Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মহামারীর চেয়েও বেশি মানুষ মরছে সড়কে

যাত্রী কল্যাণ সমিতির আলোচনা সভা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, প্রতিদিন রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে। মহামারির চেয়েও বেশি মানুষ মরছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। যাত্রী অধিকার দিবসের ঘোষণা উপলক্ষে সংগঠনটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। একই সভায় আওয়ামী লীগ ক্রমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মন্তব্য করে সুলতানা কামাল বলেন। আওয়ামী লীগ দেশের নাগরিকদের ‘নাগরিকবোধ’ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খাঁন বাদল এমপি, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক আবু সাঈদ খাঁন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ মজুমদার, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ প্রমুখ বক্তব্য দেন ।
সুলতানা কামাল বলেন, পরিবহন খাত সামগ্রিকভাবে সুশাসনের বিষয়। এই সেক্টরে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে না পারলে এভাবেই চলতে থাকবে। প্রতিদিন রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে। মহামারির চেয়েও বেশি মানুষ মরছে। একটা দেশে এটাতো হতে পারে না। সরকারের বিবৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের অনেকে বলেন- দেশ সিঙ্গাপুর-হংকংয়ের মতো উন্নত হয়ে গেছে। সেসব দেশের পরিবহণ ব্যবস্থা তো অনেক উন্নত। কিন্তু আমাদের দেশের সড়কগুলো এত অনিরাপদ কেন? রাস্তা ভালো না, ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ খায়, আরও অনেক সমস্যার কথা বলতে শুনি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এগুলোর কারণে যাত্রীরা কেন ভোগান্তির শিকার হবে? এখন গাড়িতে উঠে ভাবি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব কিনা! মেয়েরা ভাবে- সম্মান নিয়ে, ধর্ষিত না হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব তো!

সড়কের বিভিন্ন নৈরাজ্য ও অব্যবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তারা একেবারে সাধারণ মানুষ। যারা রাস্তায় চলাচলে বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তা পান তাদের তো সড়কে প্রাণ দিতে হয় না। তারা অনেক নিরাপদেই রাস্তায় চলাচল করেন। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বরকে যাত্রী অধিকার দিবস ঘোষণার উদ্যোগে সংহতি জানান।

মইন উদ্দীন খান বাদলকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে আমাদের তো কোনো পারমিশনই দেয়া হয়নি। আমাদের বলা হচ্ছে তোমরা কারা? আমরাই (সরকার) সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা এসেছি। যা খুশী তাই করব। তোমরা কারা? আমরা কথা বললেই তো রাজার সঙ্গে শত্রুতা হয়ে যায়। সত্য কথা বলার কারণেই মিথ্যা মামলায় মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে জেলে যেতে হয়েছে।

নাগরিকদের দায়িত্ব আছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, রাজনীতিবিদদেরও দায়িত্ব আছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ জনমানুষের দল। অন্য যেকোনো দলের চেয়ে মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা বেশি। কিন্তু তারা নাগরিকদের ‘নাগরিক বোধ’ দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ক্রমে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন প্রজায় পরিণত হয়েছি।

সাংসদ মইন উদ্দীন খাঁন বাদল বলেন, ৭০ শতাংশ সংসদ সদস্যই কোটিপতি। তারা তো গত ৩০ বছরেও বাসে চড়েননি। তাহলে সাধারণ মানুষের কষ্ট তারা কী করে সংসদে বলবেন? সাধারণ মানুষের চেয়ে ভিআইপিরাই সড়কে বেশি নিয়মশৃঙ্খলা ভাঙেন। যারা আইন করেন, তারাই তা পরের দিন ভঙ্গ করেন। তিনি আরও বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণের সংস্কৃতি বন্ধ করা উচিত। একের পর এক ফ্লাইওভার করা হচ্ছে। এ ফ্লাইওভারগুলোতে কয়টা বাস ওঠে আর কয়টা প্রাইভেট কার ওঠে? উন্নয়ন করেন ভালো কথা কিন্তু এই উন্নয়ন কি ধনীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য, নাকি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য? তিনি পুলিশের বেতন বন্ধের দাবিসহ রাজধানীতে জনদুর্ভোগ কমাতে প্রধানমন্ত্রীকে হেলিকপ্টার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, সড়কে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। অথচ নিকটাত্মীয় কেউ মারা না গেলে এটা কোনো বিষয়ই না। আমরা প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা পড়ছি। এটা নিছক একটা সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। অথচ জনগণ কী সেবা পেল- তা বলা হচ্ছে না।
সভায় সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ১৯ বছর আগে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। যাত্রীদের বঞ্চনা, নিপীড়ন, হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরার মাধ্যমে সরকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। এতে কখনো কখনো সরকার, কখনোবা কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছে। তবু আমরা পিছপা হইনি।

আবু সাঈদ খাঁন বলেন, এদেশে যাত্রী হয়রানি ও সড়কে নৈরাজ্য সবচেয়ে বেশি। তাই যাত্রী অধিকার দিবসের ডাক বাংলাদেশ থেকে দেয়া হয়েছে। হোসেন আহমদ মজুমদার বলেন, যোগ্য চালকের সংকট, ছোট যানবাহনের আধিক্য ও দৌড়াত্ম্য আইনের অপপ্রয়োগ জিইয়ে রেখে সড়কে নিরাপত্তা বা যাত্রী অধিকার সুরক্ষিত হবে না।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার মুক্তি দিন উপলক্ষে ১৩ সেপ্টেম্বরকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ‘যাত্রী অধিকার দিবস’ পালনের ঘোষণা করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ