পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক’ উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং তা জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে মার্শাল ল’ জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়াউর রহমান। তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদও। হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরে তাদেরকে আর প্রেসিডেন্ট বলা যায় না -বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি সংসদে পাস করান।
শোক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সংসদ প্রস্তাব করছে যে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ, আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুম বিরোধী দলের নেতা এইচএম এরশাদের মৃত্যুতে শোক জানান। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ন্যাপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক এমএলএ প্রিন্সিপাল খালেদা হাবিব, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারা বেগম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ছিলেন ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তাকে প্রার্থী করার কথা এরশাদ নিজেই বিদেশি পত্রিকায় বলেছেন। আমরা ওইসময় প্রতিবাদ করেছি। এরশাদ ’৮২ সালে যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেটির সুযোগ দেন কিন্তু খালেদা জিয়া। তিনি শুধু দুটি বাড়িই নয়, ১০ লাখ টাকাও পেয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে তার কোন ডায়েরিই হয়নি, তদন্তই হয়নি এখনো পর্যন্ত। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন জিয়া হত্যার জন্য এরশাদকে দায়ী পর্যন্ত করেননি। আমরাই প্রতিবাদ করি। কারণ এক স্বৈরাচারের পরে আরেক স্বৈরাচার আমরা চাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মার্শাল ল’ জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে জিয়া, তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছেন এরশাদও। হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরে তাকে আর প্রেসিডেন্ট বলা যায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, এরশাদ কিছু ভাল কাজ করেছেন এটা সত্য। তবে তার সময়ে বার বার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ময়দানে সভা করতে বাধা দেয়া হয়। ওই সভায় গুলিতে নিহত হন ২ জন। ওই বছর নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তিনি আরো বেশি বিতর্কিত হন। তার বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। এসব কারণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি এবং তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
সংসদ নেতা বলেন, শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতান্ত্রিক ধারা শক্তিশালী হয় না। গত টার্মে এবং এবারো জাতীয় পার্টি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এজন্য এবারের সংসদ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সংসদের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন যে ধরনের আচরণ করা হতো, মোমবাতি হাতে নিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকা, স্পিকারকে মারার চেষ্টা, চেয়ার ছোড়া- সবই করেছে। বর্তমানে সংসদ অনেক ভাল আচরণ করছে বিরোধী দল। আজকের পার্লামেন্টে আমরা বিএনপিকে অনেক উদারতা দেখাচ্ছি। বরং জাপা বিলসহ সব ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা করে, তাতে জনগণের আস্থা ফিরে এসেছে গণতন্ত্রের ওপর। গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে জসনগণের স্বার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে উন্নয়নের ফসল জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছায় সেদিকে লক্ষ্য করে কাজ করে যাচ্ছি।
রওশন এরশাদ বলেন, তিনি অনেক জনদরদী নেতা ছিলেন। উনি দেশ ও জনগণের জন্য অনেক উন্নয়নের কাজ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে কাজ অসমাপ্ত রেখে গিয়েছিলেন, তার অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি যা শেষ করে যেতে পারেননি এইচ এম এরশাদ তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় ছিলেন তা তার মৃত্যুর পরেও বোঝা গেছে। তার চার চারটি জানাজা করতে হয়েছে। এসময় রওশন এরশাদ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
আমির হোসেন আমু মাত্র ১৭ সেকেন্ডের বক্তব্যে বলেন, আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। দোষে-গুণে মানুষ সেগুলো আজকে আলোচনা না করাই ভালো। একথা বলে তার বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মেজর থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল করে সেনা প্রধান করেন। তবে যখন উনি প্রেসিডেন্ট হন, তার সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য তৈরি হয়। তবে উনি বিনয়ী ছিলেন। তিনি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতন্ত্র রক্ষা ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কাজ করেছেন। তিনি একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি পল্লী উন্নয়নসহ দেশের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন, উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।
শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর তার কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের এমপি শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।
অধিবেশন চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত
একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে নিয়ম রক্ষার এই অধিবেশন শুরু হয়। মাত্র ৪ কার্যদিবসের স্বল্পকালীন এ অধিবেশন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।
সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে বিকেল ৪টায় সংসদ ভবনে স্পিকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধিবেশনের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়। প্রতিদিন বিকেল ৫টায় অধিবেশন শুরু হবে। তবে স্পিকার চাইলে অধিবেশনের সময় বাড়াতে বা কমাতে পারেন।
স্পিকারের সভাপতিত্বে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অংশ নেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বৈঠকে অংশ নেন বিরোধী দলীয় উপ নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া প্রমুখ।
রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশন পরিচালনার জন্য ৫ জন প্যানেল সভাপতি মনোনীত করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এই প্যানেল সভাপতিগণ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে অগ্রবর্তিতা অনুসারে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। চতুর্থ অধিবেশনে প্যানেল সভাপতিরা হলেন- আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহিদ, এনামুল হক, মৃণাল কান্তি দাস, কাজী ফিরোজ রশীদ ও জয়া সেনগুপ্ত।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে সংসদে উত্থাপণের জন্য ৩টি সরকারি বিলের নোটিস পাওয়া গেছে। এছাড়া আগের অধিবেশনে অনিষ্পন্ন ২টি সরকারি বিল পাসের জন্য কমিটিতে পরীক্ষাধীন রয়েছে। এদিকে বেসরকারি সদস্যদের নিকট হতে ১টি বিলের নোটিস পাওয়া যায়। এছাড়া পূর্বে প্রাপ্ত ও অনিষ্পন্ন ১টি বেসরকারি বিল রয়েছে।
এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৭০টি ও মন্ত্রীদের জন্য ১ হাজার ৫৫৩ টিসহ প্রাপ্ত মোট প্রশ্নের সংখ্যা ১ হাজার ৬২৩টি। সিদ্ধান্ত প্রস্তাব (বিধি ১৩১) ১০৯টি, মূলতবী প্রস্তাবের সংখ্যা (বিধি ৬২) ১৫টি ও মনোযোগ আকর্ষণের নোটিস (বিধি ৭১) ৬০টি পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ১১ জুলাই একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় তথা বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট অধিবেশন শেষ হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।