পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকায় মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোতে সর্বপ্রথম জুয়ার আসর জমে ওঠে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে। ওই ক্লাবের সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার। ক্যাসিনো চালু হওয়ার ২/৩ বছরের মাথায় ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে এক রাতে শত কোটি টাকার কারবার চলে। অথচ ক্যাসিনোর নেপথ্যে যুবলীগের নাম আসলেও রহস্যজনক কারণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার প্রভাবে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এতোটাই প্রভাবশালী ছিল যে, ক্লাবের বয়রা জুয়ারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হাঁক ডাক ছাড়তো- ‘স্যার এখানে আসেন, এটা সরকারি ক্লাব, এখানে কোনো সমস্যা হবে না।’ মতিঝিল পাড়ার অন্যান্য ক্লাব যুবলীগ ঢাকা মহানগরের তত্বাবধানে চললেও ব্যতিক্রম ছিল ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। তারা কাউকে তোয়াক্কা করতো না। তবে ক্লাবের সভাপতি হলেও এখানে পরিচালিত ক্যাসিনোর সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা কাওছার। গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, এটা কোন মালিকানা নয়। পাশাপাশি জুয়া, ক্যাসিনো খেলা বা মালিকানা অথবা পরিচালনা এ ধরনের কোনো কিছুর সাথে আমি কোনদিনই ব্যক্তিগতভাবে জড়িত নই।
এদিক, প্রতি ক্লাবের ক্যাসিনোতে সুন্দরী তরুণী ছিল। তাদের কেউ কেউ ক্যাসিনোর বোর্ড চালানোতে প্রশিক্ষিত ছিল। জুয়ারীদের আকর্ষণের জন্য মধ্যরাতে তরুণীদেরকে দিয়ে বোর্ড চালানো হতো। দুটি শিফটে বিভক্ত হয়ে তরুণীরা ডিউটি করতো। মাসে বেতন ছিল কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা। এর বাইরে তরুণীরা জুয়ারীদের মনোরঞ্জনেও ব্যবহার হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেব লীগ নেতা সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময়ই ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে প্রথম ক্যাসিনো চালু করা হয়। কামরুল নামে একজনের পরামর্শে শহিদুল নামে এক ব্যবসায়ী ও তার আরও ৬ ভাই মিলে ওয়ান্ডারার্সে ক্যাসিনো চালু করে। কামরুল ওই ক্লাবের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে। ক্যাসিনো চালু করার ২/৩ বছরের মধ্যেই তা জমে ওঠে। সরকারি কর্মকর্তা, রাজউকের প্রকৌশলী, সার্ভেয়ার, গণপূর্তের ঠিকাদার, হাউজিং ব্যবসায়ী, ভূমি ব্যবসায়ী, জনশক্তি রফতানিকারক থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ক্যাসিনোতে আসায় অল্প দিনের মধ্যেই ওয়ান্ডারার্সের ক্যাসিনো জমজমাট হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় যারা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ক্যাসিনোতে নিয়মিত যেতেন তারা আসতে শুরু করে ওয়ান্ডারার্সে। তারা টাকার পরিবর্তে ডলার নিয়ে বসতেন খেলতে। রাতভর কোটি টাকার খেলা জমতো।
সূত্র জানায়, মতিঝিলের ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো চালু হওয়ার পর অন্যান্য ক্লাবে বাকারা খেলার জন্য যখন ৫/৬টি টেবিল ছিল, ওয়ান্ডারার্সে তখন টেবিলের সংখ্যা ১৫/২০টি। এই ক্লাবে জুয়ারীর সংখ্যা এতোটাই বেশি ছিল যে, রাতে লাইন ধরে জুয়ারীদের চিপস সংগ্রহ করতে হতো। প্লাস্টিকের তৈরী ওই চিপস দিয়েই চলতো জুয়া খেলা। ১ লাখ, ৫০ হাজার, ২৫ হাজার, ১০ হাজার, ১ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন মানের চিপস পরে কাউন্টারে দিলে প্রকৃত টাকা মিলতো। এমনকি কোনো জুয়ারী যদি রাতে বাসায় ফিরতেন তখন তিনি টাকা বহন করা নিরাপদ মনে না করলে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা ডিপোজিট হিসাবে জমা রাখতে পারতেন। পরদিন যে কোনো সময় সেই ডিপোজিট ফেরত নিতে পারতেন।
সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের ম্যানেজার কামরুল ক্যাসিনোর বদৌলতে এখন কমপক্ষে দুশ’ কোটি টাকার মালিক। ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার একাধিক ফ্ল্যাট। চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। অথচ ক্যাসিনো চালু হওয়ার আগেও কামরুল ভাত খাওয়ার একটা টোকেনের জন্য ক্লাবে ক্লাবে ঘুরতেন। সূত্র জানায়, দিনে বা রাতে যারা ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতো তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হতো ক্লাবের পক্ষ থেকেই। এজন্য জুয়ারীদেরকে একটা টোকেন দেয়া হতো। কোনো কোনো জুয়ারী হেরে গিয়ে খাবার না খেয়েই চলে যেতেন। কামরুল ওই সব জুয়ারীর কাছে থেকে সেই খাবারের টোকেন চেয়ে নিতো। সেই কামরুলই এখন দুশ’ কোটি টাকার মালিক।
সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার তত্বাবধানে পরিচালিত ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এতোটাই প্রভাবশালী ছিল যে, ক্লাবের পক্ষে বয়রা রাস্তায় দাঁড়িয়ে জুয়ারীদের ডাকতো। ক্লাবের সামনের গেইট ছাড়িয়ে তারা মতিঝিল থানার সামনে গিয়েও ডাকাডাকি করতো। যা দেখে অনেকেই সাহস করতেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরানীগঞ্জের এক ব্যবসায়ী জানান, ওয়ান্ডারার্সে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার নেশায় তিনি প্রায় ৪০ কোটি টাকা হারিয়েছেন। জুয়ার নেশায় বিক্রি করেছেন ৭টি ফ্ল্যাট। তিনি জানান, অন্যান্য ক্লাবের ক্যাসিনো মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানের ভয়ে বন্ধ থাকতো। কিন্তু ওয়ান্ডারার্স ছিল ব্যতিক্রম। এখানকার ক্যাসিনো কখনও বন্ধ হতে দেখিনি। এ কারণে অনেকেই মনে করতো এটা ‘সরকারি’। যা ক্যাসিনো থেকেই প্রচার করা হতো।
এদিকে, অন্যান্য ক্যাসিনোর মতো ওয়ান্ডারার্সেও ছিল ১৫/১৬জন সুন্দরী তরুণী। যারা দুই শিফটে ক্যাসিনোতে ডিউটি করতো। তরুণীদের কাউকে কাউকে বাকারার ভিআইপি বোর্ডে বসানো হতো। বাকিরা থাকতো জুয়ারীদের আশেপাশে দাঁড়িয়ে। তারা মোটা অংক ধরার জন্য জুয়ারীদের উৎসাহিত করতো। কেউ কম অঙ্ক ধরলে তরুণীরা ভৎসনা করতো। বলতো, স্যার এতো কম ধরবেন, ভাবতেও পারিনি। ছোট পোষাক পরিহিত তরুণীরা সব সময় জুয়ারীদের সেবায় ব্যস্ত থাকতো। এর বাইরে এসব তরুণীরা জুয়ারীদের মনোরঞ্জনের জন্যই ব্যবহার হতো। তবে তা ক্যাসিনোর বাইরে, ছুটির সময়। আলাপকালে একজন বলেন, একেক জন তরুণীর মাসে আয় ছিল কমপক্ষে দুই লাখ টাকা। মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন ছাড়াও তারা প্রতি রাতে মোটা অঙ্কের টিপস পেতো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।