পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবাদপত্র শিল্পের বর্তমান সঙ্কট এবং নোয়াবের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় না নিয়েই সরকার গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রকাশ করেছে (যদিও ওয়েজবোর্ড গঠনের বিষয়ে আইনগত প্রশ্ন আছে এবং তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি রিট মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে)। নোয়াব সভাপতি মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণায় সর্বক্ষেত্রে ৮০% থেকে ৮৫% বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেক প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এতে দেশের কোনো শিল্পের যে কোনো বেতন স্কেলের তুলনায় বেশি বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে, যা নোয়াবের বিবেচনায় বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকার ঘোষিত নবম ওয়েজবোর্ড বিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ নোয়াবের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নোয়াব সদস্যরা নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের রোয়েদাদ বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মতামত দেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ, ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ভোরের কাগজের মুদ্রাকর তারিক সুজাত, বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শাহ হোসেন ইমাম, সংবাদ সম্পাদক ও প্রকাশক আলতামাশ কবির, নিউএজের সম্পাদকীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান এ এস এম শহীদুল্লাহ খান ও প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান।
এ বিষয়ে নোয়াব সদস্যরা আরো বলেন, সরকার সংবাদপত্র শিল্পে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করলেও সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব আয় দিয়ে এই ওয়েজবোর্ডের ব্যয়ভার বহন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো বিশেষ সহায়তা ও অনুদান থাকে না। সংবাদপত্রের মালিকরা সব সময়ই সাংবাদিক কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা ও বেতন-ভাতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেজন্য কষ্ট হলেও কিছু সংবাদপত্র সরকার ঘোষিত ওয়েজবোর্ডের রোয়েদাদ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে চলছে। কিন্তু বর্তমানে সংবাদপত্র শিল্প অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন সময় পার করছে। সকল পত্রিকার বিজ্ঞাপন আয় ও সার্কুলেশন উভয়ই কমছে ধারাবাহিক আশঙ্কাজনকভাবে। অন্যদিকে সরকারি বিজ্ঞাপনের রেট অনেক কম ও সরকারের কাছে সব সময় বড় অঙ্কের বিল বাকি পড়ে থাকে। আর প্রতি ধাপে-ধাপে ভ্যাট-ট্যাক্স তো রয়েছেই। এ অবস্থায় টিকে থাকতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে এই শিল্পকে। অধিকাংশ সংবাদপত্রই ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছে। অনেক সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কর্মীদের বেতনই দিতে পারছে না। এ অবস্থায় নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহুমুখী সঙ্কটের মধ্যে ফেলবে। এই শিল্পের সঙ্কটগুলো নিয়ে নোয়াব থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়, ওয়েজবোর্ড কমিটি, এমনকি মন্ত্রিসভা কমিটিকেও একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
নোয়াব কখনো ওয়েজবোর্ডের বিরুদ্ধে নয়। সেজন্য অনেক আপত্তি সত্তে¡ও আমরা ওয়েজবোর্ডের কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করেছি। ওয়েজবোর্ডকে মালিক-সাংবাদিক উভয়পক্ষের জন্য বাস্তবসম্মত করার অনুরোধ করেছি। কিন্তু আমাদের কোনো প্রস্তাব বিবেচনায় না নিয়ে নতুন করে গ্রেড ভেদে ৮০% থেকে ৮৫% বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা বাস্তব নয়। অতীতেও তাই হয়েছে। বাস্তবে ৪২টি শিল্পের মধ্যে সরকার ঘোষিত ৩৮টি শিল্পের মজুরি বোর্ডের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অষ্টম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের ধারে-কাছেও ছিল না। নবম ওয়েজবোর্ডের ঘোষণায় তা আরো বেড়েছে। এমনকি সরকারি পে-স্কেলের বেতনও সংবাদপত্রের চেয়ে অনেক কম। এখন তা আরো বেড়ে যাবে।
নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের অধীনে সর্বনিম্ন গ্রেডের ( গ্রেড-৬ : পিয়ন, দারোয়ান, মালী) মোট বেতন করা হয়েছে ৩৫৬৭০ টাকা। যেখানে একই রকম কাজের জন্য বর্তমান সরকারি তেবন স্কেলে সর্বনিম্ন গ্রেডের (গ্রেড-২০) মোট তেন ১৫৩৫০ টাকা। অর্থাৎ সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন সরকারি বেতন স্কেলের তুলনায় প্রায় ২০৩২০ টাকা বেশি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বেতন একেবারেই অবাস্তব। অন্যদিকে নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী একজন রিপোর্টার গ্রেড-৩ এ যোগদান করবেন ৬৭১১২ টাকা বেতনে। যেখানে বর্তমান সরকারি বেতন স্কেলের অধীনে একজন সিভিল ক্যাডার শুরুতে গ্রেড-৯ এ যোগদান করেন ৩৫৬০০ টাকা বেতনে এবং একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শুরুতে মোট বেতন পান ৩৭৩০৫ টাকা। অর্থাৎ এখানেও সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড অনুসারে একজন রিপোর্টার একই শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন হলেও একজন সরকারি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার চেয়ে প্রায় ৩০-৩১ হাজার টাকা বেশি বেতন পাবেন। এভাবে তুলনা করলে প্রায় প্রতিটি গ্রেডেই নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের বেতন প্রায় দেড়-দুইগুণ বেশি হয়ে দাঁড়াবে। দেশের কোনো বহুজাতিক কোম্পানির বেতনও এই পর্যায়ে নয়। এই বেতন দেয়া যে কোনো সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য অসম্ভব ব্যাপার।
নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে গ্রেড ভেদে ৮০-৮৫% বেতন বৃদ্ধি ছাড়াও অবাস্তবভাবে প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাধারণ যাতায়াত ভাতা একধাপে ১০০% বৃদ্ধি, সাংবাদিকদের পেশাগত যাতায়াত ভাতা ৭১% বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক কর্মীদের পেশাগত যাতায়াত ভাতা ১০০% বৃদ্ধি, নৈশ পরিবহন সুবিধার বিকল্প ভাতা ১০০% বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি নোয়াব ওয়েজবোর্ড থেকে যেসব প্রান্তিক সুবিধাদি বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছিল এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় ভাতা বাদ না দিয়ে বরং বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত হয়নি বলে নোয়াব মনে করে। তবে বহুকাল পরে ওয়েজবোর্ডে আয়কর ও গ্র্যাচুইটির বিধানের সঙ্গে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ ও অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে যে বৈষম্যমূলক আইনগত দুর্বলতা ছিল তা সংশোধন করা হয়েছে।
এছাড়া নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে নোয়াবের আরো কিছু দাবি ছিল, যা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। তা হলো : সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে গ্রেড সংখ্যা মাত্র ৬টি। সরকারের জাতীয় বেতন স্কেলে ২০টি। ব্যাংক-বীমাসহ দেশের অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্রেডের সংখ্যা ১৮ থেকে ২২টি পর্যন্ত। তাই সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে গ্রেড সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮-২০টি করার জন্য যুক্তিসহ প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে প্রতি ৩ বছর পর পর এক মাসের মোট বেতন ও ৩০ দিনের বিনোদন ছুটির বিধান রাখা হয়েছে। সরকার ঘোষিত অন্যান্য শিল্পে তা নেই। নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডে বাড়ি ভাড়া দেয়া আছে ৬৫%। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪-এর বিধি ৩৩(এ) অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ৫০% আয়করমুক্ত। অবশিষ্ট ১৫% ব্যক্তির আয় হিসেবে ব্যক্তি খাতের আয়কর বাড়িয়ে দেয়। তাই সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে বাড়ি ভাড়া ৫০% করার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
সার্বিকভাবে নোয়াব থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়, ওয়েজবোর্ড কমিটি এবং মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে সংবাদপত্র শিল্পের সঙ্কট, সীমাবদ্ধতা ও নবম ওয়েজবোর্ডের ক্ষেত্রে বিবেচনার জন্য যেসব প্রস্তাব জানানো হয়েছিল, তার অধিকাংশই বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে যে ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ দেয়া হয়েছে তা সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানগুলো কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এ অবস্থায় নবম ওয়েজবোর্ডের রোয়েদাদ পুনর্বিবেচনাসহ সরকারকে সংবাদপত্র শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে অধিক মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে নোয়াব মনে করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।