Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ থেকে একজনও আসামে যায়নি

মানববন্ধনে মওদুদ আহমদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও ভারতের আসাম যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকার দিল্লিকে খুশি করার নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি বুঝতে পেরে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার আসামে নাগরিকপঞ্জি তৈরি করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলছে। একটা মিথ্যা বাহানা তুলে, একটা মিথ্যা অজুহাত তুলে আসামের কিছু মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করছে ভারত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) এ মানববন্ধন আয়োজন করে।
মওদুদ আহমদ বলেন, স¤প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির একজন নেতা বলেছেন, দুই প্যাকেট খাবার দিয়ে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে। তার মানেটা কী? কোনো বাংলাদেশি আসামে নেই। আসামে যারা আছেন, তারা আসামের নাগরিক, ভারতের নাগরিক।

সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ থেকে ভারতে কেন লোক যাবে? আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কি আসামের চেয়ে খারাপ? আমাদের অর্থনীতি আসামের চেয়ে অনেক ভালো। কেন আমাদের মানুষ আসামে যাবে?
মওদুদ বলেন, এই সরকার যেহেতু একটা নতজানু সরকার। সেহেতু এই সরকার রোহিঙ্গা ও এনআরসি ইস্যুতে কখনও সফল হতে পারবে না। কারণ, তারা দুর্বল, তাদের শক্তি নেই, জনগণের সমর্থন নেই। সেই জন্য তারা জোর গলায় এই ইস্যুগুলো তুলে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।

তিনি বলেন, এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ বিরাট সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। এই সঙ্কটের একটি হলো- রোহিঙ্গা, আরেকটি ভারতের আসাম রাজ্যের এনআরসি। এই নতজানু নীতির কারণে সরকার রোহিঙ্গা ও এনআরসি ইস্যুতে কখনও সফল হতে পারবে না। রোহিঙ্গা সঙ্কট বর্তমান সরকারের সৃষ্টি। এই রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য সরকারই সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তাদের ক‚টনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও তারা দেশে ফেরাতে পারেনি।

মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। বেগম খালেদা জিয়া এক বছর সাত মাস ধরে জেলখানায়। একটা বানোয়াট মামলায় তার সাজা হয়েছে। তার শরীর খুবই খারাপ। সাধারণত এ ধরনের অপরাধের জন্য আপিল করার পর কারও সাত দিনও জেলখানায় থাকার কথা নয়।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে তারা ভয় পায়, তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। এ কারণে তিনি শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ থাকা সত্তে¡ও এই অমানবিক সরকার বিভিন্ন অজুহাতে, কৌশলে ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জামিন আটকে রেখেছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও তার জামিন নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করছি, করে যাব। কিন্তু আইনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তার মুক্তি হবে রাজপথে। যদি রাজপথে আন্দোলন করতে পারি, তাহলেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবে। সেদিনের জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

মওদুদ আহমদ বলেন, যুবলীগ-ছাত্রলীগ গত ১০ বছর সারাদেশে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করেছে। আজ তাদের মুখোশ খুলে গেছে। আজকে বিরোধী দল নেই। কিন্তু তার পরও সরকার এমন অবস্থায় পড়েছে যে, বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে অপসারণ করতে হয়েছে। কেন? ঘুষের জন্য! তারা দুর্নীতি করেছে। একটা তালিকা তারা বের করেছে- ছাত্রলীগের ৫০০ নেতাকর্মী চাঁদাবাজ। এটা ৫০০ না, এটা ৫,০০০ হাবে, বা ৫ লাখ বা তার চেয়ে বেশিও হতে পারে।

তিনি বলেন, আজকে সরকার কী বোঝাতে চাচ্ছে? সরকার আজ পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশে মানুষের কাছে বলছে যে, এই ছাত্রলীগ-যুবলীগ টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ। এরা মানুষের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন করে, এরা জমি দখল করে, এরা মানুষের ওপর অত্যাচার করে অর্থ নেয়, মানুষকে গুম করে, গুম করে টাকা নেয়। এসবই তো আজ তারা প্রমাণ করেছে।

চলমান দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, কয়েক দিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম, দৈনিক নাকি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটা কাদের টাকা? জনগণের টাকা। কিন্তু কারা এটা ভোগ করছেন, যারা লুট করছেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, যারা এই ব্ল্যাক মার্কেটিং করেছেন, স্মাগলিন করেছেন এবং অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছেন, তারাই বিদেশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন আইন লংঘন করে।

বর্তমান সরকারের দুর্নীতি সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ বলেন, একটা পিয়নের চাকরির জন্য, সরকারি বা আধা সরকারি যেকোনো সংস্থায় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য টাকা দিতে হয়। একজন পিয়নের জন্য তিন লাখ টাকা, একজন নার্সের জন্য পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার নিয়োগের জন্য ব্রাউন এনভেলপ লাগে। টাকার খাম লাগে। অর্থাৎ এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ঘুষ-অন্যায় বা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা নেই।

অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (অ্যাব) সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ সেলিম ভ‚ঁইয়া, সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, সহ-প্রচার সম্পাদক শামিমুর রহমান শামীম, ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ