পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমাদের বৈঠকের সময়টাতে এসেত তুর্কি-মার্কিন প্রোডাকশন হাউস কারগা ৭-এর সাথে কাজ করছিল। সে আমাকে বলছিল, আমি তুর্কি টিভি সিরিজ নিয়ে লোকজনের সাথে কথা বলছিলাম। দেখলাম তারা প্রধানত পারিবারিক রোমান্টিক ছবি পছন্দ করে। যেখানে সবাই একে অপরকে আগলে রাখে। তারা ভেতর থেকে নয়, বাইরে থেকে বিপদ আসা দেখতে চায়। চায় আর্থ-সামাজিক শ্রেণির সেই কাহিনীতে এক বিরাট ভ‚মিকা থাকবে যেখানে এক গরিব ছেলে এক ধনী মেয়েকে ভালোবাসে বা এ রকম কিছু।
সাধারণত পাশ্চাত্যে এ ধরনের একটি গল্প ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় বলে বিবেচনা করা হয়। যেখানে থাকে আরো যৌনতা, সহিংসতা ও মাদক। তুর্কি টিভিতে আবার তা কম। তিনি এ প্রসঙ্গে ফাতমাগুল দম্পতির কথা উল্লেখ করেন যারা ৫৮তম এপিসোডের আগে একে অপরকে চুম্বন করেনি। ২০১৭ সালের এপ্রিলে আমি বৈরুতে ফাদি ইসমাইলের সাথে সাক্ষাত করেছিলাম। তিনি মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টারের (এমবিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ০৩ প্রোডাকশন্সের জেনারেল ম্যানেজার এবং সেই ব্যক্তি যিনি তুর্কি টিভিকে মধ্যপ্রাচ্যে চালু করেন। ইসমাইল হাসতে হাসতে বলেন, আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে টিভির মাধ্যমে তুর্কি সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছি।
এমবিসি ৪০ কোটি লোকের বাসস্থান মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বৃহত্তম সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান। এর রয়েছে নিউজ চ্যানেল, একটি মহিলা চ্যানেল, একটি বলিউড চ্যানেল এবং ২৪ ঘণ্টার ড্রামা চ্যানেল যা মিসরীয় সোপ, কোরিয়ান ড্রামা ও লাটিন আমেরিকান টেলিনভেলা প্রদর্শন করে।
২০০৭ সালে ইসমাইল এক ক্রেতার সিনেমা উৎসব দেখার জন্য তুরস্কে যান। তিনি একটি ছোট কিওস্কে টিভিতে স্থানীয় একটি টেলিভিশন সিরিজ প্রদর্শিত হতে দেখেন। তিনি বলেন, আমি থামলাম ও সেটা দেখলাম। কিন্তু কিছু বুঝলাম না। ভালো হত যদি তা শিগগিরই আমি আরবি ভাষায় দেখতে পারতাম। আমি মনে মনে এটা আরবি ভাষায় রূপান্তর করলাম। দেখলাম সাংস্কৃতিক, সামাজিক, খাবার, পোশাক সব কিছুই আমাদের মত। খুশিতে চিৎকার করে উঠলাম- ‘ইউরেকা।’
ইসমাইল তার চ্যানেলের জন্য একটি তুর্কি সিরিজ কিনলেন। তিনি প্রথম শো’র নামটি মনে করতে পারলেন না। কারণ সে সবেরই নাম আরবিতে করা হয়েছিল। প্রতিটি সিরিজের নামের সাথেই লাভ শব্দটি যোগ করা হয়েছিল- যেমন বøু লাভ, লং লাভ, শর্ট লাভ, কিলিং লাভ ইত্যাদি। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের জন্য গুমুস-এর নাম করা হয়েছিল নূর- আর তা ব্যাপক সাফল্য পায়।
মিসরীয়রা সিনেমার জন্য বিখ্যাত, তা সত্তে¡ও ১৯৯০-এর দশকে সিরীয়রা এ অঞ্চলে বাজার দখল করার পূর্ব পর্যন্ত টিভি অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মিসরীয়দেরই প্রাধান্য ছিল। সিরীয় অভিনেতারা তাদের নাটকীয় ও কমেডিক দক্ষতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তাদের পরিচালকরা ছিলেন শিল্পী। রাষ্ট্রীয় অনুদানে প্রতিভাবান চিত্রনাট্যকাররা উন্নত মানের শো রচনা করেন।
সরকার টেলিভিশন শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ প্রদান করে। সরকার অনুষ্ঠান নির্মাতাদের জন্য ক্যামেরা, সরঞ্জাম, সরকারি অনুদান প্রদান ও সিরিয়ার ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে চিত্রায়নের অনুমতি দেয়। কিন্তু তারপর সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়। দেশটির উজ্জ্বল সম্ভবনা বিলুপ্ত হয়। আর এ সময় তুরস্ক সে বাজারে প্রবেশ করতে উদ্যোগী হয়।
সিরীয় নাটকগুলো প্যান-আরব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়ায় এমবিসি সকল তুর্কি ড্রামা সিরীয় আরব ভাষারীতিতে রূপান্তরিত করে। ইসমাইল বলেন, এটাই আমাদের বিপুল সাফল্যের কারণ। তুর্কি ড্রামা মধ্যপ্রাচ্যের বাজার দখলের আগে লেবাননের মানুষ মেক্সিকো ও ব্রাজিলের টেলিনভেলা দেখত। যদিও সেগুলো জনপ্রিয় ছিল কিন্তু দুটি কারণে তা তুর্কিদের হৃদয় জয় করতে পারছিল না।
প্রথমটি ছিল ভাষা সমস্যা। টেলিনভেলাগুলো মানসম্মত সাহিত্যিক আরবি ভাষা ফুশায় ডাব করা হত যা ইরাক থেকে সুদান পর্যন্ত মানুষ বুঝত। সংবাদপত্র, সাময়িকী ও সংবাদ পাঠেও এ ভাষাই ব্যবহার হয়। এটা স্থানীয় কথ্য ভাষা ও অশ্লীল শব্দমুক্ত আনুষ্ঠানিক, ক্লাসিক্যাল ভাষা।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে মূল্যবোধ। বৈরুত ভিত্তিক টিভি প্রোডাকশন কোম্পানি আইম্যাজিকের ফরম্যাট ডিস্ট্রিবিউশন ও লাইসেন্সিং কোঅর্ডিনেটর ইমান মাজহার বলেন, মেক্সিকানরা আসলে আমাদের মত নয়। আইম্যাজিক আরবস গট ট্যালেন্ট এবং এক্স ফ্যাক্টরের মধ্যপ্রাচ্য সংস্করণের নির্মাতা। তারা কিছু নতুন ফরমাট নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে যেমন ওয়ার্ল্ড বেলিড্যান্স চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ইসলাম অনুমোদিত এক্সট্রিম মেকওভার। এখানে প্রতিযোগীরা স্রষ্টার অহঙ্কৃত নকশা পরিবর্তন করে না। কিন্তু জীবনের প্রতি হুমকি সৃষ্টিমূলক বিষয়ের কারণে গঠনমূলক অস্ত্রোপচার চালায়।
টেলিনভেলাগুলোর স্মৃতি মনে করে মাজহার তার মাথা ঝাঁকান। বলেন, ভাবুন “আপনার একটি মেয়ে আছে, আপনি জানেন না তার পিতা কে। একই ভাবে আপনি জানেন না তার মা কে। গল্পগুলো নৈতিকতা মুক্ত। দিন শেষে পছন্দ করি আর না করি। আমরা সবাই একটু হলেও রক্ষণশীল হতে চাই। তুর্কিরা এতে মুগ্ধ।
এগুলো হচ্ছে প্রকৃতই সেই মিশ্রণঃ ইউরোপীয় স্বাধীনতা যা সবাই চায় এবং একই সাথে আমরা যার সম্মুখীন, সেই সমস্যা- রক্ষণশীলতা। লোকজনের নাম আমাদের মত একই রকম, আমাদের মত একই গল্প। তুর্কিরা তা ভালোবাসে।” (আগামীকাল শেষ পর্ব)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।