিশু টিকা পেত, এখন তা ৮২ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রথম টিকা নেয়ার হার প্রায় ৯৯ শতাংশ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অব্যাহত সমর্থন ও ভূমিকা রেখে চলায় ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সসহ অন্য অংশীদারদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও স্কুলে এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার বিষয়ে আমরা বরাবরই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ এর মাধ্যমে আমরা দেশকে এমন একপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত হবে।
টিকার আওতা সম্প্রসারণের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) অধীনে আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জাতীয় ডিটিপি-৩ (ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার ও হুপিং কাশি) কাভারেজ ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এমসিসি ১ কাভারেজ ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৭ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে সব জেলায় ভ্যাকসিনের কাভারেজ বেড়ে হয়েছে ৮২ শতাংশের বেশি। নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যেও টিকাদান কর্মসূচি ছড়িয়ে দেয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার আগে অনুষ্ঠানে প্রশংসাপত্র পড়ে শোনান নাইজেরিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইয়েলা।
পত্রে তিনি বলেন, এই পুরস্কার তাদের জন্য, যারা শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য জরুরি টিকাদানে উদ্যোগী হয়েছেন এবং কোনো শিশু যাতে বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন। শুধু টিকাদান কর্মসূচি নয়, শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নও শেখ হাসিনা একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা জিএভিআই বা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে বলেন, টিকাদান কর্মসূচিতে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি একজন সত্যিকারের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি শিশুদের সুস্থভাবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।