পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের জন্য কাজ করা, জনগণকে সেবা দেয়া। আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিষয়ভিত্তিক ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। সেখানে নার্স লাগবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশে এবং বিদেশে বিশেষায়িত নার্সদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার জোগান দিতে তাদের প্রশিক্ষণকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা নার্সদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
গতকাল গাজীপুরের কাশিমপুর তেঁতুইবাড়িতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজের ১ম স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহ-সভাপতি শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজেদেরও এখন প্রচুর নার্সের দরকার। তাছাড়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি সেখানেও আমাদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স দরকার হবে। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকেও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসছি। তিনি বলেন, বিদেশে যেমন প্রশিক্ষণ চলবে তেমনি দেশেও যেন শিক্ষার মানটা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয় সে ব্যবস্থাটাও আমরা নেব। এই গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান দেশের আরো ছেলে-মেয়েকে মহান সেবামূলক নার্সিং পেশায় আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই এই হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা রোগীরা পাবে এবং যা সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
জরুরি রোগী আনা-নেয়ার জন্য সরকার এখানে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সেবা দেয়া। তিনি বলেন, আগামীতে একটি মেডিক্যাল কলেজ আমরা প্রতিষ্ঠা করব। ইতোমধ্যে সেজন্য হাসপাতালের পাশের খালের বিপরীত পাশে জায়গা নেয়া হয়েছে। আমরা সুন্দরভাবে এখানে একটি মেডিক্যাল কলেজ করতে চাই তাহলে পুরো জায়গাটি একটি স্বাস্থ্যসেবার হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
তিনি বলেন, দেশে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ২০০৬ সালে থাকা ৪৬টি থেকে বর্তমানে ১১১টিতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে নার্সিং পেশাটি এক সময় অবহেলিত ছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নার্সিং একটা সেবামূলক পেশা। যে পেশাটি আমি মনে করি সব থেকে সম্মানজনক একটি পেশা। কারণ, একজন অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তার সেবা করা, তার পাশে থেকে তাকে রোগমুক্ত করা এর থেকে বড় সেবা আর কি হতে পারে। অথচ আমাদের ডিপ্লোমা নার্সিংয়ের ওপর আর কিছু ছিল না।
তিনি বলেন, যে কারণে এই কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যেখানে গ্র্যাজুয়েটস নার্স হবে, নার্সরা ট্রেনিং নেবে, পিএইচডি করবে এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। নিজেদের মানব সেবায় দক্ষ করে গড়ে তুলবে। আর সে জন্যই নার্সদের বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ চাকরির আপগ্রেডেশন করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মর্যাদা না বাড়ানো হলে হয়তো অনেকেই এই পেশায় আসতে চাইবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস শিল্পনির্ভর গাজীপুরের শ্রমিক শ্রেণির জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা ও এই কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার একটি উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, শুরুতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে প্রথমে ১০ কোটি টাকা এবং আরো ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে দিয়ে ২০ কোটি টাকা দিয়ে এখানে একটি ট্রাস্ট ফান্ড করে দেয়া হয়। যাতে এখান থেকে একেবারে হতদরিদ্র রোগীরা যেন চিকিৎসাসেবা পেতে পারে।
এখানে আরো কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় রোগী আসে যাদের অপারেশন লাগে এবং অন্যান্য ব্যাপারেও অনেক অর্থ লাগে। সেখানে ৫ হাজার টাকার অধিক রোগীর জন্য বরাদ্দ করতে গেলে ট্রাস্টের অনুমোদন লাগে। যে কারণে আমরা আরো কিছু অর্থ বরাদ্দ দেবো। তবে জরুরি অবস্থার কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা অর্থের দিকে না তাকিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এখানকার চিকিৎসকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
দেশের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক স্বনামধন্য চিকিৎসকরা এই হাসপাতালে অন্তত সপ্তাহে একদিন করে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন, যার ফলে এই হাসপাতালটি নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে এখন স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। যেখান থেকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধও বিতরণ করা হচ্ছে। অথচ বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে সরকারে আসার পর এই ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধের যুক্তি হিসেবে তারা বলে, কমিউনিটি ক্লিনিকে মানুষ সেবা নিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেবে। অথচ প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য চালু করা এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমটি খুবই দরকারি। যেখানে দরিদ্র মানুষেরা সহজেই সেবা পেয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় প্রসূতি নারী ও শিশুরা। বাড়ির কাছেই থাকায় পায়ে হেঁটে এসেই তারা ডাক্তার দেখাতে পারেন।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর এটি একটি মানবিক উদ্যোগ, যা আমি ও আমার বোন শেখ রেহানা ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল জাতির পিতার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে শুরু করি এবং সে বাড়িটিও আমরা ট্রাস্টকে দান করে দেই। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ সেবাধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গাজীপুরের কাশিমপুর ইউনিয়নে ট্রাস্টের নিজস্ব জমিতে নির্মিত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ট্রাস্টের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেয়েছে।
এনার্জি প্যাক লিমিটেড শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজের জন্য দু’টি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মালয়েশিয়ার কেপিজে হেলথ কেয়ার ইউনিভার্সিটি কলেজের উপাচার্য এবং স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. দাঁতো লোকমান সাইম অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজের সিইও অধ্যাপক তৌফিক বিন ইসমাইল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।