Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়ছে বিআইডব্লিউটিসি’র মূলধনের পরিমাণ

জাতীয় বস্ত্র দিবস ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বাড়িয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন আইন, ২০১৯ (বিআইডব্লিউটিসি) এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এসএমইখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ এবং অন্যান্য সুবিধা সহজে একটি নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া প্রতিবছরের ৪ ডিসেম্বরকে জাতীয় বস্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ সংক্রান্ত আইনটি পাকিস্তান আমল থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত আছে। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার এবং ১৯৭৬ ও ১৯৭৯ সালে এটি সংশোধন হয়। আইনটি সামরিক আমলের হওয়ায় আপডেট করে বাংলায় করার সিদ্ধান্তে নতুন আইনটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনুমোদিত মূলধন আগে ছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। এখন হবে ৫০০ কোটি টাকা। সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে যে অর্থ যোগান দেয়া হবে সেটিই পরিশোধিত মূলধন। এখন সেটা বাড়তে বাড়তে ৪৫ কোটি টাকায় এসে থেকেছে। পরিশোধিত মূলধের বিষয়ে একটি পর্যবেক্ষণ আছে যে, আল্টিমেটলি সরকার এটা যোগান দিয়ে ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করবে।

তিনি বলেন, কর্পোরেশনের পরিচালনা পর্ষদ আগের মতোই একজন চেয়ারম্যান ও চারজন পরিচালক নিয়ে গঠিত হবে। এখন সঙ্গে আরেকজন খন্ডকালীন পরিচালক যুক্ত হবেন, যিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হবেন। সভায় চেয়ারম্যানসহ তিনজন থাকলে কোরাম হবে। বার্ষিক প্রতিবেদন দেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা পরবর্তী অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬ মাস আগেই প্রণয়ন করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কর্পোরেশনের পাওনা আদায়ের জন্য নতুন ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। আগে কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান ছিল না। এখন বলা হয়েছে, কর্পোরেশনের যদি কোনো পাওনা থাকে তবে সেটা ১৯১৩ সালের সরকারি পাওনা আদায় আইন অনুযায়ী আদায়যোগ্য হবে। কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো লিগ্যাল স্ট্যাটাস দেয়া ছিল না যে তারা কীভাবে গণ্য হবেন। এখন বলা হয়েছে, তারা পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বা জনসেবক হিসেবে গণ্য হবেন।

মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বৈঠকে এসএমই নীতিমালা ২০১৯’ এর খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় শিল্পনীতির আলোকে এই নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এই খাতে প্রায় ৭৮ লাখ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। জিডিপিতে এই খাতের অবদান হলো প্রায় ২৫ শতাংশ। তিনি বলেন, এসএমই’র বাইরে মাইক্রো এবং কুটিরশিল্পও যুক্ত করা হয়েছে। মাইক্রো, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মিলে এসএমই। মোটামুটি সারা পৃথিবীতেই এভাবেই এসএমই গণ্য করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ছয়টি উদ্দেশ্য সামনে রেখে নীতিমালা করা হচ্ছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ, বাজারে প্রবেশের সুযোগ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ, ব্যবসায় সহযোগিতা এবং তথ্যের সুযোগ প্রাপ্তি।

নীতিমালায় বাস্তবায়ন কৌশলে বলা হয়েছে, কৌশলগত অর্থায়ন সুবিধা প্রাপ্তিতে এসএমইখাতের সুযোগ বৃদ্ধি করা, এসএমইখাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করা, অর্থায়নের ব্যবস্থা করা, এসএমই ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড চালু করা। এই ফান্ড চালু হলে মটগেজ থাকবে না, অর্থপ্রাপ্তি সহজ হবে। সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়াও নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (স্টার্টআপ) করার ক্ষেত্রে সহায়তা করা, অনলাইন বা ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে স্টার্টআপ প্রক্রিয়া সহজ করার কথা বলা রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নীতিমালায় ই-কমার্স, অনলাইন সাপোর্ট, আউট সোর্সিং ও আইটিভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এসএমই’দের সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা বলা আছে। তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ঋণ দেয়া, তহবিল গঠন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্বুব্ধকরণ এবং বাজার সংযোগে সুযোগ বৃদ্ধি করা। টেকসইয়ের জন্য ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এসএমই তথ্যভান্ডার তৈরি, পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠায় এসএমই’দের উৎসাহিতকরণ, শিল্প বর্জ ব্যবস্থাপনায় এসএমই’দের প্রণোদনা দেয়া, পরিবেশবান্ধব শিল্প-প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এসব নীতি-কৌশল বাস্তবায়নের জন্য দুই ধরনের পর্ষদ থাকবে। শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩৭ জনের পর্ষদে প্রতিমন্ত্রী সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বেসরকারিখাতের পাঁচজন প্রতিনিধি থাকবেন। আর সচিবের নেতৃত্বে পর্ষদে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২৯ জন সদস্য থাকবেন। এই নীতিমালা ২০১৯-২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এসএমই এর জন্য ২০০৫ সালে একটি কৌশল ছিল। এবারই প্রথম নীতিমালা হলো।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, প্রতিবছরের ৪ ডিসেম্বরকে জাতীয় বস্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপনের অনুমোদন দিয়েছে। দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা পরিপত্রের ‘খ’তে এটি অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উদযাপন মানে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া যে আজকে বস্ত্র দিবস। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাধীনতা এবং বিজয়কে একসঙ্গে নিয়ে চলতে চাই। বস্ত্র সেক্টর আমাদের সর্বোচ্চ যোগানদাতা। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আমরা বস্ত্র খাত থেকেই পাই। এর আগে স্বাধীনতার মাস মার্চে পাট দিবস এবং বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বস্ত্র দিবস পালনের প্রস্তাব করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ