পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোথাও দরজায় তালা। কোথাও খোলা। তবে লোকজনের আনাগোনা তেমন নেই। কোথাও ক্লাবের সাইনবোর্ড রয়ে গেছে। অনেক জায়গায় গত দুদিনে তাও উধাও। সরিয়ে ফেলা হয়েছে জুয়ার বোর্ড। ক্যাসিনোর বদলে শোভা পাচ্ছে অন্যান্য ‘নির্দোষ’ খেলার সরঞ্জাম। তবে কোথাও কোথাও সতর্ক থেকে চতুর জুয়াড়িরা টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলায় মেতে আছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অবৈধ ও অঘোষিত ক্যাসিনো, বার, ক্লাবের চিত্র এখন এমন। গতকাল এ ধরনের কয়েকটি ক্লাব ঘুরে ভিন্ন দৃশ্য সহজেই চোখে পড়ে। ক্লাবগুলোর ভেতরে-বাইরে স্টাফ ও গুটিকয়েক সদস্য ছিলেন। তবে তাদের চোখ সতর্ক।
শুক্রবার ছুটির দিনে জমজমাট থাকতো এসব ক্লাব। বিকেল থেকে শেষ রাত পর্যন্ত চলতো ইয়াব সেবন, মদপান, জুয়ার আসর। চলতো নানা অসামাজিক কর্মকান্ড। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের নেতা, ক্যাডার মাস্তান, ঠিকাদার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি কিংবা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা পাতিনেতা থেকে শুরু করে উঠতি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, ধনী পরিবারের বখে যাওয়া তরুণ সন্তান, অস্ত্রধারী, মাদক কারবারিদের ভিড়ে গিজ গিজ করতে এসব ক্লাব ক্যাসিনো। এখন এসব ক্লাব-বার, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউসে জুয়ার আসর যেন আজ ভাঙা হাট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনায় রাজধানী ঢাকায় ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। চট্টগ্রামে এখনো এমন অভিযান শুরু না হলেও ক্যাসিনো মালিক ও জুয়াড়িদের মধ্যে অজানা ভয়ভীতি এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের অনেকে আগেই পাতালে চলে গেছেন। ঢাকার বড় বড় ক্যাসিনোতে সদস্য হয়ে নিজেদেরকে যারা প্রভাবশালী হিসেবে বুক ফুলিয়ে পরিচয় জাহির করতেন, চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইটে নিয়মিত যাওয়া আসা করতেন তারাও গা ঢাকা দিয়েছেন।
এদিকে ক্লাব-বারের আড়ালে এসব অপকর্মের সাথে জড়িত ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিতর্কিত ও হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে অত্যন্ত খুশি সাধারণ মানুষ। গতকালও সবার মুখে মুখে ছিলো এ বিষয়টি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এমন কঠোর ভূমিকাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তারা বলছেন, নেত্রীর হার্ডলাইনে যাওয়া দরকার ছিলো। এ ধরনের অভিযান দল এবং দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে মনে করেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এখন বিষয়টি নিয়ে জোরালো আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বেশিরভাগ আলোচনায় সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ সময়োচিত এবং কঠোর পদক্ষেপের প্রশংসা উচ্চারিত হচ্ছে। নগরীর আগ্রাবাদের ব্যবসায়ী গোলাম মুর্তজা বলেন, ক্যাসিনোর মতো ভয়ঙ্কর জুয়ার বিরুদ্ধে আরও আগেই অভিযান পরিচালনা করা দরকার ছিলো। দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী যে সাহসী এবং কঠোর উদ্যোগ নিয়েছেন তা ইতিবাচক। কারণ ক্যাসিনো ঘিরে যত বড় বড় অপরাধের সৃষ্টি হয়। এরসাথে যারা জড়িত তারাও অপরাধী এবং এসব জুয়ার আসরে যারা নিয়মিত যান তারাও আন্ডারওয়াল্ডের সাথে জড়িত। ভয়ঙ্কর সব অপরাধের পরিকল্পনা এসব জুয়ার আসরেই হয়। চট্টগ্রামেও এ ধরনের অভিযান জরুরি বলে মত দেন তিনি।
নগরীর পশ্বিম মাদার বাড়ির বাসিন্দা রশিদ উদ্দিন বলেন, ক্যাসিনো সংস্কৃতি দেশে অপরাধে নতুন মাত্রা যোগ করছে। বিশেষ করে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডারবাজি, ঘুষ, দুর্নীতির সাথে জড়িতরা এসব জুয়ার আসরের সদস্য। জুয়ার ফাঁদে পড়ে অনেকে রাতারাতি কোটিপতি হচ্ছেন। অনেকে হচ্ছেন পথের ফকির। সেখানে মদ, জুয়ার পাশাপাশি চলে নানা অসামাজিক কার্যক্রম। এসব অনাচারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানের প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আছে বলেন তিনি।
সরকারি দলে আওয়ামী লীগের মধ্যেও এধরনের অভিযান নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতারা দলীয় সভাপতির কঠোর উদ্যোগের প্রসংশা করছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের অভিযানে দলে হাইব্রিড ও নানা উপায়ে অবৈধ পথে অর্থ উপার্যনকারীরা ভয় পাবে। দলের দুঃসময়ে যারা ছিলেন না, অথচ ক্ষমতায় আসার পর তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন।
এ অভিযান সারা দেশে এ ধরনের নেতাদের জন্য একটি সতর্কবাতা বলেও মনে করেন তারা। তৃণমূলের নেতারা মনে করেন এমন কঠোর অবস্থানে অটল থাকলে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। এসব অপকর্মের নেপথ্যে যারা তাদেরও চিহ্নিত করার আহ্বান জানান নেতাকমীরা। সাধারণ মানুষের মতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মনে করেন চট্টগ্রামে এ ধরনের অপকর্মের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান জরুরি। এতে দল যেমন আগাছামুক্ত হবে তেমনি সরকারের ইমেজও বাড়বে।
ঢাকায় অভিযানের পর পর চট্টগ্রামের অবৈধ ক্যাসিনো, বার ও ক্লাবের সাথে জড়িতদের অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা যায় বেশির ভাগ ক্লাব ছিলো বন্ধ। অথচ অন্যসময়ে বন্ধের দিনে এসব ক্লাবগুলো ভিড় লেগেই ছিলো। তবে কয়েকটি ক্লাবে গতকালও সীমিত আকারে জুয়ার আসর দেখা গেছে। নগরীর জিইসি মোড়ের একটি বড়সড় ক্লাবে গিয়ে তালা দেখা গেছে। চট্টেশ্বরী রোডের একটি ক্লাবে জুয়ার আসর চলতে দেখা যায়। সেখানে কথিত খেলুড়ে ও জুয়াড়ি লোকজনের আনাগোনা ছিলো। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ উঠতি বয়সের যুবক। ফটকে কড়া পাহারা। ভেতরে চলছিলো জুয়ার আসর।
স্টেডিয়াম এলাকার একটি ক্লাবেও উপস্থিতি ছিলো কম। কোন কোন ক্লাব ক্যাসিনো আর জুয়া বোর্ড আড়াল করে রেখেছে। নগরীর জামাল খান সড়কের একটি অভিজাত ক্লাবেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে। নগরীর খুলশি, ফয়’স লেক, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, হালিশহর, কোতোয়ালী, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশির ভাগ ক্লাব ছিলো বন্ধ। এসব ক্লাবে জুয়ার বদলে ‘নির্দোষ’ খেলাধূলা যেমন বিলিয়ার্ড, ¯œুকার, দাবা, ক্যারম খেলতে দেখা গেছে। গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউসের নামে অভিজাত আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠা ক্যাসিনো ও অবৈধ বারেও ভীতি আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন অভিযান শুরু হয় এমন আতঙ্কে ক্যাসিনো চালু করা নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব অনেকে।
প্রয়োজনে চট্টগ্রামেও অভিযান : তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নানা কর্মসুচি বাস্তবায়ন করছে। যারা অনিয়ম করে তারা দেশকে পিছিয়ে দেয়। সমস্ত অনিয়ম ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম শহরেও অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ঢাকা শহরে অভিযান চলছে। যেখানে অন্যায় অনিয়ম সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কে কোন দলের কোন মতের সেটা দেখা হচ্ছেনা। এটি অব্যাহত থাকবে।
তিনি গতকাল নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে আন্তঃস্কুল জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তবে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র দেশের ৪৮টি বিদ্যালয়ের বিতর্ক দল নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খাঁন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আজহারুল হক, অতিরিক্ত সচিব (স¤প্রচার) নুরুল করিম।
স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম নিতাই কুমার ভট্টাচার্য্য। শিক্ষার্থীদের প্রতি তথ্যমন্ত্রী বলেন, তোমরাও আজকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করবে, কখনো সিগারেট খাবে না, মাদকের স্পর্শে আসবে না। তোমাদেরকে আরো একটি অনুরোধ জানাবো, তোমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্ত হবে না। শুধু যে মাদকে যে আসক্তি তা নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারাক্ষণ নিবিষ্ট হয়ে থাকা, এটাও একটি আসক্তি।
কঠোর ব্যবস্থা : সিএমপি কমিশনার
অঘোষিত ও অবৈধ ক্যাসিনো ক্লাব বারের তৎপরতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সেই অর্থে কোন ক্যাসিনো আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যত ধরনের জুয়ার আসর ক্লাব বার অবৈধ হাউজি আছে সবগুলোই বন্ধ করে দেয়া হবে। কেউ এ ধরনের অবৈধ বাণিজ্য চালাতে পারবে না। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।