Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিহিংসার রাজনীতি করলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কখনোই প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করলে এদেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।

সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষ হত্যার রাজনীতি করে না। প্রতিহিংসার রাজনীতিতেও বিশ্বাসী নয়। আমরা যদি তা বিশ্বাস করতাম তাহলে এ দেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। বিএনপির দ্বারা আমরা যে পরিমাণ হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার কয়েছি তা আর কেউ হয়নি।

বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা তার প্রশ্নে দেশে বর্তমানে মানুষ হত্যা থেকে মশা মারা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রয়োজন হয় দাবি করে এটাকে রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়া, অকার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে বলে অভিযোগ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা একটি কার্যকর রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত উল্লেখ করে বিএনপির এমপি বলেন, এই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার চিত্র বহন করে না?

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বিএনপি এমপির প্রশ্নকে অনাকাক্সিক্ষত, অসংসদীয় ও অবান্তর বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ওই সংসদ সদস্য (রুমিন ফারহানা) ‘মানুষ হত্যা’ আর মশা মারাকে একই সমতলে নিয়ে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাজ মন্ত্রীদের কাজের তদারকি করা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ আমাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। আরাম-আয়েশের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে জনগণের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার একটি আলাদা জায়গা রয়েছে। সেটাই আমি প্রতিপালন করার চেষ্টা করছি। সেজন্যই দিন-রাত পরিশ্রম করি। কোনও প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করার জন্য নয়, সব প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকি।

সরকারের সেক্টরভিত্তিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বসেরার জায়গা করে নিয়েছে। এসব আপনা-আপনি হয়নি। সব করতে পরিশ্রম হয়েছে। প্রতিষ্ঠান অকার্যকর থাকলে এসব অর্জন সম্ভব হতো না। রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তা না করে সংসদ সদস্যের (রুমিন ফারহানা) নেত্রী খালেদা জিয়ার মতো দুপুর ১২ পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালেই কি প্রশ্নকারী খুশি হতেন?

অকার্যকর রাষ্ট্রের উদাহরণ বিএনপি সৃষ্টি করেছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির শাসনামলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতো রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তির কাছ থেকে। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ঘুমিয়ে থাকতেন, সিদ্ধান্ত নিতো তার পুত্র হাওয়া ভবন থেকে। মন্ত্রী-সচিবেরা হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ আমার মা, ৩ ভাই এবং ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের রক্তে রঞ্জিত হয়ে খুনিদের সহায়তায় ক্ষমতায় বসেছিলেন। জিয়াউর রহমান এ দেশে হত্যা, ক্যু, অপরাজনীতি শুরু করেন। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সংস্কৃতি চালু করেন। একটা পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করে দেন জিয়াউর রহমান। এ কারণে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের মুখে মানুষ মারার বিষয়টি অবলীলায় চলে আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের চেয়েও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এককাঠি সরেস’ সে প্রমাণ তিনি রেখেছেন। এদেশে জঙ্গি সৃষ্টি, অগ্নিসন্ত্রাস, বোমা হামলা, মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা আত্মসাৎসহ হেন অপকর্ম নেই যে তিনি ও তার দুই পুত্র এবং দলের নেতারা করেনি। এসব ধারণা থেকেই প্রশ্নকারী আমাকে খালেদা জিয়ার সমান্তরালে ফেলেছেন।

ভারতের অভ্যন্তরীণ কারণে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হয়নি
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে বাংলাদেশ যাতে ন্যায্য হিস্যা পায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানিপ্রবাহ হ্রাসের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে এবং এটি সুরাহার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির জন্য ভারতের সঙ্গে আমাদের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।

তিস্তাসহ অন্যান্য সব অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের বিষয়টি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে এখনও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তাদের সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আগামী অক্টোবরে ভারত সফরের সময়ও আমি এ বিষয়ে (তিস্তার পানি) ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।

মিয়ানমার শিগগিরই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে সংরক্ষিত আসনের রুমানা আলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। ২২ আগস্ট ২০১৯ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ ঠিক করা হয়। যাবতীয় প্রস্তুতি থাকা সত্তে¡ও কোনও রোহিঙ্গা ফিরে যেতে সম্মত না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।

এসময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণ হিসেবে জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়ন না হওয়া, রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ পরিবার অনুযায়ী ভেরিফিকেশন না করা, নিজ বাসস্থান বা গ্রামে ফেরত ও স্থাবর সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা, স্বাধীনভাবে চলাফেলা ও জীবিকার অধিকারসহ অন্যান্য নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তার অভাব এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া। এসব কারণে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চাইছেন না।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগিরই রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া শুরু হবে।



 

Show all comments
  • Ali Akbar ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    বিএনপি শেষ করতে করেননি কি ! দলীয় নেত্রীকে জেলে সহ শীর্ষ নেতা সবাইকে জেল সহ লক্ষ লক্ষ মামলা দেবার পর বলছেন প্রতিহিংসাপরায়ণ আপনি নয় তা আবার জনগনকে বিশ্বাস করতে বলছেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kader ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    ঘুম ভাঙলে সকাল না ভাঙলে পরকাল কিসের এত অহংকার?
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Zabid ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    Don't think BNP exists in Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Belayet Hossain ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    বিএনপি বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে, তা হউক ৪০, ৫০, অথবা ৬০ শতাংশ, না তার চেয়ে অনেক কম,কিন্তু আছে, ছড়িয়ে,এলোমেলো ভাবে, তা হলে বিএনপি অস্তিত্ব থাকতো না, এ কথা বলা টা একে বারেই মানায় না। আমি বিএনপি ভোটার ও নয়, সত্যি কথা টাই বললাম।
    Total Reply(0) Reply
  • আত্মহনন অরিন্দম ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 1
    বি এন পি কি এখনো আছে? সেটা দেখতে কেমন? খায় না মাথায় দেয়??
    Total Reply(0) Reply
  • Md Azad ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    প্রকৃত মানুষ বা বড়ো মনের মানুষ বা দেশ দরদি মানুষ এইভাবে কথা বলেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Lubon Mahmud ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 1
    সহমত নেত্রী.
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Khan ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    আর শহীদ জিয়া যদি আওয়ামী লীগকে পূর্ণ জনম না দিতো তাহলে 40 বছর আগে আমলীগ হারিয়ে যেত
    Total Reply(0) Reply
  • ash ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৫:৩৪ এএম says : 0
    PROTIHINGSHA ??? SHETA KARA KORE?? BANGLADESHER MANUSH KI ONDHO ??
    Total Reply(0) Reply
  • Enamul Haque Sumon ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৪৩ এএম says : 0
    মাননীয় নেত্রী দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৯:৪৪ এএম says : 0
    ভারত সফরে আশা করি তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ