পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উচ্চতায় ছোটখাটো। ৫ ফুটের সামান্য বেশি। মাথায় চুল কম। সাদামাটা গোছের এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। কিন্তু নিরাপত্তা বেষ্টনী তার পুরো রাজকীয়। বিশাল দেহের রক্ষীরা তার পাহারায়। অর্ধডজন দেহরক্ষী সঙ্গী থেকে বদলে দিত তার চলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অস্ত্রসজ্জিত দেহরক্ষী নিয়ে তার চলাচল অনেকটাই কমান্ডো স্টাইলের। আগে-পিছে মোটরসাইকেল ও জিপে পাহারায় নিকেতনে আসা-যাওয়া করতেন সাইরেন বাজিয়ে। কখনো কখনো থাকতো পুলিশের পাহারাও। যেন রাষ্ট্রীয় কোনো বড় মাপের ভিআইপি মুভমেট করছেন।
রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগের এই নেতাকে শুক্রবার নিকেতনের অফিস থেকে সাত দেহরক্ষীসহ আটক করে র্যাব। এদিন ভোর ৬টা থেকে সাদা পোশাকে শুরু হয় র্যাবের অভিযান। বিকেল সাড়ে ৪টায় অভিযান শেষে শামীমসহ ৮ জনকে আটক করার বিষয় জানায় র্যাব। অভিযানে ১ কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) পাওয়া যায়। যার মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে। এ ছাড়া তার কাছে মার্কিন ডলার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়।
নিকেতনের যে অফিস থেকে শামীম র্যাবের হাতে ধরা পড়েন তার পুরোটাই আবাসিক এলাকা। আবাসিক ভবনগুলো প্রতিটিই ৬-৭ তলা, একটার সঙ্গে আরকেটা লাগুয়া। শুধু জি কে শামীমের ভবনটি (জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড) চার তলা। ভবনটি থেকে কিছু দূরেই রয়েছে মসজিদ। এই ভবনের অফিসে কখনও সকালে, কখনও দুপুরে এমনকি গভীর রাতেও আসতেন জি কে শামীম।
সকাল, দুপুর, বিকেল বা রাত যখনই শামীম নিকেতনে ঢুকতেন টের পেয়ে যেতেন আশপাশের সবাই। তার পাহারায় সবসময় তিনটি মটোরসাইকেলে ৬ জন দেহরক্ষী থাকতেন। শামীমের গাড়ির সঙ্গে থাকতো আরও দুটি কালো রঙের জিপ গাড়ি। সাইরেন বাজাতে বাজাতে রাস্তা দিয়ে গাড়িবহরসহ এগিয়ে যেতেন শামীম। তার গাড়ি গন্তব্যে (অফিসের সামনে) না পৌঁছানো পর্যন্ত রাস্তায় নামতে পারতো না অন্য কোনো গাড়ি।
জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড নামের ভবনটির পাশের এক ভবনের কেয়ারটেকার বলেন, শামীম সাহেবের চালাচল ছিল পুরো রাজকীয়। তিনি যখন এখানে আসতেন, সবাই টের পেয়ে যেত। বিশাল দেহরক্ষী নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে তিনি আসতেন। সবসময় তার সঙ্গে তিনটি মোটরসাইকেলে ৬ জন দেহরক্ষী থাকতেন। এ ছাড়া তার আগে-পিছে কালো রঙের আরও দুটি দামি জিপ গাড়ি থাকতো।
তিনি বলেন, শামীম সাহেবের গাড়ি যখন এখানে আসতো, কেউ রাস্তায় বের হতে পারতো না। অফিসের সামনে তার গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রসহ দেহরক্ষীরা তার চারদিকে ঘিরে রাখতো। আর সিনেমার স্টাইলে গাড়ি থেকে নামতেন শামীম সাহেব। একবার তার গাড়ি আসার সময় আমাদের স্যারের গাড়ি গ্যারেজ থেকে অর্ধেক রাস্তায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু তার দেহরক্ষীরা আমাদের সেই গাড়ি আবার গ্যারেজে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেছিল। তার গাড়ি চলে যাওয়ার পর আমাদের গাড়ি বের হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল বলেন, আমি ১০ বছর ধরে এখানে আছি। আগে ওই বাসাটা খান সাহেব নামের একজনের ছিল। বছর খানেক আগে খান সাহেবের কাছ থেকে শামীম সাহেব বাড়িটি কেনেন। শামীম সাহেব বাড়িটা কেনার পর সবসময় এই জায়গাটা জমজমাট থাকে। প্রতিদিনই তিনি এখানে আসেন গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে। দেহরক্ষীদের পাশাপাশি পুলিশের গাড়িও থাকতো। তার চলাচল দেখে মনে হতো সরকারের কোনো মস্তো বড় কেউ। রাত ২-৩টার সময়ও গুমগুম করে তার গাড়ির সাইরেন বাজতো।
মাসুম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, রাত ২-৩টার দিকেও শামীম সাহেব এই অফিসে আসতেন। গভীর রাতে তিনি যখন আসতেন তার গাড়ির আওয়াজে সবার ঘুম ভেঙে যেত। কিন্তু কারও কিছু বলার সাহস ছিল না। এমনকি নামাজের সময়ও তিনি একই স্টাইলে চলাচল করতেন। পাশেই মসজিদ থাকায় অনেকের নামাজের সমস্যা হতো। কিন্তু তাকে কিছু বলার সাহস এখানে কারও নেই। এই নিকেতনেই তার আরও চারটি বাড়ি আছে বলে আমরা শুনেছি।
সচিবালয়, র্যাব হেড কোয়ার্টার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ বড় বড় ১৭টি প্রকল্পের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ করছেন র্যাবের হাতে আটক হওয়া জি কে শামীম। তার মালিকানাধীন জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে তিনি এসব কাজ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। শুক্রবার র্যাবের হাতে বিপুল টাকা, এফডিআর এবং মাদক ও অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর বিকেলে জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন।
বিকেলে র্যাবের পক্ষ থেকে শামীমকে আটকের ঘোষণা দেয়ার পরপরই তার অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে পাওয়া টেন্ডারের তথ্য সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। তাদের একজন দিদার। তিনি নিজেকে জি কে শামীমের পিএস বলে দাবি করেন। দিদারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জি কে শামীম জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের নামে বড় বড় ১৭টি প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪০০ কোটি টাকার কাজ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের। ৩০০-৩৫০ কোটি টাকার কাজ পঙ্গু হাসপাতালের।এ ছাড়া বড় প্রকল্পের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার র্যাব হেডকোয়ার্টার, ১৫০ কোটি টাকার সচিবালয়, ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর, ১৫০ কোটি টাকার সচিবলয় কেবিনেট ভবন, ২০০ কোটি টাকার মহাখালী ডাইজেস্টিভ এবং বেইলী রোডে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।