পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক সময়কার আন্ডার গ্রাউন্ড সন্ত্রাস কবলিত ভয়ঙ্কর জনপদ হিসেবে খ্যাত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে কিশোর গ্রুপ ও গ্যাং স্টার এখন সক্রিয়। চলতি চিংড়ি চাষ ও আসন্ন আমন মৌসুমে কিশোর অপরাধীরা রীতিমত হট কেক। বিভিন্ন হত্যাকান্ড ছিনতাই, মাদক বেচা কেনা, অপহরণ, ঘের ও ভূমি দখল সকল ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। কিশোর অপরাধীরা অনেকেই রাজনৈতিক সেল্টারে তাদের অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি দৌলতপুর থানাধিন পশ্চিম সেনপাড়ার বাসিন্দা মো. মোস্তফা ফরাজীর ছেলে মো. জনি ফরাজী (১৮)কে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কিশোর গ্যাং এর সদস্য রাব্বি, লিমন ও কালা জনিসহ অন্যান্যরা হত্যা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সৈয়দ মোশারফ হোসেন জানান, নিহত জনিসহ আসামিরা সবাই কিশোর সন্ত্রাসী। তারা একটি সংঘবদ্ধ চুরি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি চক্রের সদস্য। ১৫ দিন পূর্বে দিঘলিয়া থেকে তারা একটি স্বর্ণের চেইন ও ২ হাজার টাকা ছিনতাই করে। উক্ত টাকার ভাগ না দেয়ার জন্য জনিকে খুন করা হয়। ঘটনার দিন পূর্বপরিকল্পিতভাবে জনিকে গাঁজা খাওয়ানোর কথা বলে তারা দৌলতপুর থানাধীন সিএসডি গোডাউনের পূর্ব পাশের নদীর পূর্বপাড় দিয়ে দিঘলিয়া থানাধীন এসআর ইটভাটার পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারে নিয়ে যায়। সেখানে রাব্বি ও লিমন জনির হাত ধরে রাখে এবং কালা জনি বেøড দিয়ে গলায় পোচ দিয়ে শ্বাসনালী কেটে দেয়। পরে তারা ভৈরব নদে জনিকে ফেলে দিয়ে চলে আসে। সকল খুনিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গত সোমবার আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
সম্প্রতি খুলনা পাবলিক কলেজে কনসার্ট চলাকালে সমবয়সী বন্ধুদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভির রাজিন নিহত হয়। রাজিন হত্যার পর গ্রেফতার হয় সাব্বির, রিফাত ও রিজভি। এদের মধ্যে রিফাত ও রিজভি ‘ডেঞ্জার বয়েজ’ গ্রুপের সদস্য। আর সাব্বির ‘গোল্ডেন বয়েজ’ গ্রুপের। ফাহিম ‘গোল্ডেন বয়েজ’ গ্রুপের অন্যতম সদস্য। হত্যাকান্ডের পর র্যাবের হাতে আটক হয়ে রয়েল ও মিতুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ সব তথ্য জানায়। পরে র্যাব ও পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে অন্যরা।
এছাড়া গেল মাসে বন্ধুদের হাতে খুন হয় রূপসা হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম। এছাড়া মহানগরীর আরও বেশ কয়েকটি স্কুলে বখাটে যুবকদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এ সব কিশোরদের দিয়েই এখন এলাকায় অধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলছে।
গত কয়েক মাসে খুলনায় ধর্ষণ, খুন, ব্লাকমেইলিং ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ১৩ কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু মামলার আসামি হওয়া সত্তে¡ও বয়স কম থাকায় তাদের অধিকাংশই জামিনে বেরিয়ে গেছে।
পুলিশ জানায়, মহানগরীর গিলাতলা বিহারি কলোনি থেকে সম্প্রতি তিন বখাটে কিশোর গ্রেফতার হয়। এরা ওই এলাকায় বেড়াতে আসা তিন মাদরাসা ছাত্রকে জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছিল। ওই কিশোরদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে।
এর আগে মহানগরীর সোনাডাঙ্গায় ধর্ষণ ও এই ঘটনা ভিডিও করে ব্লাকমেইলের ঘটনায় আবির, টুটুল ও রাজু নামের তিন কিশোরকে আটক হয়। এদের মধ্যে মামলার মূল আসামি রাজুর বয়স মাত্র ১৫ বছর। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করলেও আদালত তা মঞ্জুর করেনি।
এদিকে খুলনায় কিশোর গ্যাংগুলো পুরোদমে সক্রিয়। কোন কোন গ্রুপের রয়েছে রাজনৈতিক শেল্টার। এই গ্যাং এখন রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। চলতি চিংড়ি চাষ মৌসুমে ঘের দখলেও রয়েছে তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। এছাড়া আমন ধান মৌসুমে জমি দখলে সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা।
অন্যদিকে চায়ের দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়ক এমনকি বিভিন্ন আবাসিক এলাকার আশপাশে কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক দলের সদস্য ঘোরাঘুরি করে। চায়ের দোকানগুলোয় সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি আড্ডায় মেতে থাকে। আর স্কুল-কলেজের ছুটির সময়ও এদের উৎপাতে অস্থির হয়ে ওঠেন সেখানে আগত অভিভাবকরা। পাশাপাশি রাস্তাঘাট এমনকি আবাসিকের নিরিবিলি পরিবেশকে তারা মুহূর্তে অশান্ত করে তোলে। এমনই নানা অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে খুলনায় ইভটিজিং, মাদক সেবন, চাঁদাবাজি ও খুনসহ নানা অপরাধে কিশোরদের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। গ্রুপ করে বখাটে কিশোররা এসব অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় এ ধরনের অসংখ্য কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
নগরীর বাস্তহারা এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, কিশোরদের কিছু গ্রুপ মুজগুন্নি, বয়রা, বাস্তহারার, সোনাডাঙ্গা, গল্লামাড়ী বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। একেক জায়গায় একেক গ্রুপ বসে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন করে আসে। চায়ের দোকানে ভিড় করে হইহুল্লোড় করেই ক্ষান্ত হয় না কিশোর গ্যাংয়ের ওই দলগুলো। এরা নিয়মিত চলন্ত রিক্সা ও ইজিবাইকে মটরবাইকের মাধ্যমে ছিনতাই করে থাকে।
খুলনা সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, কিশোররা এখন ছোট অপরাধ থেকে বড় ধরনের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সন্তানদের প্রতি অভিভাবকরা নজর রাখতে পারছেন না। এছাড়া নৈতিক স্খলন, সামাজিক অস্থিরতা ও মাদকের সহজলভ্যতা কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।