পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মহিলা নেত্রী, সচিব, বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অভিনয় জগতের মানুষ সবার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোতে। ক্যাসিনোতে কেউ ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে এসে বের হতো খালি হাতে আবার কেউ অল্প টাকা নিয়ে ক্যাসিনো খেলে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বের হতো। এছাড়া মদ, মেয়ে মানুষ নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠত উপরে বর্ণিত দেশের নামীদামি ব্যক্তিরা।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবের অভ্যন্তরীণ এসব চিত্র ভিডিওসহ বিস্তারিত প্রমাণাদি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দিয়েছে। এসব দেখে প্রধানমন্ত্রী অভিযান চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এসব অপকর্মকারীরা যে দলেরই হোক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও বলে গেছেন, তিনি দেশে না থাকলেও অভিযান যেন চলতে থাকে। এছাড়া ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নালিশ করে কোনো কাজ হবে না। ছাত্রলীগের পর যুবলীগ ধরেছি, একে একে সব ধরবো।’ ফলে চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে এসব অপকর্মকারীদের পালানোর কোনো পথ নেই এবং অস্বীকার করে কিংবা নালিশ বা তদবির করেও বাঁচার সুযোগ থাকছে না।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে তারা ক্লাবগুলো নজরদারি করেছেন। এসবের কর্মকান্ডের বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণাদি সংগ্রহ করেছেন। এরপর ক্লাবের সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ এবং তাদের সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দিয়েছেন। এসব দেখে প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন এবং এসবের মূল উৎপাটন করতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, যাদের নেতৃত্বে দেশ ও সমাজ পরিচালিত হয় তাদের এই করুণ অবস্থা দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি রাতদিন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে টাকা দিয়ে দেশের উন্নয়ন করছেন, অথচ দলের নাম ভাঙিয়ে দলের বদনাম করে কিছু লোক কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পর্যাপ্ত বেতন বাড়িয়েছেন সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে, অথচ তারা নিজেরা আনন্দ-উল্লাসে মেতেছে। সবাই মিলে কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে পুরো সমাজকে নষ্ট করছে এবং এ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে দেশ ও সমাজ নষ্টের এই উপকরণ ক্লাবের ক্যাসিনো, জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বলেছেন এবং কারো কোনো কথা না শুনতেও নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে বলে গেছেন, যে অভিযান তিনি শুরু করেছেন তা যেন চলতে থাকে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, ক্লাবে যাদের যাতায়াত ছিল, ক্যাসিনো খেলতো তাদের বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেয়া হবে।
গোয়েন্দারা জানান, ক্লাব ও ক্যাসিনোতে বর্তমান ও সাবেক এমপিদের অনেকের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ক্যাসিনোতে এমপিদের সরাসরি প্ররোচনা ছিল। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা, মহিলা নেত্রী, সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্যাসিনো খেলতেন। বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ক্যাসিনো খেলতেন। ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ধনীদের সন্তান কেউই ক্যাসিনো খেলা বাদ রাখেননি। অনেকে ব্যাগভর্তি টাকা এনে শূন্য হাতে ফিরতেন। আবার অনেকে জুয়ায় জিতে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে যেতেন বলে ভিডিও রয়েছে।
গোয়েন্দারা আরো বলেন, ক্লাবের যেসব নেতা বলছেন তারা ক্লাব পরিচালনা করলেও ক্যাসিনোর বিষয়টি সম্পর্কে তারা জানতেন না, ভিডিও দৃশ্যে তা মিথ্যা প্রমাণিত। যারা ক্যাসিনোতে জড়িত তারা বেশির ভাগই গা-ঢাকা দিয়েছে। অনেকে দেশের বাইরে চলে গেছে। তবে ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ থাকায় তাদের ধরতে কোনো সমস্যা হবে না এবং একে একে সবাইকে ধরা হবে বলে জানান গোয়েন্দারা।
সম্প্রতি ফকিরের পুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবসহ রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালানোর মাধ্যমে মদ, জুয়া আর ক্যাসিনোতে কোটি কোটি টাকা উড়ানোর খবর বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসে ক্লাবের অন্তরালে খেলার উন্নয়নের নাম করে ক্যাসিনোর খবর।
এসব পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে উঠে আসে যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের নাম। অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন ফকিরেরপুরে ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ। এ অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি কাকরাইলের অফিসে অবস্থান করলেও গত রোববার থেকে তিনি সেখানে নেই এবং তার মোবাইল বন্ধ। নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এদিকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি ও কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ অভিযানের কারণে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরছেন না।
এদিকে ক্লাবের গডফাদার হিসেবে নাম বেরিয়ে আসছে আরো অনেকের। যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সভাপতি মহিউদ্দিন মহি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইকবাল সান্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের চৌধুরীর নাম।
গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা যায়, ক্যাসিনোর আসরে শুধু জুয়াই খেলা হতো না, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে কোন ঠিকাদার কাজ পাবে, কমিশন কে কত পাবে সে বিষয়ে দেনদরবার হতো। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, বিভিন্ন প্রজেক্টের পরিচালক হওয়ার আলাপ-আলোচনার জন্য নিরাপদ স্থান ছিল ক্যাসিনো। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সব তথ্য যাওয়ায় শঙ্কায় দলের অনেক নেতা। ভেতরে ভেতরে চলমান শুদ্ধি অভিযানের সমালোচনাও করছেন অনেকে। এ অভিযানে দল দুর্বল হচ্ছে বলেও মতামত দেয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। এছাড়া অনেকেই নানাভাবে এ অভিযানকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন ফেসবুকে লেখেন, এই দেশে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ ছিল। চালু করেছিল জিয়াউর রহমান। বিভিন্ন ক্লাবের খেলাগুলো সর্বজনবিধিত দীর্ঘদিন ধরে। ক্যাসিনো আসে ’৯০-এর দশকে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ও ক্যাসিনো ছিল, এখনো আছে। বিএনপি-জামায়াত এসবকে উৎসাহিত করেছে, আর আওয়ামী লীগ এদেরকে ধরেছে। নিজের দলের লোকজনকেও ছাড় দিচ্ছে না। আর পার্থক্যটা এখানেই। এমন না যে সাবেক বিএনপি নেতারা এই সরকারের আমলে এসে এসব শুরু করেছে। বাস্তবতা হলো, তাদের আগের অপকর্মগুলোর শেল্টার নিতে তারা কারো না কারো শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে। আর শেখ হাসিনার সরকার সেসব গডফাদারসহ অপকর্মকারীদের নিধন অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযানে সহায়তা করে সুবিবেকবানের পরিচয় দিন। অপকর্মকারীদের দোসর হবেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।