পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা ক্রমশ সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। উঠতি মাস্তান ও ছিচকে মাস্তানদের অপ তৎপরতায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা-উপজেলা সদরসহ পল্লী এলাকার মানুষ তটস্থ।
এসব কিশোর গ্যাংয়ের বেশিরভাগের পেছনেই তেমন কোন রাজনৈতিক আশির্বাদ ও পরিচয় না থাকলেও ক্রমশ তারা ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। গোটা সমাজ এসব বখাটেদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দীর্ঘ দিনের উদাসীনতার কারণেই এসব কিশোর গ্যাং নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে চলেছে। তবে সমাজের বিজ্ঞজনদের মতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলে শুরুতেই এসব কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা দ্রুত নির্মূল করার সময় এখনো আছে। বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে এখন অনেক রাত অবধি স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রেস্ট্রুরেন্টে, রাস্তায় ও পার্কে আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছে।
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে কলেজছাত্র রিফাত হত্যা এবং পরবর্তিতে মূল আসামি নিহত হবার পরে এসব কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় কিছুটা ভাটা পড়লেও সম্প্রতি তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। খোদ বরিশাল মহানগরীতে একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এসব কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, স্বাধীনতা পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক এবং নবগ্রাম রোড-চৌমহনীর লেকের পাড়ে এখন আর সমাজের শান্তি প্রিয় মানুষের একটু নিরিবিলি সময় কাটানোর কোন সুযোগ নেই। এসব স্থানে মেয়েদের চলাফেরা অনেকটাই নিরাপত্তাহীন। কিশোর গ্যাংয়ের অধিকাংশই বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী হলেও বেশিরভাগই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে।
২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় একদল কিশোর বরিশাল নগরীর জেলা স্কুল মোড় থেকে ব্রাউন কম্পাউন্ড সড়কে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে বেপরোয়াভাবে যানবাহন ভাঙচুর করে। একদল কিশোর ওইদিন প্রতিপক্ষের একাধিক ব্যক্তিকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এ দলটি ২৪ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে নগরীর হেমায়েত উদ্দিন রোডের একটি সেল ফোনের দোকানে হামলা চালায়। এ দুটি ঘটনার পেছনেই ছিল তানজিম আহম্মেদ ও সৌরভ বালা গ্রুপ। তানজিম ও সৌরভ বালা গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, ব্রাউন কম্পাউন্ড ও সদর রোডের একাংশে চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায় বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। যানবাহন ভাঙচুর ও সেল ফোনের দোকানে হামলার ঘটনায় সৌরভ বালাসহ একাধিক বখাটে গ্রেফতার হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছে।
বরিশাল নগরীতে ৭/৮টি কিশোর বখাটে গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, বিএম কলেজ থেকে সংলগ্ন নতুন বাজার, বৈদ্যপাড়া এলাকায় সক্রিয় আজমল হোসেন রুমনের নেতৃত্বে একটি কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। রাহুল গ্রুপ নগরীর বটতলা এলাকায় সক্রিয়। এছাড়া নগরের আমির কুটির, চৌমাথা, রূপাতলী, সাগরদী, পলাশপুর, কাউনিয়া এবং আমানতগঞ্জ এলাকায় আরও ৪/৫টি বখাটে কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।
বরিশাল বিএম কলেজ ক্যম্পাস ও সন্নিহিত এলাকায় একাধিক কিশোর গ্রুপ সক্রিয়। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন হোস্টেল ও আশপাশের বৈদ্যপাড়া, মধুমিয়ার পোলসহ সংলগ্ন এলাকার একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের নানামুখী তৎপরতার অভিযোগ রয়েছে। প্রায়ই হোস্টেলের নিরীহ ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা আর সেলফোন ছিনতাইসহ তাদের ওপর হামলারও অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ রয়েছে বটতলা বাজার থেকে শুরু করে সংলগ্ন শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাসেও। নবগ্রাম রোড চৌমহনী সংলগ্ন লেকটির পাড়, বঙ্গবন্ধু উদানের হেলিপ্যাডসহ নগরীর প্রায় সবগুলো পার্কেই সন্ধ্যার পর থেকে অনেক রাত অবধি ইয়াবার হাট বসে।
তবে ঝালকাঠির এসপি অতি সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীকে সন্ধ্যার পরে আটক করে থানায় নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় দিয়েছেন। এ বিষয়টি পরিস্থিতি উন্নয়নে ইতিবাচক ভ‚মিকা রেখেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অসীম কুমার নন্দী জানান, পরিবার থেকে উপযুক্ত শিক্ষা না পাওয়ায় সমাজে মাদকের প্রভাব বাড়ছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে কিশোর সন্ত্রাসী ও বখাটে গ্রুপ। এসব গ্রুপের সদস্যরা অনেকেই প্রাপ্ত বয়স্ক নয়। সহজলভ্য হওয়ায় তারা জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসা এবং সেবনের সঙ্গে। যে কারণে সামান্য ঘটনায়ও এরা বড় ধরনের অপরাধ সংঘঠিত করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সমাজ থেকে মাদকের প্রভাব নির্মূল করার তাগিদ দেন তিনি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন খান এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কিশোর অপরাধ ও বখাটেপনা কমাতে মহানগর পুলিশের উদ্যেগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে। অভিভাবক ও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কিশোররা যাতে কোন অপরাধ কর্মকান্ডে যুক্ত না হয় সে লক্ষে প্রচষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সমাজের সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালনেরও তাগিদ দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।