পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমি মন্ত্রীর লোক। তোমরা আমার গ্রুপে থাক। খাও-দাও ফুর্তি করো। কোথাও কোন সমস্যা হলে আমাকে বলো। থানা পুলিশ তোমাদের কিছু করতে পারবে না’- এভাবে কিশোরদের নিজের গ্রুপে টেনে নিয়ে বিপথগামী করতেন নূর মোস্তফা টিনু। তাদের দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করতেন নিজের মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, দখল-বেদখলসহ নানা অপকর্ম। ‘নেতা’ হওয়ার আশায় স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরাও তার পাল্লায় পড়ে অপরাধী হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ও আশপাশের এলাকায় কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম হয়েছে যুবলীগ নামধারী এই ক্যাডার টিনুর ছত্রছায়ায়।
এই ‘বড়ভাইকে’ অস্ত্রসহ পাকড়াও করার পর এসব তথ্য জানিয়েছেন এলিট বাহিনী র্যাবের এক কর্মকর্তা। রোববার গভীর রাতে নগরীর শুলকবহর থেকে টিনুকে পাকড়া করা হয়। উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল গুলি। নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বিতর্কিত যুবলীগ ক্যাডার টিনুকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে কিশোর অপরাধী চক্রের গ্যাং লিডার ‘বড়ভাইদের’ গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তারা। টিনুকে পাকড়াও করে তার বাসা ও আখড়া ঘেরাও করে র্যাবের অভিযানের খবরে চট্টগ্রামের কিশোর অপরাধী চক্রের হোতারা গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে।
মহানগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে কিশোর অপরাধ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কতিপয় বিতর্কিত হাইব্রিড নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে পাড়ায় মহল্লায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। তারা খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি, ইভটিজিংসহ ভয়ানক সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবে এবিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা। সরকারের হাইকমান্ড থেকে কিশোর-তরুণদের যারা বিপথগামী করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা আসে। ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের সমান্তরালে বড়ভাইদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু হয়েছে।
অভিযানের শুরুতে গত শুক্রবার নগরীর কাজির দেউড়ি হ্যাং আউটে জুয়ার আসর থেকে ২৫ কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় কিশোরদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিশোর গ্যাংসহ অপরাধী ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বা গডফাদার হিসেবে পরিচিতরা আড়ালে চলে যান। এতে করে পাড়ায়-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত কমে আসে। নগরীর কয়েকটি এলাকায় ঘুরে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনে পাড়া মহল্লা দাপিয়ে বেড়ানো কিশোরদের উপদ্রব চোখে পড়ছে না। আগে যেসব মোড় ও চত্বরে তাদের জটলা থাকতো এখন সেসব এলাকা অনেকটা ফাঁকা। স্থানীয়দের ধারণা অভিযানের ভয়ে অনেকে আড়ালে চলে গেছে।
কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা কমে আসছে জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহাবুবর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, আপনাদের (মিডিয়া) ভ‚মিকা এবং পুলিশের তৎপরতার ফলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। কিশোরদের আড্ডাস্থলে পুলিশ নিয়মিত হানা দিচ্ছে, আবার অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে। যারা শিশু-কিশোরদের বিপথগামী করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। কিশোর অপরাধ দমনে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ইস্যুতে সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও সরব হতে হবে।
নগরীর ডবলমুরিং, হালিশহর, পাহাড়তলীসহ কয়েকটি এলাকায় একাধিক কিশোর অপরাধের ঘটনা ঘটে। সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল ইসলাম বলেন, পাড়ায় মহল্লায় গড়ে উঠা কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা রোধে পুলিশ কাজ করছে। কোন অপরাধ করলে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর অকারণে যারা রাস্তায় আড্ডা দিচ্ছে তাদের সতর্ক করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। অভিযানের পাশাপাশি মোটিভেশন কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এর ফলে আগের মতো অবস্থা নেই।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায়ও রাজনৈতিক বড়ভাইদের মদদে ছোটবড় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্রুপ তৎপর রয়েছে। অনেক গ্রেফতার হয়েছে, সম্প্রতি একজন কিশোর পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারাও গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই এলাকায় কিশোর গ্রুপের অনেকে এখন গা ঢাঁকা দিতে শুরু করেছে। বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, কিশোর অপরাধীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় রোববারও দুই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোরদের থানায় এনে তাদের বাবা-মায়ের কাছে তুলে দেয়া হচ্ছে।
কে এই টিনু
একসময় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। এখন কোন পদে না থেকেও নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দেন। এ পরিচয়ে চকবাজার ও আশপাশের এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে টিনু। পুলিশ জানায়, এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ফুটপাত থেকেও চাঁদাবাজি করে টিনু ও তার সহযোগীরা। মাদক ব্যবসা, বাড়ি দখল থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলে টিনু। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে আধিপত্য বিস্তারে বেশ কয়েকবার ছাত্রলীগের অপর দুটি গ্রুপের সাথে টিনু গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপকর্ম করলেও থানা-পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিত না। বছরখানেক আগেও তিনি নিজেকে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার এক ভাই বিএনপি এবং এক ভাই জামায়াত নেতা।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান ইনকিলাবকে বলেন, টিনু ও তার সহযোগী জসিমকে গ্রেফতারের পর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ৬৭ রাউন্ড গুলিসহ একটি শর্টগান উদ্ধার হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য, অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখানো, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, কিশোর অপরাধী চক্র গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা আছে টিনুর বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, ২০০৩ সালে একটি একে-২২ রাইফেলসহ গ্রেফতার হয় টিনু। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল নগরীর পাঁচলাইশ থানায় আরও দুটি মামলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।