পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কিছুদিন আগেও ছোটখাটো মোটর পার্টসের জন্য ভারতের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন আর সেই নির্ভরতা নেই। দেশেই তৈরি হচ্ছে অধিকাংশ মোটর পার্টস। এমনকি বাস ও ট্রাকের বডিও। নীরব নয়, রীতিমতো সরব বিপ্লব ঘটেছে মোটর শিল্পে। শিল্পটির উন্নতি হয়েছে অভাবনীয়। কয়েক বছরের মধ্যে যশোরে গড়ে উঠেছে ইঞ্জিন পার্টস, গাড়ির পার্টস, লাইটিং, ডেন্টিং, পেন্টিং ও অটোমোবাইলসহ ৫ শতাধিক চোখ ধাঁধানো কারখানা। শ্রমনিবিড় শিল্পটির সঙ্গে জড়িতরা নিঃসন্দেহে অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মোটর শিল্প এতটা এগিয়ে গেছে, যা অনেকের কাছেই কল্পনাতীত। একসময় বৈধ ও অবৈধ পথে আসা ভারতীয় পণ্যের আধিক্যে সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র কলকারখানাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। বর্তমানে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অন্ধকার ছাপিয়ে ক্রমাগতভাবে উদ্ভাসিত হচ্ছে আলোয়।
সরেজমিনে যশোর শহরের পূর্বাঞ্চল আর এন রোড ও বকচর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোটর শিল্প শ্রমিকদের প্রাণে ফুর্তির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তারা লোহা, রড়, পাইপ ও স্টিল সিট হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সোজা ও বাঁকা করছে। ওয়েল্ডিং ও ঝকঝকে রঙে তৈরি করছে বাস ও ট্রাকের শক্ত বডি। লোকাল বাস ও ট্রাকের চেসিসও তৈরি হচ্ছে। ইঞ্জিনের খোলনলচে পাল্টে লক্কড়-ঝক্কড় বাস ও ট্রাক নিখুঁতভাবে তৈরি করে একেবারে নতুন করা হচ্ছে। আরএন রোডের পুরো সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার দুইপাশে মোটর শিল্পটিকে ঘিরে অসংখ্য মোটর পার্টস, লোহা, অটোমোবাইল, টায়ার-টিউব ও লেদ মেশিনের ওয়ার্কসপ গড়ে উঠেছে। যা বিস্তৃত হয়েছে খুলনা রোডের বকচর ও মুড়লী পর্যন্ত। এর বাইরে ঘোপ, পুরাতন কসবা, উপশহর, রেল রোড ও ঢাকা রোডের বিভিন্ন স্থানে ডেন্টিং, লাইটিংসহ শিল্পটির আনুষঙ্গিক কাজকর্ম হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। মোটর শিল্প কারখানা থেকে তৈরি ইঞ্জিন পার্টস এবং বাস ও ট্রাকের বডি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আমদানিকৃত বাস ও ট্রাকের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। ইঞ্জিনের বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে অবিকল জাপান ও ভারতের মতোই। মোটর ইঞ্জিনিয়ারিং ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ রূপ লাভ করছে।
যশোর ওয়ার্কসপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন কবীরের সাথে কথা হয় বকচরে তার বাস ও ট্রাকের বডি তৈরির কারখানায়। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে ছিলেন ওয়ার্কসপের একজন শ্রমিক। এখন তিনি ওয়ার্কসপের মালিক। তার কারখানা থেকে হিনো, টাটা, ভলবো ও চেয়ার কোচ এবং ট্রাকের বডি তৈরি হয়। যা ঢাকা, ফরিদপুর ও বরিশালসহ অনেক জেলাতেই পাঠানো হয়। ঢাকায়ও বাস ও ট্রাকের বডি তৈরির ওয়ার্কসপ আছে। কিন্তু মূল্য বেশি হওয়ায় দেশের বেশির ভাগ বাস ও ট্রাকের বডি যশোর থেকে তৈরি হয়। বাস ও ট্রাকের বডি তৈরির কাজটি প্রথম যারা শুরু করেছিলেন, তারা হলেন যশোরের মান্নান মিস্ত্রি ও জাহাঙ্গীর মিস্ত্রি। তাদের অনুসরণ করেই আজ মোটর শিল্পের প্রসার ঘটেছে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কসপ মালিক সমিতির আরো কয়েকজন বললেন, মোটর শিল্পটি এখনো শিল্প হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়নি। আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে একসময় চোরাইপথে ভারত থেকে মোটর গাড়ির কাটা চেসিস আসা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের তথ্য মতে, যশোরে বাস ও ট্রাকের বডি তৈরি এবং ইঞ্জিন পার্টস ও অটোমোবাইল, ডেন্টিং-পেন্টিং ও লাইটিংসহ সংশ্লিষ্ট ৫ শতাধিক ওয়ার্কসপ গড়ে উঠেছে। এর বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যশোরে এগিয়ে যাচ্ছে খোয়া ভাঙা মেশিন, পাথর ভাঙা মেশিন, কংক্রিট মিকচার মেশিন, পানির পাম্প ও স্যালো ইঞ্জিনের মেশিন বিটুমিন মিকচার মেশিন তৈরিতে। সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ, যশোরে উৎপাদিত ইট ও পাথরভাঙা মেশিন দেশের চাহিদা মিটিয়ে উল্টো এখন ভারতে রফতানি হচ্ছে। যশোর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মালিক সমিতি সূত্র জানায়, প্রতি মাসে যশোরে উৎপাদিত অন্তত ১০টি পাথরভাঙা মেশিন ভারতে রফতানি হচ্ছে। সব মিলিয়ে যশোর মোটর ইঞ্জিনিয়ারিং ও অটোমোবাইল শিল্পে ২০ সহস্রাধিক মিস্ত্রি ও শ্রমিক বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। দিনে দিনে কর্মসংস্থান বাড়ছে। যশোরের মোটর শিল্পের সাথে জড়িতরা গর্ব করে থাকেন যে, দেশের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা একটা অংশের বাস ও ট্রাকের বডি যশোরের তৈরি। তাতে লেখা থাকছে ‘মেড ইন যশোর’।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যে কোনো গাড়ির ইঞ্জিনের বেশির ভাগ পার্টস তৈরি হচ্ছে যশোরের মোটর ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানাগুলোতে। এর বাইরে মোটর ইঞ্জিনিয়ারিং বলতে যা বুঝায় তার কোনোটার ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই যশোর। পুরাতন টায়ারের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় রি-রোলিং টায়ার। যার কারখানাও বেশ কয়েকটি গড়ে উঠেছে যশোরে। সূত্র মতে, মোটর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যে বিপ্লব ঘটেছে তা স্থায়ী করা সম্ভব হলে ইঞ্জিন, চেসিস, যন্ত্রাংশ কেন; ভারত থেকে বাস ও ট্রাকের কমপ্লিট বডি আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। এ দিকে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিলে চেসিজ, ইঞ্জিন ও বডি এবং বাস ও ট্রাকসহ পূর্ণাঙ্গ মোটর গাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হবে যশোর। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বললেন, মোটর শিল্পের বিপ্লব স্থায়ী করতে বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যশোরের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপগুলোকে একীভ‚ত করে সমবায়ভিত্তিক ‘ব্রান্ড নেম’ দিয়ে যশোরে তৈরিকৃত বাস ও ট্রাক মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলে বললেন, যশোরের সামাজিক নেতা যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আমিরুল আলম খান। তার কথা, পৃথিবীর কোনো দেশে এককভাবে কেউ পূর্ণাঙ্গ বাস ও ট্রাক তৈরি করে না। শিল্প বলতে আগে যা বুঝাত তা হলো বৃহদাকার শিল্প। এখন আর সেই ধারা নেই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানার সমন্বয়েই শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। টাটা ও হিনোসহ বিভিন্ন মোটর কোম্পানি সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়ে বাস ও ট্রাকের অংশবিশেষ খন্ড খন্ডভাবে তৈরি করে তা একক নামে মার্কেটিং করে। যশোরেও সেই আদলে মোটর ইঞ্জিনিয়ারিং গড়ে তোলা হলে শিল্পটির ক্ষেত্রে ইতিহাস সৃষ্টি হবে। এতে সরকারেরও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে। দেশীয় টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।