Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের বিরুদ্ধে ভারত একা প্রতিযোগিতা করতে পারবে না

অন্তর্বাস থেকে গাড়ি বিক্রিতে ভাটা-২

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কিছু নির্মাতা এখন নতুন গাড়ি কেনার কর কর্তন অথবা পুরনো গাড়ির বদলে নগদ টাকা কর্মসূচির মাধ্যমে সড়ক থেকে পুরনো গ্যাস চালিত গাড়ি তুলে নিতে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্রথম মেয়াদে অর্থনৈতিক মন্দার প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ উপেক্ষা করার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। গত মে মাসের পুনর্নির্বাচনে তিনি ভ‚মিধস বিজয় অর্জনের পর বহু অর্থনীতিবিদ আশা করেছিলেন যে তিনি স্বল্পমেয়াদি প্রণোদনা প্যাকেজ অনুমোদন করবেন ও কৃষি দারিদ্র্য ও ভ‚মি সংস্কারের মত দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করবেন। তার বদলে তিনি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উপর অপ্রত্যাশিত কর বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির উপর আঘাত হেনে তাদের ভারতীয় শেয়ার ও বন্ড ডাম্পের দিকে ঠেলে দেন। রুপির মূল্য হ্রাস পায়।

অতি সম্প্রতি মোদি প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছে। গত শুক্রবার কর কর্তন ছাড়াও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন প্রতিশ্রুতি দেন যে সরকার গাড়ি নির্মাতাদের সাহায্য করতে পদক্ষেপ নেবে ও অবকাঠামো ব্যয় বৃদ্ধি করবে। তিনি সরকারি মালিকানাধীন সকল ব্যাংককে আরো ঋণ প্রদানের নির্দেশ দেন। সরকার বিনিয়োগকারীদের উপর নতুন কর বাতিল করে।

ভারতের বস্ত্র শিল্প দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এ শিল্পে সাড়ে চার কোটি লোক কর্মরত। কৃষি খাতের পর এটাই ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ কর্মসংস্থান ক্ষেত্র। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকের এক বিকেলে তিরুপুরের পাইকারি, অতিরিক্ত মজুদ ও কিছুটা খুঁতযুক্ত কাপড়ের বাজার ছিল জনশূন্য। মোসেস বললেন, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর হচ্ছে উৎসবের ঋতু। এ সময় দোকান মালিক ও বিতরণকারীরা সাধারণত সারাদেশ ঘুরে শার্ট ও প্যান্টসহ সব পোশাক এবং কাপড়-চোপড় সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু এখন কেউ আসছে না।

এ অঞ্চলের তুলা থেকে সূতা প্রস্তুতকারী স্পিনিং মিলগুলো উৎপাদন হ্রাস করছে। যদিও চীনা টেক্সটাইলের উপর আমেরিকার বর্ধিত শুল্ক আরোপ করার কারণে বিশ^ বাজারে তুলার মূল্য কমে গেছে। মালিকরা বলছেন যে তার ফলে সুতার দামও কমে গেছে। ফলে মিলগুলোর জন্য মুনাফা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে পুরুষদের অন্তর্বাস তৈরী করে ডলার ইন্ডাস্ট্রিজ। গত ত্রৈমাসিকে তাদের বিক্রি ৪ শতাংশ কমে গেছে যা তাদের জন্য এক আঘাত। ডলারের প্রতিষ্ঠাতাদের একজনের ছেলে গৌরব গুপ্ত বলেন, আমি এ রকম মন্দা দেখিনি। একজন ক্রেতা যেখানে ছয় জোড়া পোশাক কিনতেন, তিনি এখন চার জোড়া কিনছেন।

এখনো ডলার-এর ইতালির তৈরী কাটিং মেশিনগুলো সপÍাহের ৬ দিনই গেঞ্জি ও অন্তর্বাস তৈরীর জন্য রঙিন কাপড়ের শিটগুলো টুকরো চলেছে। প্রায় ১০০ কর্মী তৈরী সামগ্রী বাছাই করেন। তারপর সেগুলো বেল করেন। এরপর কন্ট্রাক্টররা সেগুলো ফিনিশড গার্মেন্টসে নিয়ে সেলাই করবেন।
ডলার এখন পর্যন্ত কাউকে ছাঁটাই করেনি। তবে কর্মঘণ্টা কমানো হয়েছে এবং ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন কমেছে। গুপ্ত বলেন, তার কারখানাগুলো উত্তর ভারতের শীতল শীতকালের জন্য থার্মাল অন্তর্বাস তৈরীর দিকে যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে উৎসবের সিজন তাদের বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।

২২ বছর বয়স্ক কর্মী শম্ভু কারওয়ার কাপড় কাটার আগে তা মসৃণ করেন। তিনি বলেন, পূর্ব ভারতে তাদের পারিবারিক বেকারিতে কাজ করার চেয়ে এটা অনেক ভালো কাজ। ডলার তাকে মাসে ১২ হাজার রুপি (১৬৭ ডলার) ও থাকার জায়গা দেয়। ভর্তুকি মূল্যে কিছু খাবারও পাওয়া যায়।

তবে ডলারের অন্তর্বাস সেলাই করা কন্ট্রাক্টর শিবা এক্সপোর্টের অবস্থা ভালো নয়। দোতলা কারখানা ভবনটিতে অধিকাংশ সেলাই মেশিন অলস অবস্থায় রয়েছে। শিবার মালিক ভি. মুরুগেসান বলেন, তিনি দু’জন বড় খদ্দের হারানোর পর, যারা ছিল ইতালি ও ফ্রান্সের ক্লদিং ব্র্যান্ড, গত ৬ মাসে তার দরজিদের তিন-চতুর্থাংশকেই ছাঁটাই করেছেন। তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশে যে দামে কিনতে পারছে তিনি তার সাথে সঙ্গতি রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশে মজুরি অনেক কম।

মুরুগেসান বলেন, এটা একটা বায়ার’স মার্কেট, অর্ডার আসে ধীর গতিতে। তিনি তার মত ক্ষুদ্র রফতানিকারকদের ভর্তুকি দিতে বা অন্য সমর্থন দিতে সরকারের প্রতি আবেদন জানান। ডলার বলছে যে তাদের পরিবেশক ও খুচরো বিক্রেতারা প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ পাচ্ছেন না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে ট্যাক্স রিফান্ড পরিশোধে সরকারের দীর্ঘ বিলম্ব অর্থ সঙ্কট আরো বৃদ্ধি করছে। এখন অবস্থা সামাল দিতে ভিন্ন পথ গ্রহণের চেষ্টা করছে ডলার। ডলারের কর্পোরেট স্ট্র্যাটোজির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শশি আগরওয়াল বলেন, আমরা ভিন্ন পন্থায় কাজ করার চেষ্টা করছি।

সস্তা রুপি এবং গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে আমদানিকৃত চীনা টেক্সটাইলের উপর আমেরিকার উচ্চ শুল্ক মূল্যের কারণে ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আরো বেশি পোশাক রফতানির সুযোগ এসেছে। এটাই এখন থিওরি। কিন্তু তিরুপুরের এক গার্মেন্ট নির্মাতা আরটি ডবিøউ রেনেসাঁস এশিয়ার পরিচালক সি. আনন্দ বলেন, ভারত একা বাংলাদেশ বা ভিয়েতনাম বা জর্দান ও হাইতির মত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের রফতানি মূল্যের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না।

তিনি বলেন, আপনাকে বাজারে নতুন কিছু আনতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তার কোম্পানি একটি আমেরিকান কোম্পানির ওয়ার্ক ইউনিফর্মের জন্য তুলার সুতা ও ফ্যাব্রিক প্রক্রিয়াকরণের এমন এক পন্থা বের করেছে যাতে ৫০ বার ধোলাইর পরও তা টেকসই থাকে। তবে নতুন উদ্ভাবনও যথেষ্ট নাও হতে পারে।
বিজয় ভরতানন আগে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কোয়ালিটি কন্ট্র্রোল ম্যানেজার ছিলেন। এখন তিনি তিরুপুরে একটি ক্ষুদ্র মুদি দোকান চালান। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগে অবস্থা আরো খারাপ হবে। তিনি বলেন, তার দোকানে বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। বহু লোক বাকিতে খাবার কিনছে। তিনি বলেন, আগামী মাসে দিওয়ালির সময় বহু লোক বাড়ি ফিরবে, তারা আর ফিরে যাবে না। (শেষ)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ