Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন ভিডিও সৃষ্টি করছে নানা প্রশ্ন

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে নতুন বিতর্কও শুরু হয়েছে। গত বুধবার বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ প্রদান করেছেন। আগামী ৩ অক্টোবর মামলাটির চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। চার্জশিটের সাথে পুলিশ একটি ভিডিও ক্লিপও জমা দিয়েছে। তবে ঘটনার আরো দুটি ভিডিও ভাইরাল হলেও তা আমলে নেয়নি পুলিশ।

মিন্নির আইনজীবীদের দাবি ওই দুটি ভিডিও ক্লিপ আদালতে উপস্থাপন করলে পুলিশের দাবি মতে এ হত্যাকান্ডে যে মিন্নি জড়িত নয় তা প্রমাণে সহায়ক হতে পারে বিধায় তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি এ হত্যা মামলার বাদী নিহত রিফাতের পিতা মিন্নিকে প্রধান স্বাক্ষী করে এজাহার করলেও পরবর্তীতে তাকেই অভিযুক্ত করে সংবাদ সম্মেলনসহ মানববন্ধনে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাকে অনেকেই মনগড়া বলে দাবি করেছেন।

অপরদিকে তৃতীয় ভিডিওটি ভাইরাল হলে পুলিশ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপরে ১৬৪ ধারায় মিন্নির দেয়া জবানবন্দি প্রকাশ করেছে একটি মহল। যাতে মিন্নি ও নিহত রিফাতের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমনকি মিন্নি কার স্ত্রী পরোক্ষভাবে সে প্রশ্নও উঠছে। তবে মিন্নির বাবা মেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বারবারই বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুলিশ লাইনে ডেকে নিয়ে টানা ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয় মিন্নিকে। সেখানেও ৪৮ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজাতে থেকে পুলিশের শেখানো জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছে মিন্নি।

রিফাত হত্যাকান্ডে তদন্ত শেষে পুলিশ দুটি চার্জশিট জমা দিয়েছে। এর মধ্যে মিন্নিসহ ১৪ জনের নামে একটি চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। অপর ১০ অপ্রাপ্ত বয়স্কের বিরুদ্ধে একটি ভিন্ন চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে। যাদের বিচার হবে শিশু আইনে। এসব শিশু-কিশোর বর্তমানে যশোরে কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে।

এদিকে উচ্চ আদালতে মিন্নি জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হবার পরে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যাতে দেখা গেছে ২৬ জুন সকাল ১০টা ২১ মিনিটে রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বুকে আগলে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এসময় এক যুবক রিকশাটির দিকে ছুটে এসে আবার জরুরি বিভাগে ছুটে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে আসে। ইতোমধ্যে আরো কয়েকজন সেখানে জড়ো হয়। অচেতন রিফাতকে স্টেচারে শুইয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বরগুনা হাসপাতালের সামনে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দুটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এর যেকোন একটিতে ধারণ করা ভিডিওটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রিকশা চালক দুলাল জানান, ওইদিন বরগুনা শহরের কলেজ রোডে যাত্রী নিয়ে গেলেও মারামারির কারণে লোকের ভীড়ে আর সামনে আগাইতে পারিনি। যাত্রী নামিয়ে রিকশা ঘুরাবার সাথে সাথেই রক্তাক্ত একটি ছেলে আমার রিকশায় উঠে বলে ‘চাচা আমাকে হাসপাতালে নিয়া যান’। এটাই ছিল ছেলেটির শেষ কথা। ছেলেটির গলা ও বুকের বাম পাশে ক্ষত থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। রিকশা চালক দুলাল রিফাতের গায়ের ছেড়া জামা টেনে সেসব স্থানে চেপে ধরে তাকে বলে, আপনি একটু চাইপ্পা ধরেন। এসময় একটি মেয়ে দৌড়ে এসে রিকশায় উঠে ছেলেটিকে ধরে বসে। এরপরে দ্রুত সে রিকশা নিয়ে হাসপাতালে যায়।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দ্রুত রিফাতকে জরুরি বিভাগ থেকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পরে ডাক্তার গজ বেন্ডিজ দিয়ে ক্ষতস্থান আটকে তাকে দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সেও তোলা হয়। ইতোমধ্যে মিন্নির বাবা ও চাচা হাসপাতালে পৌছান। মিন্নি রিফাতের সাথে যাবার জন্য বার বার অনুরোধ করলেও সবাই তাকে বাড়িতে থেকে যাবার কথা বলে রেখে যান। এদিকে রিফাতকে হাসপাতালে পৌছে দেয়ার পরে সেখানে পুলিশ পৌছে। পুলিশ রিকশা চালক দুলাল ও তার রিকশার ছবি তুলে নেয়। এমনকি তার রিকশার কাগজপত্রও পুলিশ নিয়ে গেছে। যা এখনো সে ফেরত পায়নি বলে জানিয়েছে।

নতুন ভিডিওটি ভাইরাল হবার পরে বরগুনাসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে রিফাত হত্যাকান্ডের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এ হত্যাকান্ডের পরেই বরগুনা শহরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের গডফাদার হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান নেতার পুত্রের নামটি সবার মুখে উচ্চারিত হয়। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড নিহত হবার পরে বিষয়টি নিয়ে মানুষের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। আর স্ত্রী মিন্নিকে আসামি করার পরে সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আরো স্বচ্ছ ধারণা জন্মে।

এ ব্যাপারে হাইকোর্টে মিন্নির আইনজীবী এবং আইন ও সালিস কেন্দ্রের জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ ভিডিওটি মামলায় নতুন মোড় নেবে। সিনিয়র এ আইনজীবীর মতে মূলত সন্দেহের বসেই মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। তার মতে এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল আর তা হচ্ছে মূল আসামিদের রক্ষা করা। জেডআই খান পান্নার মতে রিফাতের বাবা ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এতদিন এ হত্যকান্ডের সাথে মিন্নিকে জড়িয়েছিলেন। নতুন ভিডিওটি তার সে দাবি অনেকটাই অসার প্রমাণিত করবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তার মতে, পুলিশ শুধু দ্বিতীয় ভিডিওটি নিয়ে চার্জশিট তৈরি করেছে। আমরা ৩টি ভিডিও নিয়েই এখন আগাবো।

এদিকে আলোচিত এ রিফাত হত্যা মামলার বিষয়ে বরিশাল ও বরগুনার একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, এ মামলার বিচার শুধু বরগুনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তা উচ্চ আদালতেও গড়াতে পারে। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে এখনই কারো স্বস্তি লাভের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ বরিশাল বিভাগের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তথ্য প্রমাণে যা পাওয়া গেছে সে আলোকেই চার্জশিট হয়েছে। এর বাইরে কিছু বলার নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ