Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

মহানবী (স.)-এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী (রা.)কে শীর্ষস্থানীয় সাহাবাগণ পরিবার-পরিজনসহ কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে নিষেধ করেন। ইবনে উমার (রা.) বলেন, আমি তোমাকে একটি হাদীস শুনাব। জিব্রাঈল (আ.) এসে মহানবী (স.)কে দুনিয়া ও আখেরাত-এ দু’টি থেকে যে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি দুনিয়া বাদ দিয়ে আখিরাতকে বেছে নিয়েছেন। আর তুমি তাঁর অংশ। আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ কখনোই দুনিয়ার সম্পদ লাভে সক্ষম হবে না। তোমাদের ভালোর জন্যই আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। হুসাইন (রা.) তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং যাত্রাবিরতি করতে অস্বীকার করলেন। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) হুসাইন (রা.)-এর সাথে আলিঙ্গন করে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিলেন। সুফিয়ান সাওরী ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হুসাইন (রা.) কে বলেন, মানুষের দোষারোপের ভয় না থাকলে আমি তোমার ঘাড় ধরে তোমাকে বিরত রাখতাম।

বের হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) হুসাইন (রা.)-কে বলেন, হুসাইন! কোথায় যাও? এমন লোকদের কাছে, যারা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে এবং তোমার ভাইকে আঘাত করেছে?
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেছেন, হুসাইন (রা.) তাঁর জন্য নির্ধারিত ফায়সালার দিকে দ্রæত অগ্রসর হচ্ছেন। আল্লাহর শপথ! তাঁর বের হওয়ার সময় আমি উপস্থিত থাকলে তাঁকে যেতে দিতাম না। তবে বলপ্রয়োগে আমাকে পরাজিত করলে সেকথা ভিন্ন। (ইয়াহইয়া ইবনে মঈন সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন)

যাত্রাপথে হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর কাছে মুসলিম ইবনে আকীলের সেই চিঠি এসে পৌঁছে। চিঠির বিষয় অবগত হয়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য সিরিয়ার পথে অগ্রসর হতে লাগলেন। পথিমধ্যে ইয়াজিদের সৈন্যরা আমর বিন সাদ, সীমার বিন যুল-জাওশান এবং হুসাইন বিন তামিমের নেতৃত্বে কারবালার প্রান্তরে হুসাইনের গতিরোধ করল। হুসাইন (রা.) সেখানে অবতরণ করে আল্লাহর দোহাই দিয়ে এবং ইসলামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি মেনে নেয়ার আহ্বান জানালেন।

হুসাইন ইবনে আলী (রা.) তথা মহানবী (স.)-এর দৌহিত্রকে ইয়াজিদের দরবারে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে গিয়ে ইয়াজিদের হাতে বায়আত গ্রহণ করবেন। কেননা তিনি জানতেন যে, ইয়াজিদ তাঁকে হত্যা করতে চান না।

দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, তাঁকে মদীনায় ফেরত যেতে দেয়া হোক এবং তৃতীয়, তাঁকে কোন ইসলামী অঞ্চলের সীমান্তের দিকে চলে যেতে দেয়া হোক। তিনি সেখানে আমৃত্যু বসবাস করবেন এবং রাজ্যের সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)

ইয়াজিদের সৈন্যরা কোন প্রস্তাবই মানতে রাজি হল না। তারা বলল, উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ যে ফায়সালা দিবেন তা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব আমরা মানতে রাজি নই। একথা শুনে উবায়দুল্লাহর এক সেনাপতি (হুর বিন ইয়াজিদ) বললেন, এরা তোমাদের কাছে যে প্রস্তাব পেশ করেছে তা কি তোমরা মানবে না? আল্লাহর কসম! তুর্কি এবং দায়লামের লোকেরাও যদি তোমাদের কাছে এ প্রার্থনা করত তাহলে তা ফেরত দেয়া তোমাদের জন্য বৈধ হত না। এরপরও তারা উবায়দুল্লাহর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই দৃঢ়তা দেখালো। সেই সেনাপতি ঘোড়া নিয়ে সেখান থেকে চলে এলেন এবং হুসাইন (রা.) ও তাঁর সাথীদের কাছে গেলেন। হুসাইন (রা.)-এর সাথীরা ভাবলেন তিনি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসছেন। তিনি কাছে গিয়ে সালাম দিলেন। এরপর সেখান থেকে ফিরে গিয়ে উবায়দুল্লাহর সৈনিকদের সাথে যুদ্ধ করে দু’জনকে হত্যার পর নিজেও নিহত হলেন। (ইবনে জারীর হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)। (অসমাপ্ত)

মুসলিম শরীফে আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমাযানের পর সর্বোত্তম রোজা (সওম) হচ্ছে মুহাররম তথা আশূরার রোজা। আর ফরজ সলাতের পর সর্বোত্তম সলাত হচ্ছে তাহাজ্জুদের।

আশূরার রোজা ইহুদীরা রাখত একটি, রসূলুল্লাহ (স.) তাদের ব্যতিক্রম করে দুটি রোজা পালনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ আশূরার দিনের সাথে আগে বা পরে একটি রোজা পালন করতে বলেন। (বায়হাকী) সে মতে কেউ কেউ আজ ৯ম মুহাররম প্রথম রোজা পালন করছেন। আর দ্বিতীয় রোজা পালন করবেন কাল মঙ্গলবার। তবে যারা আজ রোজা রাখতে পারেননি, তারা আগামীকাল মঙ্গলবার ও বুধবার রোজা পালনের সুযোগ পাবেন। উভয় দিনই ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য সাহারীর শেষ সময় হবে ভোর ৪টা ২৪ মিনিট। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে আশূরার সওম পালনের তওফিক দান করুন। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ