Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেলালের বাসায় থামছে না শোকের মাতম

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

১০ মাসের শিশু কন্যা ওহিকে বুকে নিয়ে বিলাপ করছেন রহিমা বেগম। পাশে ছোট ছেলে আতিক হাসান বিশাল (১২), বড় ছেলে মো. সজীব (১৬) অঝোরে কাঁদছেন। তাদের আহাজারিতে স্বজনদের চোখেও পানি। প্রতিবেশীরা অসহায় এ পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না দেয়ার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছেন। তারাও চোখ মুছছেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর আমবাগান পুকুর পাড়ে বেলাল হোসেনের বাসায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। বেলাল হোসনের বড় ছেলে সজীবের আহাজারি আমার বাবার তো ফাঁসি হয়নি। তাকে কেন মেরে ফেলা হলো। এখন আমরা কোথায় যাব। কার কাছে বিচার চাইবো। গত বুধবার নগরীর খুলশী থানার আত্মসমর্পণ করার কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান বেলাল হোসেন। বৃহস্পতিবার পরিবারকে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। ওইদিনই নগরীর চৈতন্যগলি কবরস্থানে দাফন হয়। বেলালই ছিলেন পরিবারের কর্তা এবং একমাত্র উপার্জনক্ষম। বেলালের বড় ছেলে সজীব টাইগার পাস বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্র।

বাবার মৃত্যুর পর সংসারের ভার এখন এ কিশোরের কাঁধে। এ ভার সে সইবে কিভাবে তা নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তার অভিযোগ, নীল নকশার মাধ্যমে তার বাবাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সজীব জানান, তার বাবা ঠিকাদারির কাজ করতেন। তবে পুলিশের ভয়ে বেশিরভাগ সময় পালিয়ে থাকায় এ ব্যবসাতেও ভাল করতে পারেননি। যা আয় হতো তার বিরাট অংশ চলে যেতো মামলা পরিচালনায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে পলাতক ছিলেন বেলাল। এতে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে তারা। বাবার মৃত্যুর পর সংসারে বাজার করার পয়সাও নেই বলে জানান সজীব।

তার অভিযোগ, সব কয়টি মামলায় তার বাবা জামিনে ছিলেন। পুলিশের পরামর্শে আত্মসমর্পণ করার জন্য দুটি মামলায় হাজিরা না দিয়ে ওয়ারেন্ট করিয়েছিলেন বেলাল। অথচ পুলিশ কথা রাখেনি। সজীব জানান, সন্তানরা বড় হচ্ছে এজন্য তার বাবা সুপথে চলে এসেছেন। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন, বাকি জীবন যাতে সৎপথে চলতে পারেন সেজন্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে মামলা মোকাবেলা করার পরিকল্পনা ছিল তারা। কিন্তু তার সে ইচ্ছে পূরণ হলো না।

ছয় হাজার টাকা ভাড়া বাসায় থাকে সজীবের পরিবার। আগামী মাস থেকে ভাড়া কিভাবে দেয়া হবে দুই ভাইয়ের স্কুলের ফি, সংসারের খরচ কিভাবে চলবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তারা। পুরো পরিবারটি এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। সজীব জানান, তার বাবা আজীবন আওয়ামী লীগ করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। অথচ তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ তাদের পাশে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সজীবের আকুতি, ‘আমার বাবাকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার করুন, আর কেউ যাতে আমাদের মতো পিতৃহারা না হয়।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ