পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো চালানো ও টেন্ডার ভাগিয়ে নেয়ায় কারা সহযোগিতা করেছে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করছে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীম। বিভিন্ন প্রকপ্লের পিডি, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালী ব্যীক্তদের ম্যানেজ করে কিভাবে নিজেদের রাজত্ব তৈরি করেছে সে বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে তারা। এ দু’জনের অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্তদের মধ্যে ১০৭জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে একটি সংস্থা। জড়িতরা যাতে পালাতে না পারে সে জন্য সর্তক রয়েছেন সংশ্লিস্ট সংস্থার কর্মকর্তারা। এছাড়া অস্ত্র ও হলুদ রঙ্গের ইয়াবাসহ গ্রেফতারকৃত কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দারা। দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাসিনো ও টেন্ডার থেকে যারা নিয়মিন চাঁদা আদায় করতো এদের মধ্যে ১০৭জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন প্রজেক্টের পিডিদের নাম রয়েছে। এরই মধ্যে ওই তালিকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সকল ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে ওই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের সম্পক্তিসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করছে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে খালেদের তথ্য নিয়ে মাঠে গোয়েন্দারা
রিমান্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। ক্যাসিনো চালাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্মকর্তা তাকে সহযোগিতা করতেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তার দেয়া তালিকা নিয়ে তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এমন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ডিএমপির সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মতিঝিল, রমনা, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা বিভাগের অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন ক্যাসিনো ও জুয়ার আসরের টাকার ভাগ নিতেন। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তাদের টাকার ভাগ দিয়েই এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যুবলীগ নেতা খালেদ। ওই তালিকায় ওসি, এসি, এডিসি ও ডিসি ছাড়াও পুলিশের কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার নামও বলেছেন তিনি। এমনকি পুলিশের একজন কমিশনারের নামে খালেদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা নেয়া হতো বলে খালেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের নতুন কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ক্যাসিনো পরিচালনায় পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন কর্মকর্তাদের। একই সাথে তিনি ডিএমপির সব থানার ওসি ও ক্রাইম ডিভিশনের কর্মকর্তাদের জুয়া ও ক্যাসিনো বন্ধের কঠোর নির্দেশনাও দেন।
খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদকারী ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ক্যাসিনো কারবারে যুবলীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছেন খালেদ। এছাড়া পুলিশ ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ক্লাব-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন বলে দাবি করেছেন তিনি। ওই কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে খালেদের সব বক্তব্য রেকর্ড করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে কাউকে জড়ানো বা অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য দিচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
র্যাবকে টাকার প্রস্তাব জি কে শামীমের
শুক্রবার ভোর থেকেই যুবলীগ নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের নিকেতনের অফিস ঘিরে রাখে র্যাব। এক পর্যায়ে র্যাবের কর্মকর্তাদের ১০ কোটি টাকা ঘুষ প্রস্তাব করেন তিনি। তবে সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে অভিযান চালায় র্যাব। জব্দ করা হয় নগদ টাকা, এফডিআরসহ মাদক। শুধু তাই নয়, এ সময় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও ৪জন মন্ত্রীকে ফোন করেন শামীম। এ সময় একজন মন্ত্রী ফোন ধরে র্যাবের কথা শুনে সাথে সাথেই মোবাইল ফোন রেখে দেন। অপর তিনজন ফোন রিসিভ করেননি।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, জি কে শামীম তার অফিস ও বাসায় অভিযান না চালাতে এবং গ্রেফতার এড়াতে র্যাবকে ১০ কোটি টাকার ঘুষ প্রস্তাব করেছিলেন। র্যাব আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে শামীম গণপূর্ত অধিদফতরের ২০ জন সাবেক সরকারি কর্মকর্তার নাম বলেছেন, যাদের মাসে ২-৫ লাখ টাকা দিতেন তিনি। এর বদলে তারা শামীমকে ঠিকাদারির কাজের টেন্ডার পেতে সাহায্য করতেন। প্রাাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ যুবলীগ নেতা সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানান, ঠিকাদারির কাজ পাইয়ে দিতে তিনি দুই কর্মকর্তাকে এখন পর্যন্ত শত কোটি টাকা দিয়েছেন। সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে শামীম ও সাঙ্গপাঙ্গোরা সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিতেন। সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদে শামীম দাবি করেছেন যে দুই প্রকৌশলী ছাড়াও যুবলীগের অন্তত দু’জন শীর্ষ নেতাকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতেন তিনি।
বাইরে যেত ক্যাসিনোর টাকা
দেশে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির টাকা ছাড়াও ক্যাসিনোর টাকার ভাগ যেত বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের কাছে। সে টাকা পাঠানো হতো ওমানের মাসকট ব্যাংকের মাধ্যমে। ওমানে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম সেখান থেকে টাকা তুলে জার্মানিতে থাকা জিসানের কাছে পৌঁছিয়ে দিত। ঢাকা থেকে এই আয়োজন করে দিতেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম গং। সবসময় একই রুট অনুসরণ করা হতো না। কখনো কখনো সিঙ্গাপুর হয়েও টাকা যেতো জিসানের কাছে। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
গোয়েন্দারা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ নানা ধরনের তথ্য দিতে শুরু করেছেন। যা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। খালেদের কাছ থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব তথ্য যেন পাওয়া যায় সে ব্যাপারে সতর্ক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানায় সূত্রটি। খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের তথ্য এসেছে।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) শারমিন জাহান বলেন, খালেদের বিরুদ্ধে গুলশান ও মতিঝিল থানায় দুটি মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেগুলোর কাগজপত্র আমরা এখনও হাতে পাইনি। কাগজপত্র হাতে এলে তা পর্যালোচনা শেষে আমরা তদন্ত শুরু করব। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কোন দেশের কোন ব্যাংকে টাকা গেছে সেটিও তদন্ত করে বের করা হবে।
বালিশ দুর্নীতিতেও জিকে শামীমের নাম
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পের বালিশ দুর্নীতিতে জিকে শামীম জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। জানা গেছে, রূপপুরের গ্রিণ সিটি আবাসন প্রকল্পে তিন হাজার কোটি টাকার কাজে বেশির ভাগ কাজ করেছে জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ৫ পার্সেন্ট কমিশনের বিনিময়ে ৩-৪টি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি কাজও দেয় সে। তবে এদের মধ্যে যেসব ঠিকাদারের কাজ পছন্দ হতো না সেগুলো অন্য ঠিকাদারদের দিয়ে দিতেন মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে। সূত্র জানায়, কমিশনের বিনিময়ে সাজিন ট্রেডার্স (পাবনার সুজানগরে) এনডিই (ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লি.), মজিদ এন্ড ব্রাদার্স ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকটি কাজ পাইয়ে দেন জিকে শামীম। ব্যাপক কমিশন বাণিজ্যের কারণেই মূলত রূপপুরে ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে করে বালিশ, চাদর ও ইলেকট্রিক সামগ্রী সরবরাহে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। একটি বালিশের মূল্য ধরা হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। প্রতিটি বালিশ ২০ তলায় উত্তোলনের ব্যয় হয় ৭৬০ টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে পাবনা গণপূর্ত বিভাগের অসাধু প্রকৌশলীরাও ভাগ পান। ঠিকাদরী কাজে সে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিলেও অনেককেই ভাগ দিয়ে কাজ করতেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।