Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুবককে মুক্তির আদেশ ছয় পুলিশকে শোকজ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নামের মিলে পুলিশের ভুলে গ্রেফতার হয়ে ৩৩ দিন ধরে কারাগারে থাকা কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার উদিয়ারপাড়ার (স্কুলপাড়া) সিরাজুল হকের ছেলে মো. জামসু মিয়াকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালত এ আদেশ দেন।

অন্যদিকে ভুল আসামি জামসু মিয়াকে গ্রেফতার করার জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামানসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভুল আসামি জামসু মিয়ার পক্ষে আইনজীবীদের এক আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেয়। অপর পুলিশ সদস্যরা হলেন, পরোয়ানা তামিলকারী এসআই শামছুল হাবীব, এসআই ফারুক আহমেদ, তিন এএসআই আব্দুল হালিম, উজ্জ্বল ও আজিজুল। এর আগে আদালতের আদেশ অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার ওসি মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামান আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, মূল আসামি মো. জামসু মিয়া (সাগর), পিতা সিরাজ সিয়ার বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা পাওয়ার পর তা তামিলের জন্য এসআই শামছুল হাবীবের নামে হাওলা করা হয়। যা গত ৮ আগস্ট এসআই ফারুক আহমেদ, তিন এএসআই আব্দুল হালিম, উজ¦ল ও আজিজুল সোর্সের দেয়া তথ্য মতে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। তবে গ্রেফতারকৃত জামসু মিয়া ঢাকার আদালতে কোনো মামলা নেই বলে জানান। তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে গ্রেফতারকৃত জামসু মিয়াকে মুক্তির প্রার্থনা করেন। গতকাল সোমবার শুনানিকালে আদালতে মামলার বাদী মাহুরা খাতুন উপস্থিত হন। তিনিও গ্রেপ্তারকৃত আসামি তার স্বামী নন বলে আদালতকে জানান।
অন্যদিকে আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ ৩৩ দিন কারাগারে থাকা জামসু মিয়ার মুক্তি এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন। আদালত আদেশ দেয়ার পর আদালতে উপস্থিত জামসু মিয়ার ছেলে মো. তুষার মিয়া এবং বোন জামাই কাঞ্চন মিয়া বলেন, জামসু মিয়াকে গত ৭ আগস্ট রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। তারা কোনো কাগজ না দেখিয়ে থানায় যেতে বলে। পরদিন সাবেক চেয়ারম্যান ও এক আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে থানায় যাই। সেখানে জামসু মিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকায় কোনো মামলা নেই বললেও তারা কোনো যাচাই বাছাই না করেই আদালতে যেতে বলেন।

মামলার বাদী মানহুরা বলেন, তার স্বামী জামসু মিয়ার (সাগর) ২০১৫ সালে তিনি মামলা করেন। মামলার পর একবার জামিন নিয়ে তিনি ২০১৬ সালে মারিসার্স পালিয়ে যান। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। জানা যায়, ঢাকা সিএমএম আদালতে ২০১৫ সালের ১১ জুন মানহুরা খাতুন (২৬) তার স্বামী ইটনা থানার মো. সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. জামসু মিয়ার (সাগর) বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে সিআর ২১৯/২০১৫ মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি ২০১৬ সালের ১ মার্চ থেকে পলাতক। ওই মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন গত ৫ ফেব্রুয়ারি আসামির অনুপস্থিতিতে এক বছর তিন মাসের কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের রায় দেন। রায়ের সময় আসামি পলাতক থাকায় আদালত আসামির স্থায়ী ঠিকানার ইটনা থানায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের মাধ্যমে একটি সাজা পরোয়ানা জারি করেন। ইটনা থানায় ওই পরোয়ানা পৌছানোর পর নামের মিলে গত ৭ আগস্ট জামসু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৫ আগস্ট আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ ভুল আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে মো. জামসু মিয়ার মুক্তির আদেশ প্রার্থনা করেন। ওইদিন একই আদালত গ্রেপ্তারকৃত জামসু মিয়া এবং সাজা প্রাপ্ত আসামি একই ব্যক্তি কি না সে বিষয়ে তদন্ত করে ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ