পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যশোরের ঝিকরগাছা কৃঞ্চনগর গ্রামের ওয়াপদাহ পাড়ার কিশোর নূর জালাল ওরফে ছোট বাবুর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় পাশের উপজেলা শার্শার গোগার কালিয়ানী মাঠে। লাশের পাশে পড়ে ছিল মোবাইল। লাশ উদ্ধারের পর মোবাইল ট্যাকিং করে ঝিকরগাছা মোবারকপুর গ্রামের কিশোর তুর্য, অক্ষর, জাফর, শাহিন ও সাজ্জাদ নামের ৫জন কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় মাদক সেবন নিয়ে গোলযোগে সহপাঠী বাবুকে চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় তারা। ঘটনাটি চলতি বছরের ৩১ জুলাই এর। একজন পুলিশ কর্মকর্তা ওই কাহিনী বর্ণনা করে বলেন, যশোরে এ ধরণের ঘটনা কিশোররা বেশ কয়েকটির জন্ম দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। একসময় সশস্ত্র বিপ্লব ও গোপন রাজনীতির নামে সীমান্তবর্তী যশোরের আন্ডারওয়ার্ল্ড ছিল উত্তপ্ত। অস্ত্রবাজ চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীরা মাটি কাঁপিয়ে বেড়াতো। জড়াতো খুনোখুনিতে। রুদ্ধশ্বাস আতঙ্ক ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে অস্ত্রবাজরা করতো অর্থ বাণিজ্য। সেই অধ্যায়ের ইতি ঘটেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে, সেটি হচ্ছে কিশোর অপরাধ।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটাতে বুক কাঁপছে না কিশোর অপরাধীদের। মাদকের ভয়াবহতায় কিশোর গ্যাং কালচারের প্রবনতা বাড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে কিশোর অপরাধ দমনে। লোমহর্ষক হত্যাকান্ডসহ নানা অপরাধ ঘটনা উদঘাটন করে কিশোর গ্যাং এর কাহিনী শুনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মনে প্রশ্ন জাগে কিশোরদের পক্ষে কী করে হত্যাসহ ভয়ঙ্কর সব ঘটনা সম্ভব হয়?
যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, বেনাপোল, শার্শা, কেশবপুর, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া ও যশোর সদরের বিভিন্ন গ্রাম পাড়া মহল্লায় একশ্রেণির কিশোর নানা ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যশোর শহরের ধানপট্রিতে কালাম, রেলগেট এলাকায় রমজান, সন্যাসী দীঘিরপাড়ের নয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপথে যাওয়া ৪/৫ কিশোর মিলে গ্যাং গড়ে তুলে অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে।
যশোর কিশোর সংশোধন কেন্দ্র যেটির বর্তমান নাম শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র তার সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানান, কেন্দ্রে মোট ৩শ’ ৫৩ কিশোর বন্দি রয়েছে। তার মধ্যে যশোরের হত্যা মামলায় ৮জন, মাদক মামলায় ৪জন, ডাকাতি মামলায় ১জন, চুরি মামলায় ১জন, নারী শিশু নির্যাতনে ২জন ও অবৈধ অনুপ্রবেশে ৩জন। একই কেন্দ্রের কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, যশোরের বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় প্রতিদিন গড়ে ২/৩ কিশোর যশোর কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে ঢুকছে। পরে তাদের অনেকে জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে।
সুত্র জানায়, গত দেড় বছরের ব্যবধানে যশোর শহরে ঘোপের আওয়ামী যুবলীগ নেতা লিটন হত্যা, রেলগেটে রুবেল হত্যা, সন্যাসী দীঘিরপাড়ের পারভেজ হত্যা, শার্শার বাবু হত্যা, চৌগাছায় শিশু ধর্ষণসহ অন্তত ১৪টি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটিয়েছে কিশোররা। এর বাইরে ছোটখাটো ঘটনা তো আছেই। কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে দীর্ঘদিন কিশোর অপরাধীদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে কেন্দ্রের কর্মকর্তা জানান, উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। ভয়ঙ্কর অপরাধীদের মতোই অনেক কিশোর গ্যাংএর সদস্যদের স্বভাব চরিত্র। তাদের কথাবার্তা আচার ব্যবহারে তাদের কেউ কেউ এতটা ভয়ঙ্কর যে কল্পনা করা কঠিন। সংশোধন কেন্দ্রের ভেতরেও ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
সুত্রমতে, বিভিন্ন সময় আটক কিশোর অপরাধীদের মুখ থেকে রেব হয়েছে একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা, পাড়া মহল্লার বড় ভাই, মাস্তানরা তাদের পৃষ্টপোষক।
যশোর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রসঙ্গ ক্রমে বললেন, চৌগাছার আলোচিত শিশু ধর্ষণের প্রধান আসামি ১৬ বছরের শিব রায়কে ২৭আগস্ট পিবিআই আটক করে। সে পিবিআইকে জানায়, পড়াশুনার খরচের টাকা ও মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনে ইউটিউবে পর্ণ ছবি দেখে কুকর্মের বাসনা জাগে। তাই প্রতিবেশী এক শিশুকে একাকী পেয়ে ধর্ষণ করি। পিবিআই কর্মকর্তা বিভিন্ন মামলার তদন্তের অভিজ্ঞতায় বলেন, অভিভাবকদের কেয়ারলেস, আগের মতো পাড়া মহল্লার মুরব্বী ও বড় ভাইদের শাসন না থাকা, শিশু-কিশোরদের হাতে মোবাইল ও অসৎসঙ্গসহ নানা কারণে শিশু কিশোরসহ উঠতি বয়সের ছেলেরা বেপথে ধাবিত হচ্ছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন উইংএর মূখ্য লিঁয়াজো অফিসার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ জেলার ৯টি থানা এলাকায় কিশোর অপরাধীদের আপডেট তালিকা তৈরি করছে। পুলিশ ব্যাপক তৎপর কিশোর অপরাধ দমনে। জেলার কোথাও যাতে তারা মাথাচাড়া দিতে না পারে তার জন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে। তার কথা, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় কিশোর গ্যাং এর সম্পৃক্ত থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যশোরের প্রেক্ষাপটে বলতে পারি কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে ঝিকরগাছার আলোচিত সহপাঠী হত্যাকান্ড উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে ২৪ঘন্টার মধ্যে। গ্রেফতার করা হয় ৫ কিশোরকে। তারা ঘটনার আদ্যপান্ত স্বীকারও করে।
যশোর সরকারি এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাদক নিয়ন্ত্রণ কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর সুধীর রঞ্জন নাথ বলেন, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে কিশোরদের ইমোশনালভাব দিনে দিনে কিশোর অপরাধ বেড়েই চলেছে। পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ শিথিল, মাদক, অসৎ সঙ্গ অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। কিশোর অপরাধ দমনে ধমীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে ছোটবেলা থেকে। এর ভয়াবহ পরিণতির কথা কিশোরদের বুঝাতে হবে। টিনএইজের ছেলেদের হাতে স্মার্ট ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে। মোবাইলে ভালো এবং মন্দ দুটোই থাকে। উঠতি বয়সের ছেলেরা মন্দটার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। পরিবার, পাড়া মহল্লায় পাস্পরিক সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন সৃষ্টি করতে হবে। সমাজকে সঠিকভাবে টিকিয়ে রাখতে কাটাতে হবে সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।