পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো ও জুয়ার কারবারে জড়িতদের নাম জানিয়েছেন তিনি। রাজধানীতে লাসভেগাস স্টাইলে ক্যাসিনো ও জুয়া চালানোর পেছনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, যুবলীগের অনেক সিনিয়র নেতার নাম ছাড়াও রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নাম। রাঘববোয়ালের নাম আসায় তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। দুই মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে গতকাল শুক্রবার ছিল প্রথমদিন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কিভাবে তিনি ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন, জুয়ার টাকা কার কার পকেটে যেতো, কোন কোন পুলিশ সদস্য তার কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে, ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে প্রায় সবার নামই বলছেন খালেদ মাহমুদ। জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ মাহমুদ জানিয়েছে, রাজধানীতে মূলত ১১ নেপালির হাত ধরে ক্যাসিনোর বিস্তার লাভ করে। তারা হলেন- দিনেশ শর্মা, রাজকুমার, বিনোদ, দিনেশ কুমার, ছোট রাজকুমার, বল্লভ, বিজয়, সুরেশ বাটেল, কৃষ্ণা, জিতেন্দ্র ও নেপালি বাবা। রাজধানীতে যে কটি আধুনিক ক্যাসিনো জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হতো সেগুলোর বেশিরভাগই অপারেটিং সিস্টেম দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তারাই। আর তার ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতে সহযোগিতা করতেন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন শীর্ষ নেতা। ইয়ং মেনসসহ রাজধানীর বিভিন্ন ক্যাসিনো থেকে খালেদ মাহমুদের প্রতিরাতের চাঁদা ছিল এক কোটি টাকা।
এছাড়াও টাকার ভাগ পেতেন, যুবলীগ ও মতিঝিল থানা পর্যায়ের এক নেতাসহ প্রভাবশালী নেতারা। ক্যাসিনোগুলো যে থানার আওতায় পড়েছে ওই থানার কর্মকর্তাসহ ওই জোন ও বিভাগের কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদরদপ্তর ও ডিএমপি সদর দপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেটে গেছে কাড়িকাড়ি টাকা। মূলত টাকার বিনিময়ে সব মহল ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তার বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ডিবি হেফাজতে আনার পরে আমাদের অফিসাররা খালেদ মাহমুদ ভ‚ঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যেহেতু আমরা অস্ত্র ও মাদক মামলা দুটি দেখছি, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এখনো অনেক বিষয়ে জানার আছে। রিমান্ড শেষ হলে সব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো। উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র্যাব। পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে গুলশান থানার ৩টি ও মতিঝিল থানার ১টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত অস্ত্র ও মাদক মামলায় তাকে মোট ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ডিবি কার্যালয়ে রেখেই তার জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, খেলাধুলা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়া ক্লাবগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রমের অন্তরালে নানা ধরনের বেআইনি কাজ সংঘটিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ শুরু থেকেই হোটেল রেস্তোরাঁসহ এ ধরনের স্থানগুলোতে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের আটক করছে। ক্যাসিনোর কার্যক্রমের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রাজধানীর বেশ কিছু ক্যাসিনো সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। যুবলীগের শীর্ষ নেতারা এসব ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে কত টাকা চাঁদা নিতেন এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে কত টাকা চাঁদা দেয়া হতো- সে বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তিনি। র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ মাহমুদের দেয়া তথ্যের মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্লাবের চাঁদার ভাগ-ভাটোয়ারা তথ্য পাওয়া গেছে। যেগুলো খতিয়ে দেখছে র্যাব ও গোয়েন্দারা। এগুলো হচ্ছে-
সৈনিক ক্লাব : মালিবাগ-মৌচাক প্রধান সড়কের পাশের একটি ভবনে অবস্থান সৈনিক ক্লাবের। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের নামে এই ক্লাব চলে। আর এটি নির্ধারিত টাকায় ভাড়া নিয়ে ক্যাসিনো খোলেন যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও এ টি এম গোলাম কিবরিয়া। তাদের অংশীদার নেপালি নাগরিক প্রদীপ। এই ক্লাব থেকে প্রতিদিন ৪ লাখ টাকা চাঁদা পান যুবলীগ নেতারা। স্থানীয় পুলিশের নামে নেয়া হতো প্রতিরাতে ৫০ হাজার টাকা।
ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব : বনানী আহমেদ টাওয়ারের ২২ তলায় ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব চালু করেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ী আওয়াল পাটোয়ারি ও আবুল কাশেম। ক্লাবটি চালুর কিছুদিনের মধ্যেই কৌশলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর বাড়ে যুবলীগ নেতাদের মাসোহার অঙ্ক। আর তোলাবাজ আরমান জোর করে ক্লাবটির মালিকানায় ঢুকে যায়। নেপালি নাগরিক অজয় পাকরালের তত্ত্বাবধনে চলত ক্যাসিনোটি। এখান থেকেও যুবলীগ নেতাদের বরাদ্দ ছিল প্রতিদিন ৪ লাখ টাকা। পুলিশের নামে নেয়া হতো এক লাখ টাকা।
ওয়ান্ডারার্স ক্লাব : এই ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক হিলমি। তার অংশীদার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের। এখান থেকে প্রতিদিন যুবলীগ নেতাদের নামে ৫ লাখ টাকা চাঁদা নেয়া হতো। আরমান, খোরশেদ ও জাকির এই ক্যাসিনো থেকে টাকা নিয়ে যান। স্থানীয় পুলিশের নামে প্রতিরাতে নেয়া হতো একলাখ টাকা।
দিলকুশা ক্লাব : এই ক্লাবের মালিক নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও ছোট রাজকুমার। ভারতীয় আরও দু’জন অংশীদার থাকলেও তাদের নাম জানা যায়নি। এই ক্যাসিনো থেকে যুবলীগ নেতাদের নামে প্রতিদিনের চাঁদা ৪ লাখ টাকা। এর বাইরে আরমানের নিজের চাঁদা ১ লাখ। জানা গেছে, ক্লাবটি চালু করতে যুবলীগ নেতাদের দিতে হয় ৪০ লাখ টাকা। আরমানের ছোট ভাই ইয়ং মেনস ক্লাবে অভিযানের সময় ধরা পড়লে তাকে ১ বছরের সাজা দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পুলিশের নামে আদায় করা হতো দেড় লাখ টাকা।
ফুয়াং ক্লাব : তেজগাঁও লিংক রোডের ফুওয়াং ক্লাবে একসময় মদ বিক্রির পাশাপাশি নিয়মিত বসত ডিজে গানের আসর। ক্লাব মালিক নূরুল ইসলামের সঙ্গে তেজগাঁও জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তার ‘ঝামেলা’র কারণে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় ডিজে আয়োজন। এরপর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্লাবের দোতলার হল রুমে বসানো হয় ক্যাসিনো। ক্লাবটির একক মালিক নূরুল ইসলাম পুরস্কার ঘোষিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর আত্মীয় হওয়ায় এই ক্লাবে যুবলীগ নেতাদের নামমাত্র দিনে ১ লাখ টাকা চাঁদা দেয়া হতো। পুলিশের নামে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা দেয়া হতো।
মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব : যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার চাচা হিসেবে পরিচিত পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন এই ক্লাবে ক্যাসিনো চালু করেন। দীনেশ ও রাজকুমার তার ব্যবসায়িক অংশীদার। প্রতিদিন যুবলীগ নেতাদের নামে চাঁদার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা। পুলিশের নামে প্রতিদিন দেয়া হতো ২ লাখ টাকা।
ইয়ং মেনস ক্লাব : চারদিকে জুয়ার টাকা উড়তে দেখে লোভে পড়েন যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে চেয়ারম্যান করে প্রতিষ্ঠা করেন ইয়ং মেনস ক্লাব। ফুটবল, ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা বলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এনে নিজেই চালু করে ক্যাসিনো। কমলাপুর আইসিডির কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চীন থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এসে বসান তার ক্যাসিনোতে। এখান থেকেও দিনে ৪ লাখ টাকা চাঁদা নিতো যুবলীগ নেতারা। আর পুলিশের নামে দেয়া হতো এক লাখ টাকা।
এজাক্স ক্লাব : এ্যালিফেন্ট রোডের এজাক্স ক্লাব চালু হয় যুবলীগ নেতা আরমান, তছলিম ও খোরশেদের তত্ত্বাবধানে। নেপালি নাগরিক ছোট রাজকুমারকে দিয়ে ক্যাসিনোটি চালু করেন তারা। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন যুবলীগ নেতাদের নামে নেয়া হতো ৩ লাখ টাকা। পুলিশের নামে নেয়া হতো এক লাখ টাকা।
উত্তরার ক্যাসিনো : দীনেশ ও রাজকুমারের অংশীদারিত্বে উত্তরায় এপিবিএন অফিসের উল্টো পাশে একটি ভবন ভাড়া করে চালু করা হয় একটি ক্যাসিনো। তাদের পার্টনার হন তছলিম নামের এক স্থানীয় যুবলীগ নেতা। এরপর ওই এলাকায় যুবলীগ নেতাদের মাধ্যমে আরও কয়েকটি ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি ক্যাসিনোতে যুবলীগ নেতাদের নামে চাঁদা দেয়া হতো দিনে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা। বেশ কয়েক লাখ টাকা দেয়া হতো পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে রাজধানীতে দীনেশ ও রাজকুমার অবৈধ ক্যাসিনো খোলার পর হুমড়ি খেয়ে পড়ে জুয়ারিরা। এ অবস্থা দেখে একের পর এক ক্যাসিনো খুলতে থাকেন তারা। আর দেশ থেকে নিয়ে আসে ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের। সেই সঙ্গে প্রতিটি ক্যাসিনোতে ২০ থেকে ২৫ জন করে নেপালি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েও কামিয়ে নেন মোটা টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় একসময় ওয়ান টেন ও থ্রি কার্ডের মতো জুয়া চলত। যুবলীগ নেতা সম্রাটের নিয়ন্ত্রণেই মূলত ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব ও ভবনে বিদেশের আদলে অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে উঠতে থাকে। আর এ খাত থেকে প্রতিদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা তুলতে গড়ে উঠে একটি চক্র।
জুয়ার বোর্ড চালক ১৪ নেপালিজকে খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
মতিঝিলে যে ক্যাসিনোতে র্যাব বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অভিযান চালিয়েছে, সেখানে জুয়ার বোর্ড চালাতো নেপালের ১৪ নাগরিক। এই ১৪ নেপালিজকে ধরতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযানের সময় আমাদের কাছে সংবাদ ছিল মতিঝিলের ক্যাসিনোটিতে জুয়ার বোর্ড চালাতো ১৪ নেপালিজ পুরুষ। অভিযানের সময় একজনকেও পাওয়া যায়নি। পরে সেখান থেকে আমরা তাদের আবাসস্থল সেগুনবাগিচা ও পল্টন এলাকায় অভিযান চালাই। নেপালিজদের ধরতেই বাসায় গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, সেগুনবাগিচার বাসায় থাকতো ৬ জন এবং পল্টন এলাকার বাসায় থাকতো আটজন। সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেপালিজদের কাজ ছিল জুয়াড়িদের আসক্ত করা। ক্যাসিনো চালকরাই নেপালিজদের এখানে যোগদান করিয়েছে। এদের কেউ ট্যুরিস্ট ভিসায়, কেউ অন্য কোনো ভিসায় এসে ক্যাসিনোতে জুয়ার বোর্ড চালাতো। তাদের বাসাগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
লিডারদের ছত্রছায়ায় চলতো ক্যাসিনো, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ
অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার দায়ে আটক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পেয়েছে র্যাব। তবে তার দেয়া তথ্য সঠিক কিনা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে খালেদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল ও গুলশান থানায় আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ক্যাসিনোর মতো অবৈধ ব্যবসা চালাতে গেলে অবশ্যই অর্থ ভাগাভাগির বিষয় থাকে। সে বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানিয়েছে ‘লিডার’দের ম্যানেজ করেই ক্যাসিনো ব্যবসা চালানো হতো। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশানের বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র্যাব। সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিন্টু রোডের কার্যালয়ে রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মতিঝিল থানার ৩০০ গজের মধ্যে চার ক্যাসিনো
রাজধানীর ফকিরাপুলের কালভার্ট রোডে মতিঝিল থানা। আর এই থানার ৩০০ গজের মধ্যেই রয়েছে চারটি ক্যাসিনো। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে আশপাশের ব্যবসায়ীদের সবাই জানতো এই ক্যাসিনোগুলোতে প্রতিদিন বসে জুয়ার আসর। আর এগুলো চালাতো যুবলীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। তাদের মাথার ওপরে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাসহ প্রভাবশালী রানৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আশীর্বাদ থাকায় তারা এতটাই প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ছিল যে এদের ব্যাপারে অভিযোগ করার সাহস পেতেন না কেউ। উল্টো এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়ম করে মাসোহারা নিয়ে যেত যুবলীগের নেতা পরিচয়ধারী এসব ক্যাসিনোর মালিকদের পোষা ক্যাডাররা। চার চারটি ক্যাসিনো পুলিশের নাকের ডগায় চললেও কানও ধরনের হাঁচি-কাশি দেয়নি মতিঝিল থানা পুলিশ। বরং জুয়ার টাকার বখরা পকেটে পুরে চোখ বন্ধ করে থাকতো তারা এমন অভিযোগ রয়েছে এই থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিল থানার আশেপাশে থাকা এসব ক্লাব হচ্ছে- ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব। বাইরে ক্রীড়াঙ্গনের মূলধারার ক্লাব হিসেবে পরিচিতি থাকলেও গত পাঁচ-সাত বছর ধরে এসব ক্লাবের মূল কর্মকান্ডই ছিল ক্যাসিনো পরিচালনা ও জুয়া খেলা পরিচালনা। পাশাপাশি বিক্রি হতো বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, এটা সবাই জানে। ক্যাসিনোর খবর আমাদের জানা ছিল না। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
খালেদের ক্যাসিনোতে প্রতি রাতে লেনদেন হতো কোটি টাকা
যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া মালিকাধীন ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে প্রতিদিন লেনদেন হতো কোটি টাকা। কখনও কখনও সংখ্যাটা কয়েক কোটি টাকায় গড়াতো। দুই শিফটে চলা এ ক্যাসিনো ক্লাবটিতে গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশ ব্যক্তি জুয়া খেলতেন। তারা প্রত্যেকে গড়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করতেন ক্যাসিনোতে। তবে ক্লাবটিতে ভিআইপিরা জুয়া খেলতেন সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকার স্টেকে। ক্লাবটিতে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দিনের বেলা এবং রাত আটটা থেকে পরের দিন সকাল আটটা পর্যন্ত রাতের বেলায় এ দুই শিফট অনুযায়ী খেলা হতো। দিনের শিফটে ৫০-৬০ জন এবং রাতের শিফটে একশ থেকে দেড়শ লোক হতো। এতে রাতের শিফটেই খেলতে আসতেন ভিআইপিরা। আর দিনের বেলায় আসতেন নিম্ন শ্রেণির (ক্লাবের ভাষায়) খেলোয়াড়রা। তার মধ্যে কেউ কেউ টাকা আয়ের জন্য নয়, মানসিক আয়ের জন্য নয়, নেশা বা মানসিক প্রশান্তির জন্যও টাকা ওড়াতে আসতেন এ ক্লাবে।
ক্লাবটিতে স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন শামছুল হক। র্যাবের অভিযানে তিনিও ধরা পড়েছেন। শামসুল হক র্যাব কর্মকর্তাদের বলেন, দিনের চেয়ে রাতের বেলায় ক্লাবটিতে প্রভাবশালীরা খেলতে আসেন। তাদের বেশিরভাগ ভিআইপি। একেকজন ২০ লাখ, ৫০ লাখ টাকা বেট ধরেন। মতিঝিলে এ ক্লাবটি একটু বেশি সেরা। কারণ এখানে বিদেশিরাও খেলতে আসেন। আবার বোর্ড চালায় বিদেশিরাই।
খালেদ মাহমুদকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার
ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গ্রেফতারকৃত যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করেছে যুবলীগ। সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে গতকাল তাকে বহিষ্কার করা হয়। যুবলীগের শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক এবং মিডিয়া সমন্বয়ক মিজানুল ইসলাম মিজু এ তথ্য জানান। মিজানুল ইসলাম বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।