পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোংলা সমুদ্র বন্দরে ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের বহরে নতুন সংযোজন মোবাইল হারবার ক্রেন। আধুনিক প্রযুক্তির ও বহুমুখী ব্যবহারের সুবিধা সম্পন্ন এই ইকুইপমেন্টের সাহায্যে গতকাল (বুধবার) সর্বপ্রথম শুরু করা হলো আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী জাহাজের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। এর মধ্যদিয়ে ক্রেন-বিহীন জাহাজসমূহে কন্টেইনার ওঠানামায় সক্ষমতা অর্জন করলো বন্দর। ফলে গতি ও দক্ষতায় দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ এ সমুদ্র বন্দর আরও এগিয়ে যাবে এমন আশাবাদ কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারিদের। বিশে^র সমুদ্র বন্দরসমূহে বর্তমানে ডেরিক বা ক্রেন-বিহীন কন্টেইনার জাহাজই বেশিরভাগ গমনাগমন করছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা বন্দরের জেটিতে গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোবাইল হারবার ক্রেন (জার্মান ম্যানুফ্যাকচারার) সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৬ জুন এটি বন্দরে এসে পৌঁছায়। আরো তিনটি ক্রেন আমদানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। গতকাল এর অপারেশনাল কার্যক্রম চালুর সময় মোংলা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সদস্য (অর্থ) ইয়াসমিন আফসানাসহ শীর্ষ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মোবাইল হারবার ক্রেন সর্বোচ্চ ১৪ সারি কন্টেইনার বোঝাই গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং সর্বোচ্চ ৮৪ মেট্রিক টন উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন। এর সাহায্যে অল্প সময়ে অনেক বেশি কন্টেইনার খালাস করা সম্ভব হবে। ফলে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের টার্ন রাউন্ড টাইম (জাহাজের গড় অবস্থানকাল) কমে আসবে। এর মাধ্যমে বিদ্যমান জেটিতে বার্ষিক অতিরিক্ত ৩৬টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ও বার্জ হ্যান্ডলিং করা যাবে। এর ফলে বার্ষিক ১২ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত আয় হবে বন্দরের।
এ প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মোবাইল হারবার ক্রেন বন্দরের যান্ত্রিক সরঞ্জাম বহরে যুক্ত হয়ে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর ফলে সামগ্রিকভাবে বন্দর অধিকতর গতিশীল হবে। বেড়ে যাবে বন্দরের সক্ষমতা এবং আয়। মোংলা বন্দরের ৭০ বছরের পথযাত্রায় উন্নত যান্ত্রিক প্রযুক্তি সংযোজনে আরেক ধাপ অগ্রগতি। তিনি জানান, আরও তিনটি মোবাইল হারবার ক্রেন আমদানি প্রাক্রিয়ায় রয়েছে। এগুলোর বহুমুখী ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া বন্দরের গতি, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী বছর দেড়েকের মধ্যে মোট ১৭৫টি বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট (যন্ত্রপাতি) সংগ্রহ করা হবে।
জানা গেছে, মোবাইল হারবার ক্রেনটির সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফ পাওয়ারটেক লি.। ৬৪ চাকাযুক্ত এই ক্রেন বিদ্যমান জেটির লোড সহনশীলতার সীমার মধ্যে ৫ থেকে ৯ নম্বর জেটি বরাবর চলাচল করতে পারবে। এ ক্রেনের সাহায্যে তিনটি মুডে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। যেমন- স্প্রেডার অপারেশন, গ্রাব অপারেশন ও হুক অপারেশন। মূলত: কন্টেইনার অপারেশন কাজে মোবাইল হারবার ক্রেন ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর বুমটি ৪৮ মিটার দীর্ঘ হওয়ায় খুব সহজে ১৪ সারি কন্টেইনার বোঝাই গিয়ারলেস জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস, বোঝাই করতে পারবে। ৪০ মিটার কার্যকরি রেডিয়াসে অটোমেটিক স্প্রেডারের নিচে সর্বোচ্চ ৩২ টন লোড হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষম ক্রেনটির সর্বোচ্চ উত্তোলন সক্ষমতা ৮৪ মেট্রিক টন।
তাছাড়া পানগাঁও বন্দরের কন্টেইনার বার্জ কার্গোর জাহাজের মাধ্যমে মোংলা বন্দরে এনে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। সমুদ্রগামী গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য এটি ব্যবহার করা যাবে। ডেরিক ক্রেন সম্বলিত জাহাজের ক্রেন অচল হয়ে গেলে সেই জাহাজের কন্টেইনার মোবাইল ক্রেনের সাহায্যে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। সাড়ে ৩ মিটার ওয়াকিং রেডিয়াসে সর্বোচ্চ ৮৪ মেট্রিক টন ও গ্রাফের মাধ্যমে লুজ মালামাল হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
গতকাল মোবাইল ক্রেনের কার্যক্রম চালুর সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্র. ও উ.) প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন খান, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম আব্দুল আলীম, সচিব ওহিউদ্দিন চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী, পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান জানান, অতীত অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলার কারণে এবং সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনার অভাবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ এ সমুদ্র বন্দর লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমান সরকার এ বন্দরের প্রতি মনোযোগী হয়ে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, উন্নয়নের সুফল মিলছে। ২০০৯ সাল থেকে লাভজনক হয়ে উঠেছে। গতবছর ১৩০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে এ বন্দর।
২০২১ সালে পদ্মা সেতু চালুর লক্ষ্য ঘিরে মোংলা বন্দরের ব্যাপক ড্রেজিং, অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি, বন্দরের সম্প্রসারণসহ বহুমাত্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এসব লক্ষ্য অর্জনে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একাধিক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্বগ্রহণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।